যুবরাজ সিং, ভারতের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। সোমবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সন্ন্য়াস নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন এই ফ্ল্যামবয়েন্ট স্টাইলিশ বাঁ-হাতি ক্রিকেটার। দীর্ঘ ১৯ বছরের কেরিয়ারে ইতি টানলেন দেশের বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার। দেশের হয়ে ৪০টি টেস্ট ও ৩০৪টি ওয়ান-ডে ও ৫৮টি টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন পাঞ্জাব পুত্তর। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা বেছে নিল যুবরাজের সেরা ১০টি ইনিংস। দেখুন আপনিও একমত কি না আমাদের সঙ্গে।
১) অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮৪ (নাইরোবি, ২০০০): কেরিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ান-ডে ও প্রথম আন্তর্জাতিক ইনিংস ছিল এটা। যুবরাজকে খেলতে হয়েছিল গ্লেন ম্য়াকগ্রা, ব্রেট লি এবং জেসন গিলেসপির ভয়ঙ্কর অজি বোলিংয়ের বিরুদ্ধে। নিরাশ করেননি যুবরাজ। সেদিনই তাঁর জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন ৮০ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলে। যুবরাজের ব্যাটে ভর করেই অজি ফাঁড়া কাটিয়েছিল ভারত। পঞ্চাশ ওভারের ফর্ম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে টানা সাত ম্যাচ হারের পর জয়ের মুখ দেখেছিল টিম ইন্ডিয়া।
আরও পড়ুন: ক্রিকেটকে গুডবাই বললেন যুবরাজ
২) ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬৯ (লর্ডস, ২০০২): ঐতিহাসিক ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনাল। সেদিন যুবরাজ ভারতীয় দলকে বার্তা দিয়েছিলেন যে, আগামী কয়েক বছর তিনি ওয়ান-ডে ক্রিকেটে রাজত্ব করতে চলেছেন। ইংল্যান্ডের ৩২৬ রান তাড়া করতে নেমে ভারত ২৪ ওভারে ১৪৬ রান তুলেছিল। প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছিলেন বীরেন্দ্র শেহওয়াগ, শচীন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড় এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের মতো স্টার ব্যাটসম্যানরা। ঠিক তখনই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে নামেন যুবি। কাইফের সঙ্গে জুটি বেঁধে ১০৬ বলে ১২১ রান তুলেছিলেন স্কোরবোর্ডে। তিনি করেছিলেন ৬৯ রান।
৩) অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৩৯ (সিডনি, ২০০৪): যুবরাজ ব্যাটিং অর্ডারে এগিয়ে এনেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। পাঁচে ব্যাট করতে নেমেছিলেন তিনি। ১২২ বলের ১৩৯ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন দুরন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। পঞ্চম উইকেটে ২১৩ রানের পার্টনারশিপ করেছিলেন তিনি।
৪) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১০৭ (করাচি, ২০০৬): কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের কোচিংয়ে এমএস ধোনির পাশাপাশি ভারত আরও একজন ম্য়াচ উইনারকে পেয়ে গিয়েছিল। অবশ্যই নামটা যুবরাজ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৮৭ রান তাড়া করতে নেমে ৯৩ বলে ১০৭ রানে অপরাজিত থাকেন যুবরাজ। ভারত ৪-১ সিরিজ ছিনিয়ে এনেছিল চির প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: বিদায়লগ্নে কী বললেন বিশ্বকাপের নায়ক?
৫) ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৩৮ (রাজকোট, ২০০৮): গৌতম গম্ভীর আর বীরেন্দ্রে শেহওয়াগ শুরুতেই একটা মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন ভারতকে। সেখানে দাঁড়িয়েই যুবরাজ ব্রিটিশ বোলারদের শাসন করেছিলেন। ৭৮ বলে ১৩৮ রান করেছিলেন তিনি। ১৬টি চারে সুবাদে ১০০ রান করেন যুবি। তারপর ছয় মেরে বল বাউন্ডারি বাইরের ফেলেছিলেন। ভারত ৩৮৭ রান তুলেছিল যুবির ব্যাটে।
৬) অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৫৭ (আহমেদাবাদ, ২০১১): বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নামার আগে হেড-টু-হেডে অস্ট্রেলিয়া ৭-২ তে এগিয়ে ছিল ভারতের বিরুদ্ধে। এই ম্য়াচে ২৬১ রান তাড়া করতে নেমে ৩৮ নম্বর ওভারে ভারত ১৮৭ রানে দলের অর্ধেক ব্যাটসম্য়ানকে হারিয়ে ফেলেছিল। যুবরাজ আর সুরেশ রায়না স্নায়ুর পরীক্ষা দিয়ে ৪৮ ওভারে ভারতকে জিতিয়ে দিয়েছিলেন। ব্রেট লি-কে কভার ড্রাইভ মেরে ভারতকে জেতান যুবি। এই দৃশ্য আজও টাটকা অনেক ভারতীয়র মনে।
৭) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৬৯ (বেঙ্গালুরু, ২০০৭): যুবরাজের টেস্ট কেরিয়ার ওয়ান-ডে'র মতো মসৃণ ছিল না কখনই। প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়ার জন্য় প্রচুর লড়তে হতো তাঁকে। কিন্তু সেবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী ১০০ রানের ইনিংস খেলেন যুবি। সৌরভের সঙ্গে জুটি বেঁধে ২০০ রানের পার্টনারশিপ করেন তিনি। ভারত ৬২৬ রান তুলেছিল স্কোরবোর্ডে। ম্যাচটি ড্র হয়ে যায়। কিন্তু ভারত ১-০ সিরিজ জিতে নিয়েছিল।
আরও পড়ুন: যুবিকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলল আইসিসি, টুইটারে ক্রিকেটারদের শুভেচ্ছার বন্যা
৮) ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৮৫ (চেন্নাই, ২০০৮): শেহওয়াগ এবং শচীন ইতিমধ্যেই সংবাদের শিরোনামে এসে গিয়েছিলেন ব্যাট চালিয়ে। যুবরাজও অত্যন্ত কার্যকরী ৮৫ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে জিতিয়েছিলেন। ব্রিটিশ বোলাররা ক্রমাগত তাঁকে তাতিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু যুবরাজ ঠান্ডা মাথায় নিজের কাজটা করে এসেছিলেন।
৯) ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫৮, (ডারবান ২০০৭): সম্ভবত যুবির কেরিয়ারে সবচেয়ে স্মরণীয় ইনিংস। যা আজও ভোলেননি ক্রিকেট ফ্যানেরা। ১৭ নম্বর ওভারে ব্যাট করতে নেমে যুবরাজ ১২ বলে ৫০ রান করেছিলেন। টি-২০ ক্রিকেটে দ্রুততম ফিফটির নজির গড়েন যুবি। এই ম্যাচেই যুবি ইতিহাস লিখেছিলেন ব্রিটিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছ’বলে ছ’ছক্কা হাঁকান তিনি। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণের প্রথম বিশ্বকাপে ভারতকে জেতানোর পিছনেও অবদান রাখেননি যুবি।
১০) অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৭০, (ডারবান ২০০৭): এই টি-২০ বিশ্বকাপেই যুবরাজ চোটের জন্য় সুপার এইটের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলতে পারেননি। কিন্তু সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফিরে আসেন যুবি। আট ওভারের শেষে চার নম্বরে ব্যাট করতে নামেন তিনি। ৩০ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলে অজিদের কফিনবন্দি করে দিয়েছিলেন তিনি।