হাওড়ার বস্তি নাগরিক পরিষেবার করুণ পরিস্থিতি দেখে ক্ষুদ্ধ মুখ্যমন্ত্রী সোমবারই সরব হয়েছিলেন প্রশাসনিক বৈঠকে। এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি প্রশাসনিক কর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেন। এরপর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে মঙ্গলবার হাওড়ার ফরশোর রোড সংলগ্ন ২ নম্বর রাউন্ড ট্যাঙ্ক লেনের পুরানো বস্তিতে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সকাল সকাল সাফাই কর্মীদের দিয়ে আবর্জনা বোঝাই নর্দমা পরিষ্কার করালেন এলাকার কাউন্সিলার বিশ্বনাথ দাস।
উল্লেখ্য, সোমবার হাওড়ায় প্রশাসনিক বৈঠকের আগেই নবান্ন থেকে হাওড়ার শরৎ সদনে ঢোকার আগে হঠাৎ বস্তি পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোনেন বস্তিবাসীদের অভাব অভিযোগের কথাও। প্রশাসনিক বৈঠকে সেই সমস্যা নিয়েই প্রাক্তন কাউন্সিলরদের ধমকও দেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। আর মুখ্যমন্ত্রীর এই 'বকুনির জেরে'ই পুরসভার এই তৎপরতা বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও পড়ুন- ‘পুরানো’ মমতা হঠাৎ সশরীরে ঘরে ঢুকে পড়লেন, আপ্লুত বস্তিবাসীরা
সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই মঙ্গলবার সকালে পুরসভার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন হাওড়া পুরসভার প্রশাসক তথা কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ। বৈঠক শেষে তিনি জানান, এদিন বিকেলে তিনি নিজে ওই বস্তিতে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। তিনি আরও বলেন, “পরবর্তীকালে আমি নিজে নিয়মিতভাবে বস্তি পরিদর্শন করব। ২০১১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, হাওড়া শহরে ৫৬৫টি বস্তি রয়েছে। এছাড়া বালিতে রয়েছে ৮৪টি বস্তি। এর মধ্যে অধিকাংশই রেল ও পোর্ট ট্রাস্টের জমিতে গড়ে উঠেছে”। এরপর পুরসভার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ২ নম্বর রাউন্ড ট্যাঙ্ক লেনের বস্তিতে গিয়ে সেখানে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ।
আরও পড়ুন- গঙ্গার ‘দূষিত জলে’ তৈরি হচ্ছে খাবার, বন্ধ হাওড়ার একাধিক হোটেল
তবে আচমকা পুরসভার এহেন তৎপরতায় খুশি ২ নম্বর রাউন্ড ট্যাঙ্ক লেনের বস্তিবাসীরা। বস্তির বাসিন্দা এবং পেশায় পুরসভার অস্থায়ী সাফাই কর্মী সিকান্দর হেলা জানান, "সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর পরিদর্শনের পর থেকেই বারে বারে এলাকায় আসছেন নানা লোকজন। জানতে চাইছেন সমস্যার কথা"। অপর এক বাসিন্দা সারদা হেলা বলেন, “পঞ্চাশ বছরের বেশী সময় ধরে এখানে রয়েছি। এখন প্রায় ৪০০ জন মানুষ এই বস্তিতে থাকেন। কিন্তু আমাদের খোঁজ কেউ নিত না”। সোমবার বস্তিতে এসে রূপা মল্লিক এবং তাঁর মেয়ের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। দিদিকে সামনে পেয়ে নিজেদের অভাব অভিযোগের কথা জানায় সে। এরপরই পুরসভার এই কর্মতৎপরতা প্রসঙ্গে রূপা মল্লিক বলেন, “প্রায় এক বছর আগে হাওড়া পুরসভা বস্তিবাসীদের পানীয় জলের জন্য একটি টাইম কল করে দেয়। এরপর আর কিছুই হয়নি"।
আরও পড়ুন- বন্ধ রাখা হবে হাওড়ার বঙ্কিম সেতু, বিকল্প পথের সন্ধান দিল হাওড়া সিটি পুলিশ
প্রসঙ্গত, হাওড়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে সোমবার আচমকাই ফোরশোর রোডের ধারে একটি বস্তি পরিদর্শন করতে যান মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন থেকে শরৎ সদনে বৈঠকে আসার পথে পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর রাউন্ড ট্যাঙ্ক লেনের বস্তিতে ঢুকে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হঠাৎ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে সামনে দেখে হতচকিত হয়ে পড়েন ওই বস্তির বাসিন্দারা। সারসার টালির চালে ঢাকা সেই বস্তির দুর্গন্ধময় পরিবেশ, অপরিচ্ছন্ন এলাকা, আবর্জনা বোঝাই নর্দমা দেখে ক্ষোভ চরমে ওঠে তাঁর। এছাড়াও বস্তিবাসীদের অধিকাংশের রেশন কার্ড না থাকায় অসন্তুষ্ট হন মমতা। বৈঠক শুরুর আগেই এই নিয়ে বিরক্তিও প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। দেখে শুনে এক বস্তিবাসী বলেন, 'একেই বলে দিদিকে বলোর' কামাল'।