Youngest Indian Test Captain Mansoor Ali Khan Pataudi: ক্রিকেট মাঠে মনসুর আলি খান পতৌদি ছিলেন এক অনন্য চরিত্র। ‘টাইগার’ নামে পরিচিত কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ টেস্ট অধিনায়কদের একজন। মাত্র ২১ বছর ৭৭ দিনের বয়সে তিনি ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়ক হন এবং সে সময় বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়কের রেকর্ডও গড়েন। আজও তিনি ভারতের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক।
দুর্ঘটনার পরও হার মানেননি
একটি দুর্ঘটনায় পতৌদির একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেলেও, তিনি কখনও হাল ছাড়েননি। এক চোখেই তিনি বিপজ্জনক বোলারদের বিরুদ্ধে অসাধারণ ব্যাটিং করতেন এবং বোলারদের চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতেন।
নাটকীয়ভাবে অধিনায়কত্ব
১৯৬২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময় মনসুর আলি খান পতৌদির অধিনায়ক দায়িত্ব পাওয়া ছিল এক নাটকীয় ঘটনা। তখন দলের অধিনায়ক ছিলেন নরি কনট্রাক্টর, কিন্তু একটি প্র্যাকটিস ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলার চার্লি গ্রিফিথের একটি বল তাঁর মাথায় আঘাত করে গুরুতর চোট লাগে। ফলে তিনি সেদিন থেকেই বাদ পড়েন, এবং দলের অন্য সিনিয়ররা নেতৃত্ব নিতে অস্বীকার করলে ২১ বছরের পতৌদিকে অধিনায়ক করা হয়।
এখনও অক্ষুণ্ণ ভারতীয় রেকর্ড
যদিও বিশ্বে সবচেয়ে কনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়কের রেকর্ড পরবর্তীতে ভেঙে যায় যেমন জিম্বাবোয়ের তাতেন্দা তাইবু (২০ বছর ৩৫৮ দিন) ও আফগানিস্তানের রাশিদ খান (২০ বছর ৩৫০ দিন)। কিন্তু পতৌদি এখনও ভারতের কনিষ্ঠতম অধিনায়ক।
অধিনায়ক হিসেবে অসাধারণ কর্মজীবন
১৯৬১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত পতৌদি ভারতের হয়ে ৪৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন। তিনি ৬টি সেঞ্চুরি ও ১৬টি হাফ-সেঞ্চুরির সাহায্যে ২,৭৯৩ রান করেন। এর মধ্যে ৪০টি ম্যাচে তিনি অধিনায়ক ছিলেন এবং তাঁর অধিনায়কত্বে ভারত ৯টি ম্যাচ জেতে, ১৯টিতে হারে এবং ১২টি ম্যাচ ড্র হয়। ১৯৬৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিদেশের মাটিতে ভারতের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের নেতৃত্ব দেন তিনিই।
স্পিন নির্ভর কৌশলের প্রবর্তক
ভারতের গুণগত ফাস্ট বোলারদের অভাব বুঝে তিনি তাঁর কৌশল তৈরি করেন স্পিনারদের কেন্দ্র করে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, “যেখানে ভালো পেসার নেই, সেখানে তিন প্রতিভাবান স্পিনার দুইজন পেসারের চেয়েও কার্যকর।”
স্মরণীয় ইনিংস
যদিও তাঁর ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা ছিল না, তবুও তিনি সময়ে সময়ে এমন কিছু ইনিংস খেলেছেন যা চিরস্মরণীয়। ১৯৬৩-৬৪ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দিল্লিতে তিনি ভারতের প্রথম দ্বিশতরান করেন। ১৯৬৭ সালে হেডিংলিতে ১৪৮ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন। ১৯৬৭-৬৮ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৭৫ ও ৮৫ রানের ইনিংস খেলে লিন্ডসে হ্যাসেট তাঁকে ‘ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে তুলনীয়’ বলে মন্তব্য করেন।
বিদেশের মাটিতে প্রথম জয়
অস্ট্রেলিয়ায় চারটি টেস্টে হারের ক্ষত মিটেছিল নিউজিল্যান্ডের ডুনেডিনে ভারতের প্রথম বিদেশি টেস্ট জয়ে। পরে ১৯৭৪-৭৫ সালে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে নিজের শেষ টেস্ট সিরিজ খেলেন এবং তার নেতৃত্বে ভারত প্রথমবার ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায়। তবে তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাটিং তখন ততটা সফল ছিল না।
আরও পড়ুন দীর্ঘ ৮ বছর পর কামব্যাক, টিম ইন্ডিয়ায় ধামাকাদার এন্ট্রি তারকা ক্রিকেটারের
প্রথম শ্রেণির রেকর্ড
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি ৪৯৯টি ইনিংসে ১৫,৪২৫ রান করেন, যার গড় ছিল ৩৩.৬৭ এবং ৩৩টি সেঞ্চুরি ছিল। তিনি সাসেক্স (১৯৫৭ থেকে ১৯৭০, ৮৮টি ম্যাচ) এবং হায়দরাবাদের হয়ে খেলেছিলেন।
প্রেমকাহিনি ও ব্যক্তিগত জীবন
পতৌদির প্রেমকাহিনি ছিল যথেষ্ট আলোচিত। তিনি বিখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরকে বিয়ে করেন। তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ হয় কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁদের সম্পর্ক, যা পরে বিয়েতে পরিণতি পায়।
জীবনের শেষ অধ্যায়
ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি কিছু মডেলিং, ক্রিকেট বিশ্লেষণ ও ‘স্পোর্টসওয়ার্ল্ড’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। মৃত্যুর এক মাস আগে তিনি ওভালে অ্যান্ড্রু স্ট্রসকে 'পতৌদি ট্রফি' প্রদান করেছিলেন। এরপর তিনি ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত হন এবং ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে ৭০ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর ‘সুস্থ’ চোখটি দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন দিল্লির ভেনু আই ইনস্টিটিউটে। যেখানে দশ বছরব্যাপী গুডউইল অ্যাম্বাসাডর হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন কেন শুভমানকেই অধিনায়ক বাছলেন আগরকর? সামনে এল আসল কারণ
মনসুর আলি খান পতৌদি কেবল একজন ক্রিকেটারই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তি। যিনি চিরকাল ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।