Indian Women's Football Team: ২০২১ সালে সঙ্গীতার এ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট (ACL) ছিঁড়ে যায়। ওই বছরের অক্টোবরে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়, তারপর শুরু হয় দীর্ঘ রিহ্যাবের লড়াই।
Indian Women's Football Team: ২০২১ সালে সঙ্গীতার এ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট (ACL) ছিঁড়ে যায়। ওই বছরের অক্টোবরে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়, তারপর শুরু হয় দীর্ঘ রিহ্যাবের লড়াই।
India Women Football Team: সঙ্গীতার জোড়া গোলে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে এএফসি এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জন করেছে ভারত
Indian Women Footballer Sangita Basfore: এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে থাইল্যান্ড ম্যাচে জয়ের মূল কেন্দ্রে ছিলেন বঙ্গকন্যা সঙ্গীতা বাসফোর (Sangita Basfore)। প্রথমার্ধের ২৯তম মিনিটে এক বিশ্বমানের গোল করে দলকে এগিয়ে দেন, তারপর দ্বিতীয় গোল করে ভারতকে (Indian Women Football Team) জিততে সাহায্য করেন সঙ্গীতা। শেষ বাঁশি বাজতেই কোচ ক্রিসপিন ছেত্রী মাটিতে বসে পড়েন, যা তিনি খুব কমই করেন বলে জানান। সঙ্গীতাও কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন, আনন্দে অশ্রু থামানো যাচ্ছিল না। “সব পরিশ্রম, সব হতাশা, আগের সেই হেরে যাওয়া ম্যাচগুলোর সব স্মৃতি একসঙ্গে ভেসে উঠছিল। অবশেষে আমরা সেটা অর্জন করতে পারলাম, এবার ঘরে ফিরে যেতে পারব হাসিমুখে,” বলছিলেন সঙ্গীতা The Indian Express-কে।
Advertisment
“আমি একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার,” দৃঢ়ভাবে বলেন ২৮ বছর বয়সী সঙ্গীতা। এই পজিশনটিই তাঁর সবচেয়ে প্রিয়, যদিও ছোটবেলায় গোল করার রোমাঞ্চই তাঁকে ফুটবলের প্রেমে ফেলেছিল। তাঁর মামা, প্রাক্তন মোহনবাগান ফুটবলার বিজয় বাসফোরের অ্যাকাডেমিতে খেলতে গিয়ে এই শুরু।
এটা একেবারে সার্বজনীন গল্প, বেশিরভাগ শিশুই গোল করার আনন্দে ফুটবল খেলে শুরু করে। “তখন শট নেওয়া খুব ভাল লাগত। শুটিং প্র্যাকটিসই আমার প্রিয় ছিল, ছেলেদের সঙ্গে খালি পায়ে খেলতাম। ওদের বল লুকিয়ে রাখতাম, নিজে খেলতাম। তখন ২০০৭ সালের দিকের কথা,” মনে পড়ে সঙ্গীতার।
বিজয়ের অভিজ্ঞ চোখে তাঁর মধ্যে প্রতিভার ঝিলিক ধরা পড়ে। তবে মায়ের অনুমতি পাওয়া সহজ ছিল না। অনেক বোঝানোর পর মা তাঁকে ২৫০ টাকা দেন জুতো-স্টাড কেনার জন্য। সঙ্গীতা গর্বের সঙ্গে বলেন, “ওটাই ছিল শেষবার, যখন ফুটবল খেলার জন্য বাড়ি থেকে টাকা নিয়েছি। ফুটবলের জন্যই আজ পরিবারে আর্থিক স্থিতি দিতে পেরেছি,” বলেন তিনি।
— Indian Football Team (@IndianFootball) July 6, 2025
চোট আর শোকের মাঝেও অটল থেকে লড়াই
এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁকে খারাপ সময়েও খেলার সঙ্গে বেঁধে রেখেছিল। ২০২১ সালে সঙ্গীতার এ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট (ACL) ছিঁড়ে যায়। যেটা মিডফিল্ডারদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ চোট। ওই বছরের অক্টোবরে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়, তারপর শুরু হয় দীর্ঘ রিহ্যাবের লড়াই। পরের নয় মাস ফুটবলের ধারে-কাছেও যেতে পারেননি তিনি। সবচেয়ে খারাপ দিক ছিল, রিহ্যাবের খরচ তাঁকেই বহন করতে হয়, সীমান্তরক্ষী বাহিনী SSB-তে চাকরির বেতনের টাকা দিয়ে।
Sangita Basfore: সঙ্গীতার দুই গোলেই ভারত ছুঁয়েছে স্বপ্নের দুনিয়া
এর মধ্যেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে অস্ত্রোপচারের পর বাড়ি ফেরার কিছুদিনের মধ্যেই। “অপারেশনের পর বাড়ি ফেরার কয়েকদিনের মধ্যেই বাবাকে হারাই,” বলেন সঙ্গীতা। “তখন বুঝতেই পারছিলাম না কীভাবে নিজেকে সামলাব। মা একা থাকতেন। আজও মায়ের জন্য চিন্তা হয়, কারণ বাবা-মায়েরা অনেক কিছু মনেও রাখে, সন্তানের কাছে বলে না,” বলেন তিনি।
তবু খেলা থেকে শক্তি খুঁজে ফিরেছেন তিনি। “অনেক কিছু হচ্ছিল তখন, কিন্তু মন শক্ত রাখলাম, ঠিক করলাম আবার খেলায় ফিরতেই হবে। কারণ এই খেলার জন্যই পরিবারকে আর্থিক স্থিতি দিতে পেরেছি, মা, দিদি আর দিদির ছেলেমেয়েদের ভাল জীবন দিতে পেরেছি। তাই কখনও হাল ছাড়ার কথা ভাবিনি,” বলেন সঙ্গীতা।
টার্নিং পয়েন্ট
২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেক হলেও ফরোয়ার্ড লাইনে কখনও স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন না সঙ্গীতা। তখনকার জাতীয় কোচ মাইমল রকি তাঁকে পজিশন বদলাতে বলেন। তখনই সঙ্গীতা ভিডিও খুঁজে খুঁজে দেখতে শুরু করেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার টনি ক্রুস আর কাসেমিরোর খেলা।
“কাসেমিরো আর টনি ক্রুস কীভাবে ওই পজিশনে খেলে, ওদের ভিডিও বারবার দেখতাম। এখনও শিখি,” বলেন তিনি।
নতুন ভূমিকায় সহজেই মানিয়ে যান, কোচ ছেত্রীও খুশি হয়ে তাঁকে কোয়ালিফায়ারে দলের মাঝমাঠের মধ্যমণি বানান, রতনবালা নংমাইথেমের সঙ্গে জুটি গড়ে। “সঙ্গীতা এমন এক খেলোয়াড়, যিনি আশেপাশের অন্যদেরও ভাল খেলিয়ে দেন। ও সব লোড নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়। সঙ্গীতা আর রতনের মতো খেলোয়াড়রা এই দুই গোল ডিজার্ভ করে, কারণ ওরা সবকিছু বিসর্জন দেয়। সঙ্গীতা যেসব কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছে, সেই চোট থেকে ফিরে এসে আবার প্রথম একাদশে জায়গা পেয়েছে, ওঁর দুই গোল পুরোপুরি প্রাপ্য ছিল,” বলেন কোচ ছেত্রী। আর সেই দুই গোলেই ভারত আর সঙ্গীতা ছুঁয়েছে স্বপ্নের দুনিয়া।