গত সংস্করণের ফাইনালে টুর্নামেন্টের সেরা দুটো দলই মুখোমুখি হয়েছিল। গ্রুপ পর্ব এবং প্লে অফে দুরন্ত ক্রিকেট উপহার দিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং দিল্লি ক্যাপিটালস। আমিরশাহির পিচে সঠিক মারণাস্ত্র ভাঁড়ারে রয়েছে দুই দলেরই- ওয়ার্ল্ড ক্লাস ফাস্ট বোলার যেমন রয়েছে, তেমন পিচ যখন টানা ম্যাচে গতিহীন হয়ে পড়ে তখন সেখান থেকে পূর্ণ ফায়দা তোলে দুই দলের স্পিনাররা।
এই বছরেও আমিরশাহির পিচে বাজিমাত করবে সুপার ফাস্ট বোলার যাদের রয়েছে, তারাই। তবে স্পিন এবং ফাস্ট বোলিং বাদ দিলে বাকি সমস্ত দলের থেকে যে বিষয়ে এগিয়ে রয়েছে মুম্বই এবং দিল্লি, তা হল স্কোয়াডের গভীরতা।
আরও পড়ুন: রবিবারই শুরু মহারণ! কেমন হচ্ছে IPL-এর আট ফ্র্যাঞ্চাইজির সেরা একাদশ, জানুন
কেন এবারেও খেতাব জয়ের বড় দাবিদার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স?
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স স্কোয়াডে ছয় তারকা রয়েছেন যারা পরের মাসে জাতীয় দলের হয়ে টি২০ বিশ্বকাপ খেলবে। ব্যাটে বলে অপ্রতিরোধ্য ফর্মে রয়েছেন রোহিত শর্মা এবং জসপ্রীত বুমরা। দুই সুপারস্টারকে সহায়তা করার জন্য রয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া, সূর্যকুমার যাদব, ঈশান কিষান, কুইন্টন ডিককের মত টি২০-র বড়বড় নাম। রয়েছেন কায়রণ পোলার্ড এবং ট্রেন্ট বোল্টের মত দুই বিশ্বসেরা নাম। ব্যাটিং, পেস বোলিং, স্পিন- সবেতেই টুর্নামেন্টের সেরা সেরা তারকারা রয়েছেন মুম্বই স্কোয়াডে। সাত ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত লিগ তালিকায় চতুর্থ স্থানে মুম্বই। প্লে অফ নিশ্চিত করতে মুম্বইকে এখনও তিনটে ম্যাচ জিততে হবে।
এবারে কি দিল্লি ক্যাপিটালস মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে টেক্কা দিতে পারবে?
গত বছর দিল্লি ফাইনালে উঠেও মুম্বইয়ের কাছে হেরে গিয়েছিল। তবে এবার পরিকল্পনা করেই ময়দানে নেমেছে দিল্লি। মুম্বইয়ের মতোই ব্যাটিং, বোলিংয়ে শক্তির অভাব নেই। রিজার্ভ বেঞ্চের গভীরতাও নজরকাড়া। গত বছর টুর্নামেন্টের সেরা পাঁচ ফাস্ট বোলারের দুজনই ছিল দিল্লির। কাগিসো রাবাদা এবং এনরিখ নর্তজে দুজনে শিকার করেন যথাক্রমে ৩০টি এবং ২২টি উইকেট। নর্তজের ভয়াল গতিতে ১৫০ কিমি বেগে আগুন ছুটিয়েছিলেন বাইশ গজে।
আরও পড়ুন: কোহলির সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পদত্যাগ করেন! সেই মহাতারকাকেই কোচ করে আনছেন সৌরভরা
চলতি বছরের আইপিএলের প্রথমার্ধ মিস করেছিলেন এনরিখ নর্তজে। অন্যদিকে, রাবাদাও সেভাবে ফর্মে ছিলেন না। তবে দুবাই এবং আবু ধাবির পিচে দুই প্রোটিয়াজ পেসারই আগুন ছোটাতে পারেন। বরং দিল্লির হয়ে বল হাতে অনেকটাই উজ্জ্বল ছিলেন আবেশ খান। ৮ ম্যাচে ১৪ উইকেট তাঁর নামের পাশে। স্পিন বিভাগে দিল্লির ভরসা জোগাতে থাকছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, অক্ষর প্যাটেল, অমিত মিশ্র-র মত তারকারা। ঋষভ পন্থের আসল চ্যালেঞ্জ দলের সঠিক কম্বিনেশন বাছাই করা।
কতটা পারবে চেন্নাই?
