ভারতীয় ক্রিকেটের ট্রেন্ডিং টপিক আপাতত দুই! এক, মহেন্দ্র সিং ধোনির অবসর। এবং দুই, রবি শাস্ত্রীর অপসারণ। জল্পনা এবং পালটা জল্পনায় আপাতত শোরগোল সোশ্য়াল মিডিয়া। ইতিমধ্যেই ভারতীয় বোর্ডের পক্ষে থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, রবি শাস্ত্রী যে ৪৫ দিনের বাড়তি মেয়াদে রয়েছেন, সেই মেয়াদ শেষ হলেই কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ক্রিকেট অ্য়াডভাইসারি কমিটি বেছে নেবে ভারতের নতুন কোচ। শাস্ত্রী যদি কোচের পদে থাকতে চান, তাহলে পুনরায় তাঁকে আবেদন করতে হবে।
বোর্ডের পদক্ষেপেই পরিষ্কার, শাস্ত্রীকে পুনর্বহাল না করার লক্ষ্যেই নতুন করে ক্রিকেট অ্যাডভাইসারি কমিটি তৈরি করা হল। এতেই কাঁটাছেড়া শুরু হয়ে গিয়েছে হেড কোচ হিসেবে শাস্ত্রীয় পারফরম্যান্সের। পরিসংখ্যানে চোখ বোলানো যাক। দ্বিতীয় বার কোচ হয়ে আসার পরে শাস্ত্রীর কোচিংয়ে ভারত ২০টি টেস্ট খেলেছে ভারত। এর মধ্যে জয়ের সংখ্যা ১০। হারের সংখ্যা ৭টি। ড্র ৩টিতে। ভালয় মন্দয় মেশানো এই পারফরম্য়ান্সের বড় ব্যাপার হল, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবার কোনও ভারতীয় দলের টেস্ট সিরিজ জয়। তবে এত বড় সাফল্য ম্লান হয়ে গিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মাটিতে শোচনীয় বিপর্যয়ে।
আরও পড়ুন কোহলিদের কোচের দৌড়ে এগিয়ে কারা? চমক একাধিক নামে
চাকরি যাচ্ছে শাস্ত্রী-র, নতুন হেড কোচ বাছবেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক
ওয়ান ডে ক্রিকেটে, বিশ্বকাপের আগে শাস্ত্রীয় জমানায় ৫৮টি ম্যাচ খেলেছে ভারত। এর মধ্যে ৪২টিতেই জয় ভারতের। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় একদিনের ক্রিকেটে বড় সাফল্য। এশিয়া কাপ জয় শাস্ত্রীর কোচিংয়ে বড় মুকুট। টি টোয়েন্টিতে ৩৩টির মধ্যে ২২টিতেই ভারত জিতেছে।
কোনও সন্দেহ নেই, শাস্ত্রীর কোচিং সাফল্য সাম্প্রতিককালে যেকোনও ভারতীয় কোচের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে। তবে আলোর নিচে যেমন অন্ধকার থাকে, তেমনই শাস্ত্রীর কোচিংয়ের খারাপ বিষয় কোহলি-র ইয়েস-ম্যান হয়ে থাকা। বারেবারেই অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে নিজের পছন্দের ক্রিকেটার প্রথম একাদশে বাছাই করেন তিনি। আর কোহলির পছন্দই মেনে নেওয়া। কোহলির মতের বিরুদ্ধে যেতে না চাওয়ার মানসিকতাতেই তিনি সবথেকে 'দুর্বল কোচ', এমনটাই বলছে বিশেষজ্ঞ মহল। এখানেই স্বতন্ত্র ছিলেন অনিল কুম্বলে। সম্মান ও শ্রদ্ধায় তিনি আপামর ক্রিকেট দুনিয়ার কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছিলেন কোচ থাকাকালীন। কোহলির সঙ্গে মতপার্থক্য হওয়ায় তিনি নিজের পদত্যাগ পত্রে স্পষ্ট লিখেছিলেন, পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা, বহুমুখী দর্শন আমি ভারতীয় ক্রিকেটে এনেছিলাম। এখানেই সম্ভবত, সফল কোচ হয়েও পিছিয়ে পড়েছেন শাস্ত্রী।
শাস্ত্রীর বেতনও আকাশথছোঁয়া। একাধিক পত্র পত্রিকা ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, শাস্ত্রী বার্ষিক ৮ কোটি টাকা বেতন পেতেন। অনিল কুম্বলের থেকেও যা ১.৫ কোটি টাকা বেশি। হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের সবথেকে দামি ক্রিকেট কোচ। দামি কোচ, পারফরম্যান্সও কি বেতনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে? বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের পরেই প্রশ্ন তুলছে ক্রিকেট মহল।