/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/17/puja-2025-09-17-09-38-48.jpg)
Durga Puja 2025: রায়বাড়ির দুর্গাপুজো। (ফাইল ছবি)
Durga Puja: তিন নাতনিকে দিয়ে শুরু হওয়া প্রথা মেনে আজও রায় বাড়ির গৃহবধূদের নামেই সংকল্প হয়। বহু ইতিহাস বহন করা কৃষ্ণনগর রায় বাড়ির পুজোতে আজও রয়েছে সেই আগের মতো উন্মাদনা। কৃষ্ণনগর রায়বাড়ির পুজো ২৭৫ বছরের পুরনো। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রর নাতনীদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল রায়বাড়ির দুর্গা পুজো।কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের তিন নাতনী মহাকালি, কালিকুমারি, নিত্যকালির বিয়ে হয়েছিল রায় বাড়িতে।
পলাশি যুদ্ধের আগেই রাজবাড়ির সমস্ত রীতি নীতি মেনে রায়বাড়িতে দুর্গা পুজোর সূচনা হয়ে গিয়েছিল। তাই ইতিহাসের অনেক ঘটনার সাক্ষী রায়বাড়ির পুজো। কৃষ্ণনগরে নদীয়া রাজবাড়ির সঙ্গে রায়বাড়ির সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সেই সূত্রে দুই বাড়ির মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের দ্বিতীয় পুত্র ভৈরবচন্দ্রের তিন কন্যার বিয়ে হয় রায় বাড়িতে। জানাগিয়েছে, পরে ১৭৫০ সালে ভৈরবচন্দ্রের স্ত্রী মহারানী ভবানীদেবীর উদ্যোগে রায় বাড়িতে প্রথম দুর্গা পুজো হয়। বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী বহন করা সেই রায়বাড়ির পুজোতে চিরাচরিত প্রথা মেনে আর্য অনার্য সংস্কৃতি মেলবন্ধনের কাদা খেলাও হত।
আরও পড়ুন- Kolkata weather Today: বিশ্বকর্মা পুজোয় অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা, পুজোর মুখে একটানা চলবে দুর্যোগ?
আজ আর কাদা খেলা হয় না। কালিকা পুরাণে এই কাদা খেলার কথা বলা আছে। পরবর্তী প্রজন্ম এ নিয়ে আগ্রহী না হওয়ার জন্য কয়েক বছর আগে কাদা খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে রায় বাড়ি সূত্রে জানাযায়। বহু আলোচিত এই পুজোর উল্টো রথের দিন পাটে ঘা দিয়ে শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। মহালয়ার দিন দেবীর গায়ে খড়ি দেওয়া হয়। দেবীর বাহন এখানে ঘোড়ামুখো সিংহ। দেবী এখানে বর্মে মোড়া যুদ্ধ বেশে সজ্জিত থাকেন।
রায়বাড়িতে কার্তিক, গণেশকে ধুতি পড়ানো হয়। কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী সহ দেবীর পেছনে অর্ধাকৃতি চালি থাকে। সেই আমলের বড় থামওয়ালা বিরাট বাড়ির সামনে থাকা দালানে রায় বাড়ির পুজো হয়। পুজোর দিনগুলিতে পরিবারের সকল জ্ঞাতি আত্মীয়-স্বজনরা দেশ বিদেশ থেকে বাড়ি চলে আসেন। পুজোর আনন্দ চেটেপুটে নেয়। এই সময় চলে একসঙ্গে খাওয়া, আড্ডাও।
কৃষ্ণনগরের নদিয়া রাজবাড়ির কামান দাগার শব্দ আসতেই সন্ধিপুজো হত৷ এখন আর কামান দাগা হয় না। তবে রায় বাড়ির সন্ধিপুজোতে ১০৮ টা করে পদ্ম ও প্রদীপ থাকে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে ছাগ বলি। তবে চাল কুমড়োর বলি হয়। এই সময় দর্শনার্থীদের ভিড় পুজো প্রাঙ্গণে উপচে পড়ে। দূর- দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ায়। ভক্তি ভরে প্রণাম করেন। মনস্কামনা পূর্ণ হলে পুজো দেন। পুজোর ক'টা দিন এক অদ্ভুত মাহাত্ম্য বিরাজ করে।
রায়বাড়ির প্রতিমা দেবী মূর্তির হয়। প্রতিমাকে মাটির সাজে সজ্জিত করা হয়। দেবীকে এখানে শাক্ত মতে পুজো করা হয়। ভোগে আমিষ থাকে। সপ্তমীর মধ্যরাতে দেবীকে অন্নপূর্ণা রূপে পুজো করা হয়। গৃহদেবতা অন্নপূর্ণা হওয়ার জন্যই দুর্গাকে এই রূপে মধ্যরাতে পুজোও করা হয়। ভোগ থেকে সমস্ত কিছুই আগের মতো রয়েছে। রায়বাড়ির প্রত্যেক দিনের ভোগে বিভিন্ন রকমে মাছ,ভাত খিচুড়ি, নানা ভাজা, মিষ্টি, পায়েস সহ একাধিক পদ থাকে। দশমীর দিন শীতল ভোগ হয়। পান্তা ভাত, কচু শাক, নানান রকমের ভাজা, ইলিশ মাছ থাকে।
দশমীতে এখন সিন্দুর খেলা হয়। এই সিন্দুর খেলা খুব জনপ্রিয় হয়েছে। পরে দেবীকে সূর্য অস্ত যাবার আগে রাজার দীঘিতে রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরীর পরে নিরঞ্জন দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে রায় বাড়ির ওঙ্কার রায় বলেন, 'আমাদের বাড়ির পুজো আগের মতোই হয়। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের তিন নাতনীর বিবাহ হয় রায় বাড়িতে। তাদের নামে পুজোতে সংকল্প শুরু হয়। পুরনো প্রথা মেনে রায় বাড়ির গৃহবধূদের নামেই আজও সংকল্প হয়।'
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us