চিন্নাস্বামীর পিচে ফের হড়কাল ভারতের ব্যাটিং, জয়ের মঞ্চে সিরিজ অমীমাংসিত সেই কুখ্যাত ব্যাটিং ব্যর্থতা। একের পর এক ব্যাটসম্যানের চোক করে যাওয়া। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে হারের তিক্ত স্মৃতি ফের ফিরে এল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তৃতীয় টি টোয়েন্টিতে। সিরিজ জয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রোটিয়াজদের কাছে শেষ ম্যাচ হেরে ১-১ ফলাফলে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে কোহলিদের।
আরও পড়ুন টোয়েন্টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়ার পর মুখ খুললেন কুলদীপ
প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ভারত ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৪-এর বেশি তুলতে পারেনি স্কোরবোর্ডে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৯ বল বাকি থাকতে হাতে ৯ উইকেট নিয়ে হেসেখেলে জয় ছিনিয়ে নেয় প্রোটিয়াজরা। প্রথম ম্যাচে ক্যাপ্টেন কোহলির ব্যাটে হার হজম করতে হয়েছিল ভারতকে। এদিন তারই যেন পাল্টা দিলেন ক্যাপ্টেন ডি কক। ভারতের ১৩৫ রান তাড়া করতে নেমে ৫২ বলে ৭৯ রানের দাপুটে ইনিংসে উপহার দিয়ে গেলেন ডি কক। হার্দিক, ক্রুনালদের বোলিং নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করলেন তিনি।
হাফডজন বাউন্ডারি এবং ৫টা ওভার বাউন্ডারিতে সাজানো ডিককের ভারত-বধের ইনিংসে। ম্যাচের সেরা স্বভাবতই তিনি। তার আগে রেজা হেনড্রিক্স ২৬ বলে ২৮ রান করে আউট হয়ে গেলেও ডিককের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন তেম্বা বাভুমা (২৩ বলে ২৭)। যাইহোক, বিশ্বকাপের পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে তিন ফর্ম্যাটেই দাপট দেখিয়ে সিরিজ জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া। ঘরের মাঠে অনভিজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজে ফেভারিট হিসেবে শুরু করেছিল ভারত। দ্বিতীয় ওয়ান ডে-তে কোহলি-চাহারদের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স টিম ম্যানেজমেন্টের বুকে স্বস্তি জুগিয়েছিল। তবে এত তাড়াতাড়ি যে কোহলিদের ব্যাটিংয়ের কঙ্কালসার দশা আরও একবার দেখতে হবে, তা আন্দাজ করেননি অনেক ক্রিকেটপ্রেমীই।
আরও পড়ুন IND vs SA: ক্যাপ্টেন কোহলির ব্যাটে ভারতের সহজ জয়, অলরাউন্ড খেলায় বাজিমাত
চিন্নাস্বামীর সহজ পিচ। বল পড়ে ব্যাটে আসছে। স্ট্রোক প্লেয়ারদের পক্ষে আদর্শ। এমন কন্ডিশনেই কিনা বিখ্যাত ব্যাটিং লাইন আপকে শুইয়ে দিলেন রাবাদা, ফর্টুইন, হেনড্রিক্সরা। ভারত আগের ম্যাচের একাদশই রেখে দিলেও দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোয়াডে একটাই পরিবর্তন ছিল। আনরিখ নর্ৎজে-র জায়গায় ঢোকানো হয়েছিল বিউরন হেনড্রিক্সকে। তিনিই এদিন ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেলেন। নিজের ৪ ওভারের কোটায় মাত্র ১৪ রান খরচ করে তুলে নেন রোহিত, পাণ্ডিয়ার উইকেট। হেনড্রিক্স-এর পাশাপাশি প্রোটিয়াজদের বল হাতে সফল রাবাদা (৩৯-৩) এবং ফর্টুইনও (১৯-২)। ভারতের ইনিংসে দুই অঙ্কের রান পেয়েছেন মাত্র চারজন- শিখর ধাওয়ান (৩৬), ঋষভ পন্থ (১৯), হার্দিক পাণ্ডিয়া (১৪) এবং রবীন্দ্র জাদেজা (১৯)। এদের মধ্যে ধাওয়ান বাদে তিন জনের স্কোর কুড়ির কোটাও পেরোয়নি। এতেই প্রকট ভারতীয় শোচনীয় ব্যাটিং ব্যর্থতা।
ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতার শুরু হয়েছিল দলগত ২২ রানে। বিউরন হেনড্রিক্সের বলে রেজা হেনড্রিক্সের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নিয়েছিলেন হিটম্যান রোহিত (৯)। দ্বিতীয় উইকেট ধাওয়ানের সঙ্গে অধিনায়ক কোহলির পার্টনারশিপে ৪১রান ওঠে স্কোরবোর্ডে। তবে ধাওয়ান আউট হতেই শুরু হয়ে যায় আয়ারাম-গয়ারাম পর্ব। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে থাকে ভারত। পরপর প্যাভিলিয়নে ফেরেন বিরাট কোহলি (৯), ঋষভ পন্থ (১৯), শ্রেয়স আইয়ার (৫), হার্দিক পাণ্ডিয়া (১৪), ক্রুনাল পান্ডিয়া (৪), রবীন্দ্র জাদেজারা (১৯)। ধোনির অনুপস্থিতিতে ঋষভকেই দেশের একনম্বর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে ধরা হচ্ছে। সেই ঋষভই একের পর ম্যাচে ব্যর্থ হয়ে চলেছেন। তাঁর শট নির্বাচন নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচক প্রধান স্বয়ং এমএসকে প্রসাদ পর্যন্ত ওয়ার্নিং দিয়ে রেখেছেন দিল্লির তারকাকে।
আগামী বছর বিশ্বকাপে ঋষভের বিকল্প হিসেবে তৈরি রাখা হচ্ছে সঞ্জু স্যামসন, ইশান কিষানদের। এত সতর্কবার্তা সত্ত্বেও বেঙ্গালুরুতে ফের একবার ব্যর্থ পন্থ। চারনম্বরে নেমে এদিন শুরুতে ভরসা জোগাচ্ছিলেন তিনি। এদিনও ফর্টুইনের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে আউট তিনি। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল তাড়া করে লং অফে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন। ঘরের মাঠে টি২০তে হোঁচট খাওয়ার পরে টেস্ট, ওয়ান ডে-তেও যে স্বস্তিতে থাকবেন না কোহলিরা, তা বলাই বাহুল্য।
ভারতের একাদশ: বিরাট কোহলি (ক্যাপ্টেন), রোহিত শর্মা (ভাইস-ক্যাপ্টেন), শিখর ধাওয়ান, শ্রেয়স আয়ার, ঋষভ পন্থ (উইকেটকিপার), হার্দিক পাণ্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, ক্রুনাল পান্ডিয়া, ওয়াশিংটন সুন্দর, দীপক চাহার, নভদীপ সাইনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশ: কুইন্টন ডি কক (ক্যাপ্টেন), ফান ডার ডুসেন (ভাইস-ক্যাপ্টেন), তেম্বা বাভুমা, বিয়র্ন ফরটুইন, বিউরন হেনড্রিক্স, রেজা হেনরিক্স, ডেভিড মিলার, আন্দিলে ফেহলুকোয়াও, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, কাগিসো রাবাদা, তাবরেজ শামসি।