এক সময় তাঁর নাম ছিল বাংলাদেশের মানুষের মুখে মুখে। ১ বলে ১ রানের কথা উঠলেই চলে আসত হাসিবুল হোসেন শান্তর নাম। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফির ফাইনালে সেই এক রানের কথা দেশবাসীর স্মৃতিতে আজও অমলিন! সেই হাসিবুল হোসেন শান্ত এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বয়স ভিত্তিক দলের নির্বাচক হিসেবে কাজ করছেন। এখন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে।
প্রথমবার বাংলাদেশ যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে। যে কোনও পর্যায়ের আইসিসি টুর্নামেন্ট তো বটেই বিশ্বকাপের ফাইনালেও প্রথমবার পা রেখেছে বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই গোটা দেশ দারুন রোমাঞ্চিত। সদ্য কৈশোর পেরোনো তরুণদের ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনাল লড়াই দেখতে মুখিয়ে রয়েছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। কী হবে পচেফস্ট্রুমে রবিবারের ফাইনালে? বারবার ভারতের কাছে ফাইনালে মার খাওয়া বাংলাদেশকে এবার পারবে তো? নানা কৌতুহল আর অপেক্ষায় বসে আছে গোটা বাংলাদেশ।
তবে যুব দলের সঙ্গে থাকা হাসিবুল হোসেন শান্ত দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুম থেকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে আশার কথাই শোনালেন। তাঁর সাফ কথা, এই বাংলাদেশ অদম্য। দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলার কারণে পারস্পারিক সমঝোতা তাদের মধ্যে অনেক বেশি। আর এটাই ফাইনালের আগে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুম থেকে ফোনে দেওয়া হাসিবুল হোসেন শান্ত দলের আশা, আকাঙ্খা, স্বপ্ন নিয়ে কথার ঝুলি খুলে বসলেন।
প্রশ্ন: প্রথমবার বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে। তা-ও আবার অপরাজিত অবস্থায়। এই সাফল্যের গোপন রহস্য কী?
হাসিবুল হোসেন শান্ত: এই দলটা দুই বছর ধরে একসঙ্গে অনুশীলন করছে, এক সঙ্গে খেলছে। এখানে ওদের মধ্যে ভাল একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। কোচ, ফিজিও এবং সাপোর্ট স্টাফরা তাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলো তারা মাঠে কাজে লাগিয়েছে। আর এটাই তাদের সাফল্য এনে দিয়েছে।
প্রশ্ন: ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু দেখছেন?
হাসিবুল হোসেন শান্ত: বাংলাদেশ দল যদি তাদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে তাহলে ফাইনালে ভারতকেও হারানো অসম্ভব কিছু নয়। আমাদের কিন্তু কোনও চাপ নেই। ফাইনালে আমরাই আন্ডারডগ। স্বাভাবিক খেলার চেষ্টা করতে হবে ক্রিকেটারদের। ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, বাংলাদেশ স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে অবশ্যই ভারতকে হারানো সম্ভব।
প্রশ্ন: ফাইনালে ভারতকে হারানোর জন্য নিশ্চয় টিম ম্যানেজমেন্ট ছক কষছেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রণকৌশল কেমন হতে পারে?
হাসিবুল হোসেন শান্ত: পরিকল্পনা তো হচ্ছেই। টিম মিটিং হওয়ার পরই আসলে পরিকল্পনাটা হবে। আপাতত শুধু ভিডিও সেশন হচ্ছে। এই বিষয়টি কোচ দায়িত্ব নিয়ে তত্ত্বাবধান করছেন।
প্রশ্ন: ভারতের কোন ক্রিকেটার বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে?
হাসিবুল হোসেন শান্ত: কোনও একজন বিশেষ ক্রিকেটার নয়, গোটা দল নিয়েই আমরা ভাবছি। ভারতের ব্যাটসম্যান-বোলারদের সামনে কীভাবে আরও পারফরম্যান্স মেলে ধরা যায়, তা নিয়ে প্রতিমুহূর্তে আলোচনা হচ্ছে। ওদের লেগ স্পিনার আছে, ফাস্ট বোলাররাও সমীহ জাগানোর মতো। পুরো দলটাই হেভিওয়েট।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠায় বাংলাদেশে অন্যরকম উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। ফাইনাল ঘিরে খানিকটা প্রত্যাশাও বেড়ে গেছে। এটা কী বাড়তি চাপ তৈরি করছে?
হাসিবুল হোসেন শান্ত: না। আমাদের টার্গেট ছিল সেমিফাইনাল অবধি পৌঁছানো। সেমিফাইনালটা আমরা পেরিয়ে এসেছি। এখানে বাড়তি চাপের কিছু দেখছি না। ভালো ক্রিকেট খেললে আমরা অবশ্যই জিতব।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইতালি থেকে যুব দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। নিশ্চয় ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে ফাইনালের আপডেটও তিনি রাখবেন। দলের ভিতরও নিশ্চয় খবরটা চলে গিয়েছে।
হাসিবুল হোসেন শান্ত: সত্যি কথা বলতে, ক্রিকেটাররা আপাতত এসব নিয়ে ভাবছে না। তারা বারবার ভারতের কাছে হেরে গিয়েছে সাম্প্রতিক অতীতে। ইংল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ, এশিয়া কাপের ফাইনালে হেরেছে। সে কারণেই তারা আরও মরিয়া। যেভাবেই হোক ভারতকে হারানোই আপাতত পাখির চোখ। এবার তাদের মধ্যে একটা জেদ দেখতে পাচ্ছি। এটা কিন্তু ভাল লক্ষণ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
https://t.me/iebangla