তালিকার শীর্ষে দীর্ঘদিন ধরেই অধিষ্ঠিত শাওমি, এবং তারপর আসছে ভিভো, ওপো, রিয়ালমি-র মতো ব্র্যান্ড। সব মিলিয়ে বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ এই ব্র্যান্ডগুলির দখলে।
তালিকার শীর্ষে দীর্ঘদিন ধরেই অধিষ্ঠিত শাওমি, এবং তারপর আসছে ভিভো, ওপো, রিয়ালমি-র মতো ব্র্যান্ড। সব মিলিয়ে বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ এই ব্র্যান্ডগুলির দখলে।
ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনার পারদ যেদিন থেকে চড়তে শুরু করেছে, সেদিন থেকেই বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় রব উঠেছে, স্মার্টফোন সমেত চিনে তৈরি সমস্ত সামগ্রী বয়কট করতে হবে। তবে এটা বলা যত সহজ, করা তত সহজ নয়। ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, এই চিন-বিরোধী আবেগ কয়েক সপ্তাহের বেশি টিকিয়ে রাখা যাবে না, কারণ এই মুহূর্তে গ্রাহকদের কাছে আর কোনও বিকল্প নেই।
Advertisment
ক্যানালিস সংস্থার রিসার্চ ডিরেক্টর রুষভ দোশি ইন্ডিয়ান একপ্রেসকে ফোনে জানান, "স্বল্প মেয়াদে কোনও প্রভাব পড়বে না, কারণ লোকে ফোন কিনবেই, এবং বাজারের অধিকাংশ ফোনই চাইনিজ ফোন।" তিনি আরও বলছেন যে স্যামসাং বাদে বাজারে আর প্রায় কোনও ব্র্যান্ডই নেই যা দামের নিরিখে চিনা ফোনের মোকাবিলা করতে সক্ষম। এবং স্যামসাং-কে হিসেবের মধ্যে রাখলেও 'পয়সা উশুলের' ক্ষেত্রে এগিয়ে চিনা ফোনগুলিই।
Advertisment
চিন-বিরোধী আবেগ ভারতের বাজারে নতুন কিছু নয়। তা সত্ত্বেও বাজারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চিনা ফোন প্রস্তুতকারকরা। অবস্থা এমনই যে ভারতের প্রথম পাঁচটি মোবাইল ফোন ব্র্যান্ডের তালিকায় একমাত্র স্যামসাং-এর কোনও 'চিন যোগ' নেই। তালিকার শীর্ষে দীর্ঘদিন ধরেই অধিষ্ঠিত শাওমি, এবং তারপর আসছে ভিভো, ওপো, রিয়ালমি-র মতো ব্র্যান্ড। সব মিলিয়ে বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ এই ব্র্যান্ডগুলির দখলে।
আইডিসি ইন্ডিয়া-র রিসার্চ ডিরেক্টর নভকেন্দর সিং এ বিষয়ে সহমত যে ভারতীয় উপভোক্তাদের কাছে চিনা কোম্পানির ফোন কেনা ছাড়া এই মুহূর্তে কোনও বিকল্প নেই। তাঁর ব্যাখ্যা, "গ্রাহকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে, খেলাটা পুরোপুরি মূল্য-ভিত্তিক, এবং চিনা স্মার্টফোন সংস্থাগুলি খুব সফলভাবে এই চাহিদা মিটিয়েছে।"
সীমান্ত সংঘর্ষের ফলে চিনা স্মার্টফোন ভারতে যদি বয়কট করা হয়ও, তার ফলে শাওমি, ওপো, বা রিয়েলমি ফোনের চাহিদা কমে যাবে, এমনটা মনে করেন না সিং। "আগামী কয়েক সপ্তাহে আদৌ কিছু প্রভাব পড়লে তাকে ভুলক্রমে বয়কটের প্রভাব বলা হতে পারে। আমার ধারণা স্টকের ঘাটতি এবং বাজারে এর আগেই যে চাহিদার অভাব দেখা দিয়েছিল, তার ফলে এমনিই কিছুটা সমস্যায় পড়েছে এইসব সংস্থা," বলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষস্থানীয় ফোন বিক্রেতার কথায়, চিন-বিরোধী মানসিকতার কোনও প্রভাব এখন পর্যন্ত চিনা ব্র্যান্ডের ফোনের ওপর পড়ে নি। একই কথা বলছেন দক্ষিণ ভারতের এক স্মার্টফোন রিটেইল ব্যবসার শীর্ষ কর্তাও - এই সপ্তাহে একটুও কমে নি চিনা স্মার্টফোনের বিক্রি।
