পানিপথের ছেলে নীরজ চোপড়ার কীর্তিতে গর্বিত গোটা দেশ। পুরুষদের জ্যাভেলিন বিভাগে সোনা ঐতিহাসিক সোনা জিতেছেন নীরজ চোপড়া। তার এই কৃতিত্বে গর্বিত সারা দেশ।
২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিক্সে অভিনব বিন্দ্রার পর অলিম্পিক্সের মঞ্চ থেকে দেশকে সোনা এনে দিলেন কোনও ক্রীড়াবিদ। পাশাপাশি স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টে এই প্রথম কোনও খেলোয়াড় দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে হলেন বিশ্বসেরা। কেরিয়ারের প্রথম অলিম্পিক্সে নেমেই জ্যাভলিনের ফাইনালের মঞ্চে ৮৭.৫৮ মিটার ছুড়ে ভারতের জন্য ঐতিহাসিক সোনা জিতলেন নীরজ।
আরও পড়ুন: অলিম্পিকের সময়েই মৃত্যু প্রিয় বোনের! দেশে ফিরেই বুকচেরা হাহাকার ভারতীয় তারকার
তবে এমন একজন আছেন যিনি নীরজের এই কৃতিত্বের অংশীদার হতেই পারেন। তিনি হলেন বিখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন দিনশো পারদিওয়ালার।
২০১৯ সালের মাঝামাঝি কনুইতে মারাত্মক ভাবে চোট পান নীরজ। প্রয়োজন হয় অস্ত্রোপচারের। আর সেই সময় নীরজের চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন এই বিখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জেন।
আরও পড়ুন: বাবা বিছানায়! অলিম্পিক থেকে বহু দূরে দারোয়ানের কাজে নামলেন চ্যাম্পিয়ন বক্সার
নীরজের সোনা জয়ের বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন তিনি নিজেও। এব্যাপারে সবসময় তিনি নীরজকে সাহস এবং ভরসা জুগিয়ে গেছেন।চোপড়া ছাড়াও, পারদিওয়ালা অতীতে ভারতের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটার (যেমন পেসার জসপ্রীত বুমরা এবং ব্যাটসম্যান শ্রেয়স আইয়ার) এবং ক্রীড়াবিদদের চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন এবং তাঁদেরকেও সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলেন। তাঁর পেশেন্টের দীর্ঘ এই তালিকায় রয়েছেন পিভি সিন্ধু, সাইনা নেহওয়াল সহ একাধিক প্রথম সারির ক্রীড়াবিদ।
কিছুটা আবেগতাড়িত হয়েই পারদিওয়ালা টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে জানিয়েছেন, "সেদিনের সেই অস্ত্রপ্রচার সফল না হলে আজ নীরজের পক্ষে সোনা জয় কার্যত অসম্ভব ছিল।"
আরও পড়ুন: ‘সোনার ছেলে’র জন্য পুরস্কারের ছড়াছড়ি, কোটি কোটি টাকায় ভাসবেন নীরজ
২০১৯ সালে কনুইয়ে চোটের কারণে নীরজ দোহায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পারেননি। পারদিওয়ালা বলেন, ৩ মে,২০১৯ মুম্বইয়ের ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে নীরজের জটিল অস্ত্রোপ্রচার হয়। গুরুতর চোটের শিকার ছিলেন তিনি। কনুই পুরোপুরি লকড হয়ে গিয়েছিল। নীরজের পক্ষে সেই সময় খুব কঠিন ছিল। শুধু চিকিৎসা নয় নীরজের প্রয়োজন ছিল মানসিক শক্তিরও। সেই কারণে নীরজের অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ চারমাসের রিহ্যাব চলে। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন তিনি।
পারদিওয়ালার কথায় চোটের কারণে পেশির ভিতর টিস্যুগুলি ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভারতীয় কুস্তিগির গীতা এবং ববিতার সঙ্গে আলাপ থাকার সুবাদে বিখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন দিনশো পারদিওয়ালার সন্ধান পান নীরজ। অতীতে এই দুই বোনও হাঁটুর অস্ত্রোপচারের জন্য পারদিওয়ালার কাছে আসেন। এবং সফল অস্ত্রোপচারের পর আজ তাঁরা দুজনেই সম্পূর্ণ সুস্থ।
পারদিওয়ালা আরও জানিয়েছেন চোটের কারণে নীরাজের অলিম্পিকে যাওয়া প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে চোপড়াকে তিনি ফিরিয়ে আনেন যার কারণে আজ সারা দেশ গর্বিত।
নীরজের মনের জোরের কথা স্মরণ করে পারদিওয়ালা বলেন, "সেই কঠিন পরিস্থিতিতেও সোনা জয়ের বিষয়ে আত্মবিশাসী ছিলেন নীরজ।" এই প্রসঙ্গে অস্ত্রোপচারের পর নীরাজের একটি টুইট সামনে এসেছে। যেখানে নীরজ লিখেছেন, "জটিল অস্ত্রোপচার সফল, আগামী কয়েকমাসের মধ্যেই আরও দৃঢ়তার সঙ্গে কামব্যাক করবো।"
নীরজের সোনা জয়ের পর তাঁকে শুভেচ্ছা জানান পারদিওয়ালা। তিনি বলেন ৭ আগস্ট ভারতীয় খেলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
২০১৮ সালে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে সোনা জয়ের পর নীরজ চোটের কারণে ডায়মন্ড লিগ, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৯ সহ, একাধিক ইভেন্টে অংশ নিতে পারেননি। তবে টোকিও অলিম্পিকে তার সোনা জয় সেসব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন