গোটা দেশ জুড়ে আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া দিবস বা ন্যাশনাল স্পোর্টস ডে। ফি-বছর ২৯ অগাস্টেই এই দিনটি পালিত হয়। ভারতের কিংবদন্তি হকি খেলোয়াড় মেজর ধ্য়ান চাঁদের জন্মদিন উপলক্ষ্য়েই দিনটি স্মরণ করা হয়। হকির জাদুকর দেশকে হকিতে তিনবার সোনা এনে দিয়েছেন অলিম্পিকে। তাঁর কেরিয়ারের দু'দশকের বেশি সময় ধরে বিস্তৃত। ৪০০-র ওপর গোল করেছেন তিনি। এই প্রতিবেদনে রইল ধ্য়ান চাঁদের সম্বন্ধে কয়েক'টি আকর্ষণীয় তথ্য়।
১) ধ্য়ান চাঁদ পরিচিত ছিলেন ধ্য়ান সিং নামে। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ভারতীয় সেনায় যোগ দেন তিনি। সিপাই হয়েই হকি খেলা শুরু করেন। রাতের বেলা চাঁদের আলোয় হকি প্র্য়াকটিস করতেন বলে তাঁর বন্ধুরা তাঁকে 'চাঁদ' নাম দিয়েছিলেন। ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত প্র্য়াকটিস চালিয়ে যেতেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলার পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষকে মরণোত্তর সম্মান কেন্দ্রের
২) ১৯২২-১৯২৬-এর মধ্য়ে সেনা পরিচালিত হকির টুর্নামেন্ট খেলার পাশাপাশি রেজিমেন্টের খেলাও খেলতেন তিনি। অসাধারণ স্কিল আর গোল করার স্বভাবসিদ্ধ ক্ষমতার জন্য় ধ্য়ান চাঁদ ভারতীয় সেনার হয়ে নিউজিল্য়ান্ড সফরে যান। চমকে দেওযার মতো পারফরম্য়ান্স ছিল দলের। ১৮টি জয়, দু'টি ড্র ও একটি হার নিয়েই দেশে ফিরেছিল ভারত।
৩) ধ্য়ান চাঁদের নামেই ভারত সরকার ধ্য়ান চাঁদ পুরস্কার দেয়। ক্রীড়াক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পুরস্কার এটি। আজীবন অবদানের জন্য় দেওয়া হয়। ফি-বছর ২৯ অগাস্ট শুধু অ্যাথলিটরাই এই পুুরস্কার পান না। খেলার উন্নতি সাধনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদেরও জাতীয় ক্রীড়া দিবসে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
-->৪) ১৯২৮ সালে আমস্টারডাম অলিম্পিকে ধ্য়ান চাঁদকে সেন্টার ফরোয়ার্ড করে দল করা হয়েছিল। প্রাক অলিম্পিকের প্রতিটি ম্য়াচে স্থানীয় দলের বিরুদ্ধে ভারত বিরাট ব্য়বধানেই জয় পেয়েছিল। মূল ইভেন্টে ভারতের সেবারই প্রথম অলিম্পিক সোনা এসেছিল। পাঁচ ম্য়াচে ১৪ গোল করেছিলেন তিনি। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন ধ্য়ান চাঁদ।
আরও পড়ুন: বর্ডারে শান্তির পতাকা ওড়ানোর পরিকল্পনা মিঁয়াদাদের
৫) ১৯৩২ সালে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে কোনও ট্রায়াল ছাড়াই অলিম্পিক দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। ইউএসএ-র বিরুদ্ধে ভারত ২৪ গোল দিয়েছিল। বিপক্ষের থেকে এসেছিল মাত্র একটি গোল। ২০০৩ সাল পর্যন্ত এটিই ছিল সর্বোচ্চ গোলের ম্য়াচ। ধ্য়ান চাঁদ আটটি গোল করেছিলেন। তাঁর ভাই রূপ সিং করেন ১০টি গোল। গোটা টুর্নামেন্টে ভারত ৩৫টি গোল করেছিল। রূপ একাই করেন ২৫টি গোল। বলাই বাহুল্য়, ভারত আবার অলিম্পিকে সোনা এনেছিল হকি থেকে। এটি দ্বিতীয় সোনা।
৬) ১৯৪৮ সালে ধ্য়ান চাঁদ ধীরে ধীরে খেলা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। কেরিয়ারের শেষ ম্য়াচটি তিনি অবশিষ্ট ভারতের হয়ে বাংলার বিরুদ্ধে খেলেন। ১৯৫৬ সালে সেনা থেকে তিনি অবসর নেন মেজর পদমর্যাদার সঙ্গে।
৭) ১৯৫২ সালে ধ্য়ান চাঁদের আত্মজীবনী 'গোল' প্রকাশিত হয়। ভারত সরকার তাঁকে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মভূষণে সম্মানিত করে। সেবছরই ধ্য়ান চাঁদ রাজস্থানের কোচ হন। একইসঙ্গে ন্য়াশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্পোর্টসের প্রধান হকি কোচ হিসাবেও পাটিয়ায়ালায় বহু বছর দায়িত্বে ছিলেন।
৮) ধ্য়ান চাঁদ জীবনের শেষ দিনগুলি নিজের জন্মভিটা উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে কাটান। যকৃতের ক্য়ান্সারে নিয়ে দিল্লি এইমস-এ ভরতি হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৯-র ৩ ডিসেম্বর শেষনিঃশ্বাস ত্য়াগ করেন তিনি। পাঞ্জাব রেজিমেন্টে তাঁকে সেনার মর্যাদায় শেষ শ্রদ্ধা জানায়। শোনা যায় শেষের দিকটা তীব্র অর্থকষ্টের মধ্য়ে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।