চেন্নাই চলতি সংস্করণে অপ্রতিরোধ্য। সাত ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে চেন্নাই আপাতত দ্বিতীয়। তবে আমিরশাহিতে এসে সমস্যায় পড়তে পারেন ধোনিরা। চিপকের স্লো পিচে মঈন আলি এবং জাদেজাকে দারুণভাবে ব্যবহার করে বিপক্ষের টুঁটি চিপে ধরছিল সিএসকে। দুজনেই প্রথম পর্বে ওভার পিছু সাতেরও কম রান দিয়েছেন। তবে আমিরশাহির পিচে অন্য চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন: রোহিতকে সরাতে বলেন কোহলি! কুৎসিত আবদারে ক্ষিপ্ত বোর্ডও, প্রকাশ্যে বিস্ফোরক রিপোর্ট
গত বছর সিএসকের বিখ্যাত স্পিন আক্রমণ মুখ থুবড়ে পড়েছিল। জাদেজার মত কৃপণ বোলারও ওভার পিছু ৯ খরচ করে ফেলেছিলেন। সিএসকে স্কোয়াডে বাকি দলের মত এক্সপ্রেস গতির বোলারও নেই। যারা আমিরশাহির পিচ থেকে ফায়দা তুলতে পারবেন। মিলিটারি পেসের শার্দূল ঠাকুর, দীপক চাহারকে দিয়েই কাজ চালাতে হবে ধোনিকে। শার্দূল ঠাকুরের ফর্ম সিএসকের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুরেশ রায়নাকে এবার সিএসকে পাবে। এটা ধোনিদের প্লাস পয়েন্ট।
প্লে অফে উঠতে সিএসকের দরকার শেষ সাত ম্যাচে ৪-৬ পয়েন্ট। যা মোটেই সমস্যা হওয়ার কথা নয় ধোনিদের।সিএসকে টুর্নামেন্টে সাফল্য নির্ভর করবে পাওয়ার প্লে-তে উইকেট প্রাপ্তির ওপরে।
কোহলির এটাই শেষ সুযোগ:
বিশ্বকাপোত্তর পর্বে জাতীয় টি২০ দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা করে দিয়েছেন কোহলি। এতেই পরিস্থিতি আরও আলোচনার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরসিবি নেতৃত্বও কোহলি ছেড়ে দিতে পারেন, জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। টানা নয় বছর ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নেতৃত্ব দিয়েও একবারও কাপ জেতাতে পারেননি। এবার না জিতলে ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকেই সরিয়ে দেওয়া হতে পারে কোহলিকে। এমনটাই ধারণা। তবে এই মুহূর্তে আরসিবি স্কোয়াডে নেতৃত্বদানের বিষয়েও কোহলির যোগ্য উত্তরসূরি নেই।
আরও পড়ুন: আরসিবি নেতৃত্বও ছাড়ছেন কোহলি! সামনে এল বোর্ড কর্তার বিস্ফোরক বক্তব্য
এবি ডিভিলিয়ার্সের বয়স এখনই ৩৭। তিনি মোটেই ভবিষ্যৎ নন। তবে আগামী সংস্করণের আগেই নতুন করে নিলাম পর্ব সম্পন্ন হবে। আরও একবার ব্যর্থতার অর্থ ফ্র্যাঞ্চাইজি কোহলির অবস্থা নিশ্চয় পর্যালোচনা করবে। সাত ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে আরসিবি আপাতত তৃতীয় স্থানে।
বাকি দলগুলোর কী অবস্থা?
কেকেআর, পাঞ্জাব কিংস, রাজস্থান রয়্যালস এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদ প্লে অফের দৌড়ে রয়েছে ভালোভাবেই। রয়্যালসরা এরমধ্যে সবথেকে সমস্যায়। আর্চার, বেন স্টোকস, জস বাটলারকে হারিয়ে দলের শক্তি প্রায় অর্ধেক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেকেআর আবার মিস করবে প্যাট কামিন্সকে। ট্রফি জেতার জন্য নাইটরা অনেকটাই তাকিয়ে থাকবে আন্দ্রে রাসেলের ফর্মে ফেরার ওপরে। প্রতিপক্ষ দলের ফাস্ট বোলাররা রাসেলের দূর্বলতা আবিষ্কার করে ফেলেছেন।
শরীর লক্ষ্য করে শর্ট বল করলেই দমবন্ধ হয়ে আসে ক্যারিবীয় তারকার। স্পেস আটকে যাওয়ার বড় শট হাঁকাতে পারেন না। পাঞ্জাব কিংসের ভাগ্য অনেকটাই ক্যাপ্টেন কেএল রাহুল এবং মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ওপরে নির্ভর করবে। অন্যদিকে, জনি বেয়ারস্টো সরে দাঁড়ানোয় সুযোগ মিলবে ডেভিড ওয়ার্নারের। প্রথম পর্বে একাধিকবার বাদ পড়ায়, নিজেকে প্রমাণের মরিয়া চেষ্টায় থাকবেন তিনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন