Patchachakra FC Footballer Arnab Das: কলকাতা লিগের (CFL) চলতি মরশুমে প্রথম হারল ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। মশাল নিভিয়ে বাংলার ফুটবলে প্রদীপের আলো ছড়াল পাঠচক্র। কিন্তু সেই প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতোই চোখে জল আনার মতো ঘটনা জানা গেল ম্যাচের পর। মাত্র দেড়দিন আগে মা-কে হারিয়েছিলেন পাঠচক্রের গোলকিপার অর্ণব দাস। এদিন মাঠে আসেন ধরাকাছা পরেই। মা-কে হারানোর যন্ত্রণাকে সঙ্গী করেই মাঠে নামেন। এবং রুখে দেন ইস্টবেঙ্গলকে। লাল-হলুদ ব্রিগেডকে হারানোর আনন্দও ভুলে গেলেন মা-কে হারানোর বিষাদে। চোখের জলেই মাঠ ছাড়লেন অর্ণব।
এরকম অনেক বারই হয়েছে যে আপনজনকে হারিয়ে প্রিয় দলের খেলা দেখতে মাঠে এসেছেন সমর্থকরা। সাদা থান পরেই গ্যালারিতে বসে গলা ফাটিয়েছেন প্রিয় তারকার জন্য। কিন্তু প্রিয়জনকে হারিয়ে খেলতে নামা! এমন মর্মান্তিক পরিস্থিতি যেন কারও সঙ্গে না হয়। তেমনটাই হয়েছে মঙ্গলবার। মায়ের মৃত্যুর দেড়দিনও পেরোয়নি, সাদা থান পরেই খেলার মাঠে চলে আসেন অর্ণব। ধরা ছেড়ে জার্সি পরে খেলতে নামেন। আবার খেলা শেষে পরনে সেই সাদা থান।
আরও পড়ুন নিভে গেল মশালের আগুন, পাঠচক্রের বিরুদ্ধে লজ্জার হার ইস্টবেঙ্গলের
অর্ণব যতক্ষণ খেলেছেন বীরের মতো আগলেছেন পাঠচক্রের গোলপোস্ট। একের পর এক ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ রুখে দিয়েছেন বীর বিক্রমে। বার বার ভোঁতা হয়ে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের গোলের সুযোগ। অর্ণবকে টপকে জালে বল জড়াতে পারেনি লাল-হলুদ শিবির। এদিন পাঠচক্রের জয়ের অন্যতম নায়ক সদ্য মা হারানো সেই অর্ণব।
ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জয়ের পর চোখের জল বাঁধ মানেনি অর্ণবের। দর্শকদের মধ্যে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তরুণ ফুটবলার। জানা গিয়েছে, চার বছর আগেই বাবাকে হারান অর্ণব। আর দেড়দিন আগে মা-কে হারিয়ে ভেঙে পরেন তিনি। বাড়ি এখন শূন্য। অর্ণবের আশায় বসে থাকার মতো কেউ নেই বাড়িতে। বড় ম্যাচ জিতে আবার সাদা থান পরেই শূন্য বাড়ির পথে হাঁটা দেন অর্ণব। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে প্রয়াত মা-বাবাকেই উৎসর্গ করেন অর্ণব। পাঠচক্রের হয়ে একমাত্র গোল কার ডেভিডও তা উৎসর্গ করেন সতীর্থের মা-বাবাকে।
আরও পড়ুন ইস্টবেঙ্গলেই সই করলেন তারকা ফুটবলার! আনন্দে আত্মহারা লাল-হলুদ সমর্থকরা
জানা গিয়েছে, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জয় উদযাপন করতে পাঠচক্রের বিনিয়োগকারী সংস্থা মামনি গ্রুপের কর্তারা নামী রেস্তোরাঁয় ফুটবলারদের বিরিয়ানি খাওয়াতে চান। কিন্তু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন পাঠচক্রের ফুটবলাররা, অর্ণবের সদ্য প্রয়াত মায়ের শ্রদ্ধায়। তার চেয়ে বরং সেই টাকা অর্ণবের মায়ের শেষকৃত্যের জন্য তুলে দেওয়ার আবেদন জানান পাঠচক্রের ফুটবলাররা। মামনি গ্রুপের প্রধান শেখ নাসিম আখতার সেই আর্জি রাখেন। বাংলার ফুটবল আকাশে এমন হাজার হাজার অর্ণব আলো জ্বালুক। যাঁরা প্রিয়জনের বিয়োগেও কর্তব্যে অবিচল থেকে মাঠে নিজের সেরাটা দিয়ে আসেন।