বোর্ড সভাপতি হিসেবে হয়ত আর দেখা যাবে না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সুপ্রিমকোর্টের রায়ে স্বস্তির মেয়াদ বাড়লেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে যে বোর্ডের মসনদ থেকে সরতে হবে, তা অনেকটাই নিশ্চিত। ক্রিকেট মহলের খবর অনুযায়ী, জয় শাহ সচিব পদে বহাল থাকলেও হয়ত পদ আঁকড়ে থাকতে পারবেন না মহারাজ।
আর বোর্ডের মসনদ থেকে সৌরভের সরে যাওয়ার খবর প্রায় পাকা হয়ে যেতেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, তাহলে কি বিজেপিতে প্রকাশ্যে যোগদান না করার মাশুলই গুনতে হচ্ছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে।
আরও পড়ুন: সৌরভের পর জয় শাহ নন, BCCI প্রেসিডেন্ট হওয়ার মুখে বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি
গত দু-বছর ধরেই সৌরভের সঙ্গে বিজেপির সংস্রব একাধিকবার আলোচনায় উঠে এসেছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি শিবিরের মুখ হবেন বেহালার বিখ্যাত বাঁ-হাতি এমন জোর জল্পনা ছড়িয়েছিল। বলা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে ভোটে লড়বেন তিনি।
তবে এমন কোনও পদক্ষেপ করেননি তিনি। অমিত শাহের সৌরভের বাড়িতে সপার্ষদে নৈশভোজনে যাওয়া নিয়ে এখনও চর্চা চলে। বীরেন রায় রোডের বাড়িতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমন ঘিরে তোলপাড় পরে গিয়েছিল রাজ্য এবং দেশের রাজনীতিতে। এমনকি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর একাধিকবার অমিত শাহ ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন সৌরভের। এয়ারলিফট করে দিল্লিতে নিয়ে চিকিৎসার প্রস্তাবও দেন মোদি সরকারের দুই নম্বর।
আরও পড়ুন: মহিলা আম্পায়ারের সঙ্গে কি অসভ্যতা করেন পাঠান! বিষ্ফোরক রিপোর্ট অজি মিডিয়ায়
তবে বিজেপি ঘনিষ্ঠতার পাল্টা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন নিরন্তর। নবান্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণাতেই সিএবি কর্তা হিসাবে ক্রিকেট প্রশাসনের অলিন্দে ঢুকেছিলেন তিনি। তারপর কখনও নবান্নে, কখনও আবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মঞ্চে দেখা গিয়েছে সৌরভকে।
কিছুদিন আগেই রেড রোডে ইউনেস্কোর তরফে দুর্গাপুজোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্তির ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই ছিলেন মহারাজ। সেই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই এবার তাঁকে সরে যেতে হচ্ছে বোর্ডের গদি থেকে।
ক্রিকেট-রাজনৈতিক এই সমীকরণের ইঙ্গিত দিয়ে চলে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বিস্ফোরকভাবে এবিপি আনন্দ-কে বলে দিয়েছেন, ‘‘সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় BCCI-এর কোনও পদ পাচ্ছেন না বা প্রেসিডেন্ট থাকছেন না, এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখের বিষয়। বাঙালির আইকন সৌরভ। ওঁকে ওরা খুব চাপ দিচ্ছিল বিজেপি-তে যোগ দিতে। বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছিলেন অমিত শাহ। বোধহয় বিজেপি-তে যোগদান না করাতেই সৌরভকে কোনও পদ দেওয়া হল না। বাঙালির এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত।’’
আরও পড়ুন: প্রকাশ্যেই ছেলেকে রগড়ে দিলেন শাহ, ভ্যাবাচ্যাকা বোর্ড সচিব জয়! রইল ভিডিও
সিপিএমের শীর্ষস্থানীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও এই ইঙ্গিতের পক্ষেই এবিপি আনন্দ-কে জানিয়েছেন, "তৃণমূল এবং বিজেপি-র নেতা-নেত্রীরা চান সকলে তাঁদের বশবর্তী হয়ে থাকবেন। সৌরভরা খেলার মাঠে দায়িত্বে থাকবেন, ক্রীড়া প্রশাসনের দায়িত্ব নেবেন, সেটাই হওয়া উচিত। ফুটবলের ক্ষেত্রে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই মনোভাবই জানিয়েছে কোর্ট। খেলায়াড়রা পদ পাবেন না, শুধু রাজনীতিকদের মাতব্বরি চলবে, এটা হতে পারে না। দেখা যাক। হয়ত রাজনীতির খেলাতেই সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তেমনই আন্দাজ মিলছে।"
যদিও সুজন-সৌগতদের বিষ্ফোরক মন্তব্যকে আমল দিতে চাইছেন না রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তিনি পাল্টা এবিপি আনন্দ-কে বলেছেন, "কাউকে কোনও পদ পাইয়ে দিয়ে দলে শামিল করার রাজনীতি কখনও বিজেপি করেনি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো তারকা এত জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাঁর। দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওঁর কৃতিত্ব প্রশ্নাতীত। তাঁকে এই বিতর্কে টেনে আনায় আমার মনে হয় সমগ্র বাংলা এবং ক্রিকেট সমাজকে অপমান করা হচ্ছে। এই বিতর্ক দুর্ভাগ্যজনক, একেবারেই কাম্য নয়।’’
সৌরভের বোর্ড-সভাপতিত্ব থেকে অপসারণের বিষয়ে সরকারিভাবে এখনও কিছুই জানানো হয়নি। তবে মহারাজ সরে গেলে সেইসঙ্গে রাজনৈতিক কচকচানি যে বাড়বে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।