দু-দিন আগেই আরসিবি নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছেন। চলতি সংস্করণের পরেই একজন সাধারণ ব্যাটসম্যান হিসেবে আরসিবি জার্সিতে দেখা যাবে বিরাট কোহলিকে। কোহলি নেতৃত্বের বোঝা হালকা করে ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ করবেন। তবে কোহলির বিরাট সিদ্ধান্তের পরেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, আরসিবিতে তাঁর উত্তরসূরি কে হবেন?
এমনিতে আইপিএলে একবার ও কাপ জিততে পারেনি আরসিবি। আগামী বছরেই মেগা নিলাম। নতুন করে দলকে গুছিয়ে নিতে উদ্যোগী হবে আরসিবি ম্যানেজমেন্ট। শুধু নেতা নয়, পুরো লিডারশিপ গ্রুপেই পরিবর্তন ঘটতে পারে। রিস্টার্ট দেওয়ার সময় আরসিবি চালকের আসনে কাকে বসায় সেটাই দেখার।
আরও পড়ুন: রাসেলের আগুনে গোলায় ভাঙচুর এবিডির স্ট্যাম্প! ভিডিওয় দেখুন বিধ্বংসী ইয়র্কার
এমনিতে আরসিবির নামি তারকাদের তালিকায় থাকবেন এবি ডিভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কিংবা যুজবেন্দ্র চাহাল। নবাগত হিসাবে উঠতি তারকা হিসাবে রয়েছেন দেবদূত পাডিক্কল। ঘটনা হল, এঁদের কাউকেই পরবর্তী নেতা হিসেবে ভাবছে না আরসিবি ম্যানেজমেন্ট। এমনটাই খবর ক্রিকেট সূত্র। এবি ডিভিলিয়ার্স এর আগে জাতীয় দলের নেতা হলেও কেরিয়ারের একদম শেষ পর্যায়ে তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবসরের পরে খেলেন কেবলমাত্র আইপিএলেই। ৩৭ বছরের বুড়ো এবি তো বটেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েল কিংবা যুজবেন্দ্র চাহালকেও ধরা হচ্ছে না নেতা হিসেবে।
দুজনেরই এর আগে নেতৃত্বে কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। তাছাড়া দুজনকে আগামী মেগা-নিলামে আরসিবি রিটেন করবে কিনা, সেই বিষয়টিও পরিষ্কার নয়। দেবদূত পাডিক্কলের নাম ভেসে এলেও ক্রিকেট মহলের বক্তব্য, ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে এখনও তিনি অটোমেটিক চয়েস নন। ক্রিকেটার হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হলে তারপরেই অধিনায়কত্বের জন্য বিবেচিত হতে পারেন।
নিয়ম অনুযায়ী, মেগা নিলামের আগে মাত্র তিনজনকে রিটেন করতে পারবে ফ্র্যাঞ্চাইজি। সেই তালিকায় কাদের রাখা হবে, কাদের রিলিজ করা হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ঘটনা হল, এই মুহূর্তে আরসিবি স্কোয়াডে কোহলির উত্তরসূরি হওয়ার মত কেউ নেই। তাই ফ্র্যাঞ্চাইজি আপাতত পাখির চোখ করছে আসন্ন মেগা নিলামকে। সেখান থেকেই নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য হাইপ্রোফাইল কোনও তারকাকে নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: বল হাতে স্বপ্নের স্পেল রাসেল-বরুণের! কোহলিদের কচুকাটা করে জয় KKR-এর!
আর ফ্র্যাঞ্চাইজি ইতিমধ্যেই নজর রাখছে কয়েক জন তারকাদের ওপর।
ডেভিড ওয়ার্নার/ কেন উইলিয়ামসন:
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কম্বিনেশনে দুই সুপারস্টারকে প্রথম একাদশে একসঙ্গে খেলানো নিয়ে সমস্যা যথেষ্ট। ভারতীয় পর্বেই যেমন ডেভিড ওয়ার্নারকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দায়িত্বে আনা হয়েছিল কেন উইলিয়ামসনকে। সানরাইজার্স এমনিতে জনি বেয়ারস্টো এবং রশিদ খানকে নিশ্চিতভাবেই রিটেন করবে। সেই সঙ্গে কেন উইলিয়ামসন এবং ডেভিড ওয়ার্নারের মধ্যে একজনকে রিলিজ করতে বাধ্য হবে হায়দরাবাদ। আর এদের মধ্যেই একজনকে নিতে মরিয়া থাকবে আরসিবি। দুজনের ব্র্যান্ড ভ্যালু নেহাত কম নয়। সেই সঙ্গে থাকবে স্কিলের ঝলক।
আরসিবির দায়িত্বে থাকা মাইক হেসন অবশ্যই স্বদেশীয় কেন উইলিয়ামসনকে নিতে ঝাঁপাবেন। তবে ওয়ার্নারও খারাপ বাছাই হবেন না। ওয়ার্নারের সঙ্গে তাই আগামী আইপিএলে কোহলিকে ওপেন করার দৃশ্য দেখা যেতেই পারে।
পৃথ্বী শ/ মার্কাস স্টোয়িনিস/ রবিচন্দ্রন অশ্বিন/ অজিঙ্কা রাহানে/ স্টিভ স্মিথ:
