কেরিয়ারের শেষ চ্যাপ্টার সেই ম্যাঞ্চেস্টারেই। যেখান থেকে খ্যাতির আলোকস্তম্ভ ছুঁয়ে দেখা, বিশ্বকে সদর্পে নিজের স্টারডম জাহির করা- সেই ম্যাঞ্চেস্টারেই কেরিয়ারের শেষ অধ্যায় লিখতে চলে গেলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। শুক্রবারই চলতি ট্রান্সফার উইন্ডোর সবথেকে আলোচিত দলবদলের সাক্ষী থেকে গেল। আর আলেক্স ফার্গুসনকে নামিয়ে বাজিমাত করল ম্যান উই। সিআর৭ ম্যাচটা জিতেই নিল তাঁরা।
গত কয়েকসপ্তাহ ধরেই পর্তুগিজ সুপারস্টারের দল বদলের জল্পনা জোরালো হচ্ছিল। পিএসজি, ম্যানসিটি সহ একাধিক ক্লাবের নাম ভেসে উঠছিল। তবে শেষ লগ্নে যে এভাবে বাজিমাত করবে রেড ডেভিলসরা, তা ভাবা যায়নি। বৃহস্পতিবারই জুভে বস আলেগ্রি জানিয়ে দেন, রোনাল্ডো ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। তারপরেই ইউরোপের তাবড় তাবড় সংবাদমাধ্যম জানিয়ে দেয়, পেপ গুয়ার্দিওলার ম্যান সিটি জার্সিতে শীঘ্রই দেখা যেতে চলেছে তাঁকে। তবে ম্যাঞ্চেস্টারেই শেষ পর্যন্ত নাম লেখালেন মহাতারকা। সিটি নয়, ইউনাইটেডে।
আরও পড়ুন: অবসর জল্পনা উস্কে মাঠেই ‘ইঙ্গিত’ রোনাল্ডোর! হতাশায় একী করলেন মহাতারকা
রোনাল্ডো কেন জুভেন্তাস ছাড়ছেন?
পারস্পরিক সহমতের ভিত্তিতেই রোনাল্ডো এবং জুভেন্তাসের বিচ্ছেদ। এখনও জুভের সঙ্গে এক বছরের চুক্তি রয়েছে রোনাল্ডোর। তবে রোনাল্ডো বেশ কিছুদিন ধরেই নিজের ব্র্যান্ড ভ্যালুর ভাবমূর্তি রক্ষায় সচেষ্ট হন। বেশ কয়েকটা স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছিল, রোনাল্ডোকে পুনরায় সই করতে আগ্রহী নয় রিয়াল মাদ্রিদ। তারপরেই ইনস্টাগ্রামে লম্বা পোস্টে রোনাল্ডো এই সমস্ত জল্পনা নস্যাৎ করে দিয়ে তাঁর অবস্থানকে সম্মান জানানোর আর্জি জানিয়েছিলেন।
রোনাল্ডো যখন নিজের ব্র্যান্ড ভ্যালুর মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট তখন জুভে মহাতারকাকে 'ঝেড়ে ফেলতে পেরে' যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। আসলে মধ্যমমানের জুভেন্তাসে কখনই রোনাল্ডো স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। রোনাল্ডোর দেশের বিখ্যাত কোচ হোসে মোরিনহো-ই একবার বলে দিয়েছিলেন, জুভেন্তাস আসলে এমন একটা পরমাণু বোমা কিনেছে, যা কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা তাঁদের ধারণারই বাইরে ছিল।
রোনাল্ডোর সঙ্গে ম্যান সিটির নাম জুড়ল কীভাবে?
গত সপ্তাহে একাধিক ক্লাবকে রোনাল্ডোর সম্ভাব্য গন্তব্য হিসাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। হ্যারি কেন-কে তুলতে ব্যর্থ হওয়ার পরে সিটি যে সিআরসেভেনকে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, এমনটাও জানানো হয়েছিল। আর যেহেতু এরলিং হালান্ডকে ডর্টমুন্ড থেকে এই মরশুমে পাওয়ার আশা নেই, তাই রোনাল্ডোকে সিটি নিচ্ছেই, এমনটাই জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে। গত মরশুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পৌঁছেছিল গুয়ার্দিওলার সিটি। এমন ক্লাবের সঙ্গেই যে রোনাল্ডো নিজেকে জুড়তে চাইবেন, সেটাই সাধারণ যুক্তিতে ধরা হয়।
কীভাবে রোনাল্ডো নাটকে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের উদয়?
ইউরোপের একাধিক সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, রোনাল্ডোর স্বদেশীয় ব্রুনো ফার্নান্দেজ, স্যার আলেক্স ফার্গুসন এবং একাধিক প্রাক্তন রেড ডেভিলস ফুটবলার দীর্ঘক্ষণ রোনাল্ডোর সঙ্গে ফোনে কথা বলে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে আসার বিষয়ে রাজি করান। নিজের কেরিয়ারের প্রথম মহাগুরু কোচ স্যার ফার্গির আবেদন ফেরাতে পারেননি পর্তুগিজ মহাতারকা। সটান হ্যাঁ বলে দেন। তারপর বাকিটা ইতিহাস।
আরো পড়ুন: ইউরোর সেরা দলে বাদ রোনাল্ডো! বাছাই দল নিয়েই উঠে গেল প্ৰশ্ন
রোনাল্ডোর প্রত্যাবর্তনে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কি আদৌ লাভবান হবে?
রোনাল্ডোর খ্যাতির তুঙ্গে ওঠা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে। তারপরে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে তিনি সাফল্যের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে চড়েছেন। একের পর এক ট্রফি, খেতাব, সেরার সেরা হয়ে ওঠা- সব-ই রিয়ালের সাদা জার্সিতে। মহাতারকাকে ফেরানোর ক্ষেত্রে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড যে যুক্তির তুলনায় আবেগকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন, তা স্পষ্ট। ৩৬ বছরের রোনাল্ডো এখন কেরিয়ারের সায়াহ্নে। আগের মত এখন মোটেই নিয়মিত হিংস্র হয়ে উঠতে পারেননা মাঠে। তবু সিআরসেভেন যে রেড ডেভিলসদের জার্সিতে প্ৰথম একাদশে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে এন্থনি মার্শাল এবং এডিনসন কাভানিদের থেকে এগিয়ে থাকবেন, সেটাও লিখে দেওয়া যায়। আর রোনাল্ডো আসায় ওলে গানার সোলজায়ার নিজের ট্যাকটিক্যাল ফর্মেশনেও বদল আনতে বাধ্য হবেন। খেলা হবে পুরোটাই রোনাল্ডো কেন্দ্রিক।
পল পোগবা, ব্রুনো ফার্নান্দেজের মত মিডফিল্ডে মার্শালদের জন্য আরও সুখবর! তাঁদের বাড়ানো বলই এবার জালে জড়ানোর জন্য সেরা লোক হাজির স্কোয়াডে।
এতদিন ইউনাইটেড প্রেসিং ফুটবলে অভ্যস্ত ছিল। তবে রোনাল্ডোর প্রেসিং ফুটবল অপছন্দ হওয়ায় অনেক বেশি ডাইরেক্ট ফুটবলে ভরসা রাখতে পারে ইউনাইটেড।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন