মাত্র ৫২ বছর বয়সে জীবনের ঘূর্ণিতে অকাল প্রয়াণ ঘটেছে শ্যেন কিথ ওয়ার্নের। সেই প্রয়াণে এখনও শোকের ঘোরে আচ্ছন্ন ক্রিকেট বিশ্ব। তাইল্যান্ডের পুলিশ আগেই জানিয়ে দিয়েছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যু হয়েছে কিংবদন্তি স্পিনারের। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পুলিশের দাবিকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।
তবে জানা যাচ্ছে স্পিন মাস্টার চরম লিকুইড ডায়েটে ছিলেন। যাতে শরীরের বাড়তি মেদ ঝরিয়ে দারুণ শ্যেপে আসতে পারেন। কয়েকদিন আগেই ওয়ার্ন নিজের টুইটার থেকে নিজের খালি গায়ে ছবি পোস্ট করেন। পেশীবহুল সেই ছবি পোস্ট করে টুইটারে তিনি লেখেন, "মেদ জড়ানোর অপারেশন শুরু হয়ে গিয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বছরের জুলাইয়ের মধ্যে নিখুঁত শ্যেপে আসাই আপাতত লক্ষ্য।" এর আগেও একাধিকবার লিকুইড ডায়েট করে মেদ বর্জন করেছেন কিংবদন্তি। এবারেও সেরকম পরিকল্পনা ছিল তাঁর।
আরও পড়ুন: মৃত্যুর আগে ওয়ার্নের শেষ ছবি এটাই! প্রকাশ করে দিলেন প্রাণের বন্ধু, দেখে নিন
মৃত্যুর সময় তিনি বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে তাইল্যান্ডে ছিলেন। কো সামুইয়ের ভিলায় নিজের রুমে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। এরপরে তাঁর বন্ধুরা সিপিআর প্রয়োগ করেও বাঁচাতে পারেননি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় স্পিন নক্ষত্রকে।
ওয়ার্নের দীর্ঘদিনের ম্যানেজার জেমস এরস্কিন জানিয়েছেন, নিজের পূর্ণ ফিটনেস ফিরে পাওয়ার জন্য ওয়ার্ন লিকুইড ডায়েট চালু করেন। তিনি আরও বলেছেন, ১৪ দিনের লিকুইড ডায়েটে ছিলেন তিনি। এর মধ্যে তরল ছাড়া কোনও কঠিন খাদ্যবস্তু গৃহন5 করছিলেন না তিনি। একাধিক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে এরকম চূড়ান্ত ডায়েটের সঙ্গেই যথেষ্ট ফিটনেস ট্রেনিং করছিলেন তিনি। "ও এরকম হাস্যকর ডায়েট প্ল্যান করেছিল। একটা ফেজ শেষ-ও করে। যেখানে ও স্রেফ লিকুইড খেয়ে ১৪-১৫ দিন কাটাত। এর আগেও তিন-চারবার এরকম ডায়েট ও করেছিল।
"ও হয় পুরোপুরি ডায়েট অনুশাসন মেনে চলত, অথবা কিছুই করত না। ও একসময় হোয়াইট বানস, বাটার, লাসানেতে ডুবে থাকত, না হলে জুস খেয়ে দিন যাপন করত। সারা জীবন-ই ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে স্মোক করে গিয়েছে। আমার মনে হয়, ও ম্যাসিভ হার্ট এটাকের শিকার হয়েছিল। এরকমই কিছু একটা ঘটেছিল।" নিউজ.কম.এইউ-কে জানিয়েছেন এরস্কিন।
আরও পড়ুন: ওয়ার্ন মোটেই গ্রেটেস্ট নয়! কিংবদন্তির মৃত্যুর আবহে বিষ্ফোরক মন্তব্যে তীব্র রোষে সানি
কী এই লিকুইড ডায়েট? আসলে শরীরে চাহিদার তুলনায় কম ক্যালোরি গ্রহণ করে কৃত্রিম অভাব তৈরি করা হয়। যাতে বাড়তি ক্যালোরির জন্য শরীরের জমানো ফ্যাট বার্ন করে যোগান দেওয়া হয়। লিকুইড ডায়েটে শরীরে প্রয়োজনের থেকেও প্রোটিন এবং ফ্যাটের যোগান কম দেওয়া হয়। বিভিন্ন জুসের মাধ্যমে ভিটামিনস এবং মিনারেলস অতিরিক্ত মাত্রায় নেওয়া হয়। ফাইবার-ও একদম কম গ্রহণ করতে হয়।
যদিও বিশেষজ্ঞদের ধারণা এই লিকুইড ডায়েট শরীরে সমস্ত পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে না। তাই এরকম প্ল্যানিংয়ের থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। দীর্ঘদিনের ভিত্তিতে এরকম ডায়েট ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে আমাদের। বলা হয়েছে, অতিরিক্ত লিকুইড ডায়েটিংয়ে মহিলাদের ক্ষেত্রে রক্তাল্পতা এবং পেশির ক্ষয় ধরতে থাকে। শরীরের সমস্ত প্রত্যঙ্গকে কার্যক্ষমতার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়।
লিকুইড ডায়েটিংয়ে মাথা ব্যথা, ডায়রিয়া, অত্যধিক দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্যর মত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, ডায়েটিংয়ে ভারসাম্যযুক্ত খাবার, ফল-শাকসবজি-শস্য জাতীয় খাবার, বিনস, বাদাম, ডাল জাতীয় দ্রব্য রাখতেই হবে পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য।
আরও পড়ুন: মেঝে, বালিশ, তোয়ালেতে চাপ চাপ রক্ত! ওয়ার্নের মৃত্যু রহস্যে ভয়ঙ্কর ঘটনায় ইঙ্গিত
এর আগে শ্যেন ওয়ার্ন জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল। দু-বার প্রতিষেধক নেওয়া সত্ত্বেও ওয়ার্ন গত বছরের অগাস্টে করোনা আক্রান্ত হন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, "এমনটা নয় যে আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল বা সেরকম কিছু। এটা আসলে একটা বিশেষ ভেন্টিলেটর ছিল। যাতে আমি ট্রায়াল দিচ্ছিল। কোভিড যাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব না ফেলতে পারে, সেই জন্যই স্পেশ্যাল ভেন্টিলেটরে ছিলাম।"