দিল্লি ক্যাপিটালসের স্কোয়াডে একের পর এক বড় বড় নাম। আসন্ন নিলামে তিনজনকে রিটেন করার ক্ষেত্রে বেশ সমস্যায় পড়বে দিল্লি দল। দলের কোর গ্রুপ যে হাতছাড়া হচ্ছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। জানা যাচ্ছে, ঋষভ পন্থ, শ্রেয়স আইয়ার এবং কাগিসো রাবাদাকে রিটেন করার পাল্লা ভারি। আর সেক্ষেত্রে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে পৃথ্বী শ, স্টিভ স্মিথ, অজিঙ্কা রাহানে, মার্কাস স্টোয়িনিস, অশ্বিনদের মত তারকাদের।
আগামী আইপিএলে আরও দুই নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির সংযোজন ঘটছে। নতুন দুই ফ্র্যাঞ্চাইজিও অভিজ্ঞ তারকাদের নিতে মরিয়া থাকবে। আরসিবির নজরে থাকতে পারেন পৃথ্বী শ। তারকাকে দলে নিয়ে কোহলির তত্ত্বাবধানে গ্রুম করে দীর্ঘমেয়াদি স্তরে নেতৃত্বের জন্য ভাবা হতে পারে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন আবার কোহলির ঘনিষ্ঠ না হলেও তাঁর প্রখর ক্রিকেটীয় মগজকে অবহেলা করতে পারবে না আরসিবি। আর সুস্থিত কোর গ্রুপের লক্ষ্যে আরসিবি দলে নিতে পারে স্মিথ এবং রাহানে দুজনকেই। দুজনেই অধিনায়ক হিসেবে বিচক্ষণ।
মার্কাস স্টোয়িনিস আবার প্রাক্তন আরসিবি প্লেয়ার। দিল্লিতে বেশ ফর্মেই খেলছেন তিনি। অজি অলরাউন্ডারকে পুনরায় নিলামে কিনে নিতে পারে আরসিবি। এবং নেতৃত্বের দায়িত্বও তুলে দিতে পারে। শ এবং স্টোয়িনিসকে নিলামে নিতে ঝাঁপাবে আরসিবি। তবে তীব্র নিলাম যুদ্ধে কতজনকে দলে ভেরাতে পারে আরসিবি, সেটাই দেখার।
সূর্যকুমার যাদব/ ঈশান কিষান/ কুইন্টন ডিকক:
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স রিটেন করতে পারে রোহিত শর্মা, জসপ্রীত বুমরা এবং হার্দিক পান্ডিয়াকে। সেক্ষেত্রে একাধিক সুপারস্টারকে ছেড়ে দিতে হবে আইপিএলের সফলতম দলকে। সূর্যকুমার যাদব, ঈশান কিষান, কায়রণ পোলার্ডদের নতুন ঠিকানা হতে পারে নয়া কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি। সূর্যকুমার যাদব এবং ঈশান কিষান ইতিমধ্যেই সুপ্রতিষ্ঠিত তারকা। জাতীয় দলেও অভিষেক ঘটিয়ে ফেলেছেন। প্ৰথম একাদশে দুই তারকাই অটো-চয়েস। এমন কাউকে লম্বা সময়ের কথা ভেবে বিনিয়োগ করতে পারে আরসিবি। অন্যদিকে, কায়রণ পোলার্ড কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেলেও এখনও কয়েক বছর খেলবেন। আইপিএলে রোহিতের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন ক্যারিবীয় এই তারকা। সেই অভিজ্ঞতার জোরেই আরসিবি স্কোয়াডে চলে আসতে পারেন তিনি।
কুইন্টন ডিকক আবার টি২০ ক্রিকেটে বড় নাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তারকা খ্যাতি রয়েছে। ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম সারির তারকা। কোহলির দলে অতীতে খেলেছেন। আরসিবির নোটবুকে কুইন্টন ডিককের নাম থাকলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
আরও পড়ুন: ছোট পোশাকে উদ্দাম নাচ! আফগানিস্তানে IPL নিষিদ্ধ করল তালিবান
জস বাটলার/ বেন স্টোকস:
রাজস্থান রয়্যালস দুই ইংরেজ তারকার একজনকে ছেড়ে দিচ্ছে। সঞ্জু স্যামসন, জোফ্রা আর্চার এবং বাটলার অথবা স্টোকসের মধ্যে একজনকে রিটেন করবে। দুই তারকাই নেতৃত্ব পাওয়ার যোগ্য দাবিদার। স্টোকস কিছুদিন আগেও ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জস বাটলার আবার টেস্টের সহ অধিনায়ক। সীমিত ওভারের ফরম্যাটেও মর্গ্যানের পরবর্তী নেতা হিসেবে ভাবা হচ্ছে তাঁকে। রাজস্থান রয়্যালস যাঁকেই রিলিজ করবে, তাঁকে নিলামে যে টার্গেট করবে আরসিবি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরন ফিঞ্চ:
অস্ট্রেলিয়ার সীমিত ওভারের নেতা গত নিলামে আনসোল্ড ছিলেন। তাঁর আগে আরসিবিতেই খেলেছেন টি২০ ফরম্যাটের অন্যতম সেরা এই তারকা। আগামী নিলামে আরও দুই দলের সংযোজন ঘটায় তিনি আর অবিক্রীত থাকবেন না, সেটা বলাই বাহুল্য। নিজেদের পুরোনো তারকার ওপর ভরসা রেখে নেতৃত্বের লক্ষ্যে ফিঞ্চকে ফের কোহলিরা কিনে নিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন