2 arrested for murder of elderly woman in Jamalpur: বাড়ি-ভাড়া ছাড়লেও বিদ্যুৎ বিলের ২৪০০ টাকা মেটায়নি ভাড়াটিয়া অমিত বাগদি। সেই টাকা পরিষোধের জন্য ভাড়াটিয়াকে প্রতিনিয়ত তাগাদা করতেন বাড়িমালিক নীলাদ্রি সরকার। তাতেই বিরক্ত হয়ে বাড়িমালিককে খুনের পরিকল্পনা কষেন অমিত। এই কাজে সে তাঁর সহযোগী হয় কুবির গড়াই ওরফে রবি। তাঁরা ঘটিয়ে ফেলে উল্টো ঘটনা। বাড়িমালিক নীলাদ্রি সরকারকে খুন করতে গিয়ে অমিত-রবি খুন করে বসে তাঁর স্ত্রীকে। একপ্রকার কপালজোরে প্রাণে বাঁচেন নীলাদ্রিবাবু। ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের আবুজহাটীতে। বৃদ্ধা খুনের ঘটনায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশি তদন্তে। দুই খুনি অমিত বাগদি ও কুবির গড়াইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত বৃদ্ধার নাম মীরা সরকার। তাঁর বাড়ি জামালপুরের আবুজহাটীর কায়স্থ পাড়ায়। বৃদ্ধার স্বামী নীলাদ্রী সরকার বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। নিঃসন্তান এই দম্পতির বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন বীরভূমের মল্লারপুরের বাসিন্দা অমিত বাগদি। তিনি আবুজহাটী এলাকার একটি চটকলে কাজ করতেন। সেই চটকলে কাজ করার সুবাদে অমিতের সঙ্গে পরিচয় হয় কুবির গড়াই ওরফে রবির। এই কুবিরও বীরভূমের মল্লারপুরের বাসিন্দা। নীলাদ্রিবাবুর বাড়ি ভাড়া পেতে অমিতের সঙ্গে নীলাদ্রিবাবুর যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিল কুবির। গত সাত দিন আগে বাড়ি ভাড়ার টাকা মিটিয়ে দিয়ে অমিত বাগদি বাড়ি ছেড়ে দেয়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিলের ২৪০০ টাকা দেননি তিনি।
এরপর কয়েকদিন কাটতে না কাটতে বৃহস্পতিবার সকালে ঘর থেকে উদ্ধার হয় মীরা সরকারের রক্তাক্ত মৃতদেহ। একই ঘরে অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিলেন মীরা সরকারের স্বামী নীলাদ্রি সরকার। এই খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায় । মীরাদেবীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তে পাঠায়। নীলাদ্রি সরকারকে উদ্ধার করে পুলিশ জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসায় একটু সুস্থতা অনুভব করার পর নীলাদ্রিবাবুর করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খুনের মামলা রূজু করে তদন্তে নামে। যার নেতৃত্বে ছিলেন এসডিপিও বর্ধমান দক্ষিণ অভিষেক মণ্ডল।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: গুরুতর অসুস্থ পরিচালক সৃজিত মুখার্জি, ভর্তি ICU-তে, উদ্বিগ্ন পরিবার
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে ৮ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ দুই অভিযুক্ত অমিত বাগদি ও কুবির গড়াইকে গ্রেফতার করে। বীরভূমের মল্লারপুর থেকে অমিতকে পাকড়াও করে পুলিশ। আর কুবির গড়াইকে পুলিশ ধরে জামালপুর থানা এলাকা থেকে। জেরার দুই ধৃত বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনার কথা স্বীকার করে নেয়।
খুনের মোটিভ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বাড়ি ভাড়া ছেড়ে দিলেও বিদ্যুতের বিলের ২৪০০ টাকা বাড়িমালিক নীলাদ্রী সরকারকে দেননি অমিত বাগদি। সেই টাকা পরিষোধের জন্য অমিতকে বারবার ফোন করছিলেন নীলাদ্রি সরকার। তাতেই বিরক্ত হয়ে বাড়িওয়ালাকে খুনের পরিকল্পনা করে অমিত বাগদি।
আরও পড়ুন- Dilip Ghosh Marriage: 'অনেকে ভাবছেন ইকো পার্কে হাঁটলেই বুঝি বিয়ে হয়!', রিঙ্কুর মন জিততে দিলীপ কী করেছেন জানেন?
সেই মতো বুধবার রাতেই মল্লারপুর থেকে ট্রেনে করে জামালপুরের জৌগ্রাম স্টেশনে আসেন অমিত। সেখানে অমিত ও কুবির অপেক্ষা করতে থাকে। ভাড়াটিয়া থাকার দরুন অমিত জানতো নীলাদ্রিবাবু প্রতিদিন রাত ৩ টে সাড়ে ৩টে নাগাদ বাড়ির বাইরে বেরোতেন বাথরুমে যাওয়ার জন্য। রাত ৩ টে নাগাদ কুবিরকে সাথে নিয়ে নীলাদ্রিবাবুর বাড়িতে পৌঁছায় অমিত। পাঁচিল টপকে নীলাদ্রি সরকারের বাড়ির ভিতরে ঢুকে অপেক্ষা করতে থাকে। রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ নীলাদ্রি সরকার বাইরে বের হতেই তাঁর উপর চড়াও হয় অমিত ও কুবির । তারা ধাক্কা দিলে নীলাদ্রিবাবু পড়ে গিয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়ে যান।।
মীরাদেবী তাঁর স্বামীর এমন অবস্থা দেখে চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন মুগুর দিয়ে মীরাদেবীর মাথায় বেশ কয়েকবার আঘাত করে অমিত ও রবি। মুগুরের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মীরা সরকারের মৃত্যু হয়। তখনও অচৈতন্য অবস্থার পড়ে থাকা নীলাদ্রী ববু মারা গেছেন মনে করে অমিত ও কুবির ওই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসায় একটু সুস্থ হয়ে অমিত বাগদি ও কুবির গড়াইয়ের এই কীর্তি নীলাদ্রি সরকার পুলিশের কাছে ফাঁস করে দেন। পুলিশ অমিত ও কুবিরকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার তাদের বর্ধমান আদালতে পেশ করে পুলিশ নিজেদের হেপাজতে নিয়েছে।