ইস্টবেঙ্গল: ০
এটিকে মোহনবাগান: ২ (বৌমাস, মনবীর)
মায়াবী যুবভারতী। কানায় কানায় পূর্ণ না হলেও মাঠ মাতিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। হাজির এটিকে মোহনবাগানের ডিরেক্টর পদে ফিরতে চলা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। এর মহারাজের সামনেই সবুজ মেরুন গোলা বারুদে কার্যত ধ্বংস হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল এফসি।
ম্যাচের আগেই কোচ কনস্টানটাইন বড় মুখ করে বলেছিলেন, তিন পয়েন্টের জন্যই নামবে তাঁর দল। তবে শনিবার ব্রিটিশ কোচকে মাটিতে আছড়ে ফেললেন হুগো বৌমাস, মনবীর সিংরা।
আরও পড়ুন: ডার্বিতে নামছে ‘মস্তান’ ইস্টবেঙ্গল! বাগান-মহারণের আগেই উত্তাপ বাড়ালেন দেবব্রত সরকার
প্রথমার্ধে ফিনিশিং নেই। দ্বিতীয়ার্ধে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়েই ফেরান্দোকে জোড়া গোল এনে দিলেন বৌমাস, মনবীররা। প্ৰথম থেকেই পজেশন ভিত্তিক ফুটবলে অনেক এগিয়ে বাগান ফুটবলাররা। নিজেদের মধ্যে বল দখল রেখেই আক্রমণে উঠছিলেন লিস্টন, জনিরা। বিক্ষিপ্তভাবে ইস্টবেঙ্গল আক্রমণ করলেও কখনই সেভাবে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ ছিল না লাল-হলুদ শিবিরের। মাঠে 'মস্তানি' দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার। পাল্টা চ্যালেঞ্জ নিয়ে হোম ম্যাচে মস্তান হয়েই যেন আবির্ভাব ঘটল বৌমাসের।
সৌরভের সামনে সত্যি দাদাগিরি দেখিয়ে গেলেন ফ্রেঞ্চ-মরোক্কান সুপারস্টার। আক্রমণে সারাক্ষণ দলকে খেলিয়ে গেলেন। আদর্শ ব্যান্ড মাস্টারের মত। বিরতির আগে যে ফিনিশিংয়ে ঘাটতি ছিল, তা ঘুচিয়ে দিলেন দ্বিতীয়ার্ধে।
দর্শনীয় গোল করে ৫৫ মিনিটে ভরা যুবভারতীতে প্রাণ সঞ্চার করলেন বৌমাস। প্রায় হাফলাইন থেকে কয়েকজনকে ড্রিবল করে বক্সের কাছাকাছি এসে জোরালো শটে গোল করে গেলেন। কুৎসিততম গোলকিপিংয়ের প্রদর্শন করে কমলজিৎ গোল হজম করলেন। আইএসএল-এর মত টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচ থেকেই কমলজিৎকে স্টিফেন ডাগ-আউটে পাঠিয়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
প্ৰথম গোল হজমের হ্যাংওভার কাটার আগেই বাগানের হয়ে দ্বিতীয় গোল মনবীরের। দুর্দান্ত লিঙ্ক আপ ফুটবলের নিদর্শন তুলে ধরে গোল করে যান বাগানের পাঞ্জাব তনয়। মাঝমাঠে বৌমাস বল পেয়ে বাড়িয়েছিলেন পেত্রাতোসকে। অজি তারকার শট আটকেও দেন কমলজিৎ। তবে রিবাউন্ড থেকে ডান প্রান্তে অরক্ষিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা মনবীর দারুণ ফিনিশিং করে যান। মনবীরের গোলমুখী শট নাওরেমের পায়ে লেগে দিকভ্রষ্ট হয়ে জালে জড়িয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ডার্বি হারের ইতিহাস বদলাতে মাঠে নামবে ইস্টবেঙ্গল, সরাসরি বাগানকে হুঙ্কার স্টিফেনের
আগের ম্যাচেই নর্থইস্টকে ধুইয়ে দুর্ধর্ষ জয় পেয়েছিল কনস্টানটাইন ব্রিগেড। ডার্বিতে সেই জয়ের আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করেই খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। গ্যালারি ভর্তি লাল-হলুদ সমর্থকরাও হাজির ছিল। তবে দ্বিতীয় গোলেই পরেই ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি কার্যত ফাঁকা হয়ে যায়। ম্যাচ শেষের আগেই লাল-হলুদ সমর্থকরা ভিড় জমান বিল্ডিং মোড়, কাড়াপাড়ায়। ইস্টবেঙ্গলের তরফে বলার মত বিষয় একটাই। জোড়া পেনাল্টির দাবি। প্ৰথমার্ধে জর্ডন ও'দোহার্তি এবং ক্লেইটন সিলভা বক্সের মধ্যে পড়ে গিয়ে পেনাল্টির দাবি তুলেছিলেন। তবে রেফারি তাতে কর্ণপাত করেননি।
সবমিলিয়ে টানা সাত ডার্বি হার! ভাবা হয়েছিল স্টিফেন কনস্টানটাইনের হাত ধরেই হয়ত ডার্বি-হারের শাপমোচন ঘটবে। শনিবারের পর লাল-হলুদ সমর্থকদের অপেক্ষা যে আরও বাড়ল!
এটিকে মোহনবাগান একাদশ: বিশাল কাইথ, ব্রেন্ডন হ্যামিল, শুভাশিস বোস, প্রীতম কোটাল, জনি কাউকো, হুগো বৌমাস, আশিস রাই, দিমিত্রি পেত্রাতোস, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং, দীপক টাংরি
ইস্টবেঙ্গল একাদশ: কমলজিৎ সিং, ইভান গঞ্জালেজ, নুঙ্গা, ক্লেইটন সিলভা, সুহের ভিপি, সার্থক গলুই, জেরি, জর্ডন দোহার্তি, হাওকিপ, নাওরেম মহেশ, কিরিয়াকু