এসপ্ল্যানেডে মেট্রো সিনেমার গেটের উল্টো দিকেই চন্দ্রর চায়ের দোকান। রাত ৯ টার দিকে দোকান বন্ধ করে নিউ ব্যারাকপুর ফিরতে হয় চন্দ্রকে। গেল রোববারটা যদিও ছিল অন্যরকম। কলকাতার নগরপালের বাড়িতে সিবিআই হানা এবং ঘটনার প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নায় বসা, এই দুই নিয়ে সরগরম ছিল কলকাতা, বিশেষ করে মেট্রো চ্যানেল সংক্রান্ত অঞ্চল।
রবিবার রাতেই ধর্না মঞ্চে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝরাতে নতুন করে স্টোভ গরম করল চন্দ্র। চায়ের অপেক্ষায় জনা তিরিশেক তৃণমূল সমর্থক। ২০ মিটার দূরে মঞ্চের ওপর বসে আছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন জানিয়ে বিজেপি বিরোধী নেতাদের ফোন আসতে শুরু করেছে একে একে।
চারপাশে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, "ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে কোথাও যাব না। দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন। ওরা যদি ভাবে আমার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে হানা দিলে আমি ভয় পেয়ে যাব, ভুল ভেবেছে"।
দলের সদস্যদের মধ্যে তখন বিক্ষোভের পরবর্তী ধাপ কী হবে, তাই নিয়ে আলোচনা চলছে নীচু স্বরে। কেউ কেউ বলছেন গরম পোশাক নিয়ে আসতে হবে বাড়ি থেকে। "মুখ্যমন্ত্রী আর তাঁর সঙ্গে থাকা দলের সদস্যদের দেখে আমি দুধ জোগাড় করে আবার চায়ের ব্যবস্থা করা শুরু করি। খাবার জল নেই সঙ্গে, এখন কোথাও পাওয়াও যাবে না। কিন্তু আজ রাতে আমি আর ফিরব না", রবিবারের ধর্না মঞ্চ চন্দ্রকে মনে করাচ্ছে ২০০৬-এর সিঙ্গুরকে।
আরও পড়ুন, দুচোখের পাতা এক না করে ধর্না মঞ্চে অতন্দ্র মমতা
রাত বাড়তে থাকলে শীর্ষ আধিকারিকদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার আবার বিধানসভায় রাজ্য বাজেট পেশ হবে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থেকে গেলেন দোলা সেন, মহুয়া মৈত্র, ইন্দ্রনীল সেনের মতো নেতারা।
"আমি শুনেছি বিজেপি আর সিবিআই-কে নিয়ে একটা বড় সমস্যা হয়েছে। দিদি তাঁরই প্রতিবাদ করছেন। দিদির ক্ষতি আমরা কাউকে করতে দেব না"।
পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের লওডন স্ট্রিটের বাসভবনে দুটি ভ্যানে রয়েছে পুলিশের ৬ জন অফিসারের কড়া পাহারা। নিজাম প্যালেসে সিবিআই এর দফতর পাহারা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ১৫ কিলোমিটার দূরে সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই-এর আরেকটি দফতরেও কড়া পুলিশি পাহারা রয়েছে। সেখানকার এক নিরাপত্তারক্ষীর কথায়, "কী হচ্ছে, কিছুই জানিনা আমরা। হঠাৎ পুলিশ চলে এল, কেন সে ব্যাপারে কিছুই জানাল না আমাদের। রাত ৯ টায় পুলিশ চলে যাওয়ার পর কেন্দ্রীয় বাহিনী এল"।
দুপুর তিনটের মধ্যে আবার ধর্না মঞ্চে মমতা। খোঁজ নিলেন রাত কাটানোর জন্য খাবার এবং জলের ব্যবস্থা রয়েছে কি না। ব্যারিকেডের সামনেই দলের কয়েকজন কর্মী প্লাস্টিকের চাদরের ওপর ঘুমিয়ে নিলেন। ভোর হতে না হতেই আরও মজবুত করে গড়ে তোলা হল ব্যারিকেড। মেটাল ডিটেক্টর এল। আরও একটা দিনের জন্য তৈরি হল তৃণমূলের ধর্না মঞ্চ।