Manteswar Incident: জন্মের তিন মাসের মধ্যেই নৃশংসতার বলি হল এক শিশুকন্যা। গলা টিপে শিশু কন্যাকে খুন করে নদীর জলে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শিশুটির বাবার বিরুদ্ধে। হন্যে হয়ে খড়ি নদীতে খোঁজ চালিয়ে পুলিশ ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দফতরের লোকজন বৃহস্পতিবার শিশু দিবসের দিন ওই শিশুকন্যার মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই ঘটনা নিয়ে এদিন ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের পানবড়োয়া গ্রামে। খুনি বাবা অবশ্য রেহাই পায়নি। শিশুকন্যাকে খুনের দায়ে পুলিশ শিশুটির বাবা জাসায় মূর্মূকে গ্রেফতার করেছে। তাকে এদিন কালনা মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
কালনা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও)রাকেশ চৌধুরি জানিয়েছেন,’অমানবিক ঘটনা। শিশুকন্যার মৃতদেহটি বৃহস্পতিবার খড়ি নদী থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। শিশুকন্যার বাবা জাসায় মুর্মু নিজের দোষ স্বীকার করেছে। তাকে গ্রেফতারর করে তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে ধৃতকে এদিন কালনা মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুকন্যার বাবা ও মা রোজমেরি হেমব্রম ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বাসিন্দা। তাঁরা পেশায় খেতমজুর। ধান কাটা ঝাড়ার কাজ করতে দিন ছয়েক আগে জাসায় মুর্মু মন্তেশ্বরের শুশুনিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পানবড়েয়া গ্রামে আসেন। সঙ্গে করে তিনি রশ্মি মারাণ্ডি নামে এক মহিলাকে আনেন। তাঁকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে পানবড়েয়া গ্রামে থাকছিল জাসায়। তবে জাসায় যেহেতূ বেশ কয়েক বছর ধরে পানবড়েয়া গ্রামে কাজে আসছেন তাই রশ্মি মারাণ্ডি যে তাঁর স্ত্রী নয় সেটা কারওর বুঝতে অসুবিধা হয়নি। পানবড়েয়া গ্রামে অন্য মহিলাকে নিয়ে স্বামীর থাকার কথা কোনওভাবে রোজমেরি জানতে পারেন। তারপরেই তিন মাসের শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার সাতসকালে ঝাড়খণ্ড থেকে সোজা মন্তেশ্বরের পানবড়েয়া গ্রামে চলে আসেন।
আরও পড়ুন অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার পয়সা নেই, অসুস্থ স্ত্রীকে নিজের টোটোয় চাপিয়ে কলকাতার হাসপাতালে রওনা প্রৌঢ়ের!
রোজমেরি পানবড়েয়া গ্রামে পৌছে তাঁর স্বামীকে অন্য মহিলার সঙ্গে থাকতে দেখে বেজায় চটে যান। তাঁদের মধ্যে অশান্তি চরমে ওঠে। তারই মধ্যে জাসায় তাঁর শিশুকন্যাকে আদর করার জন্য কাছে পেতে চায়। রোজমরি তখন সরল মনে তাঁর মেয়েকে দেন স্বামীর হাতে। মেয়েকে স্বামীর হাতে দিয়ে রোজমেরি প্রাত্যকৃত্য সারতে যায়। ফিরে এসে তিনি তাঁর মেয়েকে আর দেখতে পান না। তিনি স্বামীর কাছে তাঁর মেয়ের খোঁজ করেন। তখন শিশুকন্যার বিষয়ে স্বামী মুখে কুলুপ আঁটেন।
স্বামীর এমন আচরণের দেখে সন্দেহ তৈরি হয় রোজমেরির মনে। তিনি গোটা ঘটনার কথা স্থানীয়দের জানান। স্থানীয়রা চেপে ধরতেই জাসায় জানান, তিনি গলা টিপে শিশুকন্যাকে প্রাণে মেরে এলাকার খড়ি নদীর জলে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। জাসায় এমনটা স্বীকার করার পরেই স্থানীয়রা মন্তেশ্বর থানার পুলিশকে খবর দেয়।
আরও পড়ুন যমে-মানুষে টানাটানি ৭০ দিন! শিশু দিবসেই যেন জীবন ফিরে পেল একরত্তি
পুলিশের কাছেও শিশুকন্যাক খুন করার কথা জাসায় স্বীকার করে নেয়। এর পরেই পুলিশ জাসায়কে গ্রেফতার করে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিল বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দফতরের লোকজনের সহায়তা নিয়ে খড়ি নদীতে শিশুকন্যার মৃতদেহ উদ্ধারে নামে। অবশেষে বৃহস্পতিবার নদী থেকে উদ্ধার হয় শিশুকন্যায় মৃতদেহ। ময়নাতদন্তের জন্য শিশুকন্যার মৃতদেহ এদিনই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। শিশু দিবসের আগের দিন এক শিশুকন্যাকে এমন নৃশংস ভাবে হত্যার ঘটনার স্তম্ভিত মন্তেশ্বরের বাসিন্দারা।