ভারতীয় গাড়ির শিল্পে নস্টালজিয়ার আরেক নাম 'ন্যানো'। এই গাড়ি সাক্ষী থেকেছে বহু ইতিহাসের। গাড়ি নির্মাতা সংস্থা টাটা মোটর্স এই গাড়ি নির্মাণের জন্য প্রথম সিঙ্গুরকেই বেছে নেয়। কিন্তু রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে ন্যানো কারখানা গুজরাটে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয় যা নিয়ে আফসোস করতে শোনা গিয়েছিল খোদ রতন টাটাকে। বর্তমানে গাড়িটির উৎপাদন বন্ধ হলেও এখনও মানুষের মনে এখন ন্যানোর সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। ভারতের সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের গাড়ি হিসাবে জায়গা করে নিয়েছিল ন্যানো।
কিন্তু কী ভাবে তৈরি হল ন্যানো’র ভাবনা? এতো সস্তায় কী ভাবে মধ্যবিত্তের গাড়ির স্বপ্ন পূরণ করল টাটা মোটর্স? এ সব প্রশ্নের উত্তর এতদিন অধরা ছিল। এবার সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্বয়ং টাটা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রতন টাটা। তিনি তার ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেলে তুলে ধরেন ন্যানো সম্পর্কে আজানা কাহিনী। রতন টাটা তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে একটি আবেগঘন পোস্ট শেয়ার করেন। যেখানে তিনি বর্ণনা করেন কী ভাবে এই গাড়ি তৈরি করার জন্য তিনি অনুপ্রেরিত হয়েছিলেন। এবং সেই ঘটনা সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে তিনি ভাগ করে নেন।
আরও পড়ুন: দরজা আগলে দাঁড়িয়ে চিতা, বনকর্তার তোলা ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল
তাঁর কথায়, আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম সেই সমস্ত ভারতীয় পরিবারগুলিকে দেখে যারা প্রতিনিয়ত স্কুটারে চেপে যাতায়াত করতেন। কখনও বর্ষায় ভেজা পিচ্ছিল রাস্তায় যাওয়ার সময় স্কুটারে মা ও বাবার মাঝে ছোট্ট শিশুটির অবস্থা একেবারে ‘স্যান্ডুইচ’ হয়ে যেত। স্কুল অফ আর্কিটেকচারে থাকার দরুন আমি আমার অবসর সময়ে ভাবতাম কীভাবে ভারতীয় এই পরিবার গুলিকে আরামপ্রদ ভাবে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা যায়! সেই সময় ন্যানোর একটি ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করেছিলাম আমি। এই গাড়িতে কোনও জানলা বা দরজা ছিল না, ছিল কেবল একটি বগি। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এটি একটি সম্পূর্ণ গাড়ির মত হওয়া উচিত। আর তা থেকেই তৈরি স্বপ্নের ন্যানো। ৮৪ বছর বয়সী রতন টাটার কথায়, ‘ন্যানো দেশের আম-আদমির গাড়ি’। রতন টাটার এই আবেগঘন পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: দূরপাল্লার ট্রেনে এবার থেকে যুক্ত হল ‘বেবি বার্থ’, ভারতীয় রেলের নয়া ভাবনায় খুশি যাত্রীরা
উল্লেখ্য, গাড়িটি প্রথম ২০০৮ সালের অটো এক্সপোতে প্রদর্শিত করে টাটা মোটর্স। তারপর ২০০৯ সালের মার্চ মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়িটি বাজারে আসে। সেইসময় গাড়িটির বেস মডেলের প্রারম্ভিক মূল্য ছিল ১ লক্ষ টাকা। কিছু কারণে গাড়িটির দাম বাড়াতে চেয়েছিল সংস্থা কিন্তু রতন টাটা নিজেই আপত্তি তোলেন তাতে।
ধীরে ধীরে বেশ কিছু কারণে এই গাড়ির চাহিদা কমতে থাকে। শেষে ২০১৮ সালে গাড়িটির উৎপাদন বন্ধ করে দেয় টাটা মোটর্স। তবুও আজও মানুষের মনে এক আবেগের নাম টাটা ন্যানো।