Primary School Closed: একজন মাত্র শিক্ষিকার হাত ধরে চলছিল শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। তিনি অবসর নিতেই তালা পড়ে গেল পূর্ব বর্ধমানের কালনার রামকৃষ্ণপল্লী শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে।
সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাওয়া স্কুলে তালা পড়ে যাওয়ায় শনিবার চোখের ধরে রাখতে পারলেন না শিক্ষিকা শোভা দাস সাহা। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মন খারাপ খুদে পড়ুয়াদেরও। মিড'ডে মিল রান্নার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়লেন এক রাঁধুনী। এই সবের মধ্যেই অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ করে স্কুলটি চালু করার দাবিতে সরব হয়েছেন অভিভাবকরা। যদিও শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণ করে কবে স্কুলটি চালু হবে সেই প্রশ্নের উত্তর অধরাই রয়ে আছে।
রামকৃষ্ণপল্লী শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটি কালনা ২ ব্লকের শাসপুর এলাকায় অবস্থিত। এই স্কুলটি প্রায় দু-দশক ধরে চালু ছিল। প্রথম দিকে এই স্কুলে শিক্ষা লাভের জন্য হাজির হত শতাধিক পড়ুয়া। তখন শিক্ষক ছিলেন তিনজন। তাদের মধ্যে একজন প্রয়াত হন। অপর আর এক শিক্ষক পাঁচ বছর আগে অবসর নেন। সর্বশেষ দায়িত্ব ছিল শোভা দাস সাহার কাধে। তিনি ১৮ জন পড়ুয়াকে নিয়ে স্কুলটি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত শুক্রবার শোভা দাস সাহা অবসর গ্রহন করেন । তিনি অবসর নিতেই শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটিতে তালা পড়ে যায়।
শোভা দিদিমণি অবসর নেওয়াতে স্কুলে একেবারে তালা পড়ে যাবে, সেটা খূদে পড়ুয়াদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। তাই তারা শনিবারও স্কুলে যায়। কিন্তু চোখের জল মুছতে মুছতেই তারা ফিরে যায়। খুদে পড়ুয়াদের এমন বিমর্ষ হতে দেখে অভিভাবকরাও আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। সঞ্জয় বারুই নামের এক অভিভাবক জানান, “ বাড়ির কাছের স্কুলে ছেলে মেয়েরা পড়ত। শোভা দিদিমণি অবসর নেওয়ায় স্কুলটিতে তালা পড়ে গেছে। আমরা শ্রমজীবী মানুষ। সকাল হলেই কাজে বেরিয়ে যেতে হয়। একদিন কাজ বন্ধ করলে বাড়িতে হাঁড়ি চাপবে না। স্কুলটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ সমস্যাই হল। এখন কাজ বন্ধ করে আমার মত অভিভাবকদের ১ কিলোমিটার দূরের স্কুলে সন্তানদের পড়ানোর জন্য নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমিও আমার মত সকল অভিভাবকরই চাইছি যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষক নিয়োগ করে স্কুলটি চালু করা হোক"।
স্কুলে দীর্ঘদিন রান্নার কাজ করা নীলিমা বারুই বলেন,“আমার ছেলে এই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ত । গত শুক্রবার স্কুলের শোভা দিদিমণি অবসর নেন । তার পর থেকেই স্কুলে তালা পড়ে যায় । তাই স্কুলে আমার রান্নার কাজও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাকে কাজটাও হারাতে হল।" অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শোভা দাস সাহা শনিবার চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, “আমার হাতে গড়া স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়া দেখে খুবই কষ্ট হচ্ছে।আমিও চাই স্কুলটি চালু থাকুক"। এ বিষয়ে কালনা ২ ব্লকের বিডিও অনিরুদ্ধ মণ্ডল জানান, “ বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।”