সম্প্রতি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারত। বর্তমানে দেশে চালু রয়েছে দুশোরও বেশি মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী ইউনিট। কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স তথা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের কথা অনুযায়ী, ২০২০ আর্থিক বর্ষে ৩.৬ কোটি স্মার্টফোন রফতানি করে ভারত, যেখানে ২০১৯-এ এই সংখ্যা ছিল ১.৭ কোটি।
বিপুল সম্ভাবনার দৌলতে চিনা সংস্থাগুলির কাছে এখনও আকর্ষণীয় ভারতের বাজার। ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল, উৎপাদন ইউনিট, এবং রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট কেন্দ্রের মাধ্যমে এদেশে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করেছে শাওমি, ভিভো, বা ওপো-র মতো সংস্থা। কারো কারো নিজস্ব উৎপাদন ইউনিট রয়েছে, আবার অন্যরা উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে দেশে স্মার্টফোন একত্রিত করছে। চিনা সংস্থাকে বয়কট করলে দেশের সমগ্র স্মার্টফোন শিল্পে সর্বনাশ নেমে আসতে পারে, শুধু যে এই ক্ষেত্রে ধ্বস নামবে তাই নয়, যাবে হাজার হাজার চাকরিও।
অবশ্য একথাও শোনা যাচ্ছে যে চিনা ব্র্যান্ড যাঁরা কিনতে চাইছেন না, তাঁদের জন্য এগিয়ে আসতে পারে কিছু ভারতীয় ব্র্যান্ড। গুরগাঁওয়ের মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থা মাইক্রোম্যাক্স ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে আগামী দিনে বাজারে কিছু নতুন স্মার্টফোনের মডেল আনতে চলেছে তারা। রিটেইল ক্ষেত্রের এক সূত্রের বক্তব্য, সাতটি নতুন মডেল বাজারে ছাড়তে চলেছে মাইক্রোম্যাক্স। সাধ্যের দামে উচ্চমানের মডেল সমেত চিনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলির প্রবেশ ঘটার আগে ভারতের বাজারে একসময় ফুলেফেঁপে উঠেছিল মাইক্রোম্যাক্স-এর ব্যবসা।
একই পরিণতি হয় ইনটেক্স এবং লাভা-র মতো ভারতীয় ব্র্যান্ডেরও, যদিও এখনও দেশের ছোট শহরগুলিতে ভালোই ব্যবসা করছে লাভা। তবে দোশি যেমন বলছেন, "লাভা-র ক্ষেত্রেও মূল ডিভাইসের প্রস্তুতকারক কিন্তু চিনে বসে রয়েছে। এমনকি ফোনের ডিজাইন পর্যন্ত সেখানে করা হয়। এখানে হয়তো স্থানীয় ইউনিট আছে যেখানে ফোনের যন্ত্রাংশ একত্রিত করা হয়, কিন্তু শেষমেশ সবটাই চাইনিজ।" তিনি আরও বলেন যে এই সুযোগে উঠে আসা সহজ হবে না কোনও ভারতীয় ব্র্যান্ডের পক্ষে, যেহেতু চিনা মোবাইল প্রস্তুতকারকদের সমতুল 'পয়সা উশুল' করা মুশকিল হবে।
সিং স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছেন, "আমাদের কাছে কিস্যু নেই... মাইক্রোম্যাক্স, ইন্টেক্স, বা লাভা হঠাৎ করে দুর্দান্ত ডিভাইস বানাতে শুরু করবে, যেগুলির প্রত্যেকটিতে গ্রাহকের পয়সাও উশুল হবে, এমনটা আশা করি না।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা!
একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন