করোনা পরিস্থিতিতে গত দু'বছর ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ হয়নি। এবার এক মাস আগেই শহিদ দিবসের প্রস্তুতি শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এর আগে দেখা গিয়েছে ২০১৯-এর ২১ জুলাইয়ের সভায় উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহল থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভিড় তুলনামূলকভাবে কম ছিল। কারণ হিসাবে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ছিল, ২০১৮-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ওই দুই এলাকাতেই ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি, একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তারই প্রভাব পড়েছিল পরের বছর তৃণমূলের শহিদ দিবসে।
যদিও পরবর্তীতে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে অনেকটাই সাফল্যের মুখ দেখেছে ঘাসফুল শিবির। তুলনামূলকভাবে উত্তরের জেলাগুলি ধরে রাখতে পেরেছে বিজেপি। আদিবাসী সমর্থনে বিজেপির দ্রৌপদী মুর্মু-বানকে কীভাবে প্রতিরোধ করবে তৃণমূল, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এবার শহিদ দিবসের প্রস্তুতি হিসেবে সব থেকে বড় সভা হয়েছে আলিপুরদুয়ারে। তাছাড়া রাজ্যের অন্যত্র বড় সমাবেশ সেভাবে হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছেন। তাছাড়া এই সময়ে পাহাড়ে তিন দিন প্রশাসনিক কাজে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফুচকা-মোমো বানিয়ে সরাসরি জনসংযোগও করেছেন মমতা। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে হারানো জমি পুনরুদ্ধার করাই তৃণমূল কংগ্রেসের বড় লক্ষ্য তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই রাজনৈতিক মহলের।
ইতিমধ্যে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক পরিদর্শন করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, সেখানে প্রায় ২০ হাজার মানুষের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মূলত, শহিদ দিবসে যোগ দিতে আসা উত্তরবঙ্গের কর্মী-সমর্থকরাই এখানে থাকবেন। আলিপুরদুয়ারে গিয়ে অভিষেক জোর গলায় বলে এসেছেন উত্তরবঙ্গ বলে আলাদা কিছু নেই, সবটাই পশ্চিমবঙ্গ।
আরও পড়ুন- ‘তৃণমূল আদিবাসী বিরোধী’, মমতাকে প্যাঁচে ফেলতে ‘মস্ত’ ফন্দি এঁটেছেন শুভেন্দু
রাজনৈতিক মহলের মতে, এবারে শহিদ দিবসে উত্তরবঙ্গ থেকে হাজার হাজার দলীয় কর্মী-সমর্থকদের কলকাতার ধর্মতলায় নিয়ে আসাই টার্গেট তৃণমূলের। ২০১৯-এর শহিদ দিবসের ভিড়ের ছবিতে সেই উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়নি। ইতিমধ্যে পুরসভা নির্বাচন, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচন, পাহাড়ের জিটিএ নির্বাচনে ভাল ফল করেছে ঘাসফুল শিবির। এবার লক্ষ্য ২০২৪-এর লোকসভার ভোট।
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও কারচুপির আশঙ্কা, তৃণমূলকে তুলোধনা শুভেন্দুর
শহিদ স্মরণের দিন দলের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি জেলা কমিটির ঘোষণাও ঝুলে রয়েছে। দলের সামগ্রিক পরিকল্পনা রচিত হয় ২১ জুলাইকে কেন্দ্র করেই। সেক্ষেত্রে দেখার বিষয়, রাজ্যের উত্তরের জেলাগুলির জন্য বিশেষ কোনও ঘোষণা হয় কিনা।
একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আদিবাসী মহিলা প্রার্থী দিয়ে এরাজ্যে মূলবাসীদের ভোটে আরও বেশি থাবা বসাতে মরিয়া বিজেপি। তৃণমূল আদিবাসী বিরোধী বলে পোস্টার ছেপে প্রচারও শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। এর মোকাবিলায় তৃণমূলনেত্রী কী নির্দেশ দেন সেদিকেও নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।