Motivational Story: অনন্য নজির, মেয়ের অনুপ্রেরণায় একসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক মা-ছেলের

Success Story: মা আয়েশা বেগম ও দাদা পারভেজ আলম শিক্ষা লাভে এইভাবে এগিয়ে চলায় খুশি মেয়ে ফিরদৌসী খাতুন। শিক্ষিত হওয়ার লক্ষ্যে নিম্নবিত্ত পরিবারের মা ও ছেলের এই প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন শিক্ষানুরাগীরা।

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
New Update
mother and son in HS together under inspiration of daughter in burdwan saktigar

আয়েশা বেগম ও পারভেজ আলম Photograph: (প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় )

Success Story: এম-এ পাশ মেয়ের অনুপ্রেরণাতেই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরনোর পর মা ও ছেলে এবার দিল উচ্চ মাধ্যমিক (ফাজিল)পরীক্ষা। মা আয়েশা বেগম ও দাদা পারভেজ আলম শিক্ষা লাভে এইভাবে এগিয়ে চলায় খুশি মেয়ে ফিরদৌসী খাতুন। শিক্ষিত হওয়ার লক্ষ্যে নিম্নবিত্ত পরিবারের মা ও ছেলের এই প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন শিক্ষানুরাগীরা।  

Advertisment

আয়েশা বেগমের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার ঘাটশিলা গ্রামে। তাঁর স্বামী শেখ সাইফুল আলম পেশায় কৃষক। সম্প্রতি তিনি এলাকায় একটি গুমটি বসিয়ে সেখানে দোকানদারি করা শুরু করেছেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের এই দম্পতির ছেলে পারভেজ আলম প্রায় ৮-৯ বছর আগেই লেখাপড়ায় ইতি টেনেছিল। কিন্তু পারভেজের বোন ফিরদৌসী খাতুন সেই পথে হাাঁটেননি। পারিবারিক আর্থিক প্রতিকুলতার মধ্যেও ফিরদৌসী লেখাপড়া চালিয়ে যান। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এম-এ পাশ করেছেন । 

কলকাতা মেট্রোয় বাম্পার বন্দোবস্ত! যাত্রী স্বার্থে দুরন্ত সুবিধা পুরোদমে চালু

নিজে উচ্চ শিক্ষিত হতে পারলেও আইসিডিএস কর্মী মা ও দাদার কম শিক্ষিত হয়ে থাকাটা ব্যাথিত করতো ফিরদৌসীকে। তাই তিনি তাঁর মা ও দাদাকে পুনরায় লেখাপড়ার আঙিনায় ফিরিয়ে আনার জন্য অনুপ্রাণিত করতে থাকেন। তাতে কাজও হয়। সেই অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ফিরদৌসীর মা ও দাদা দু’জনেই পুনরায়  লেখাপড়া শুরুর ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেন। সেইমত তাঁরা ঘাটশিলা সিদ্দিকীয়া সিনিয়ার হাই মাদ্রাসায় ভর্তি হন।  

Advertisment

পড়াশোনা করে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ২০২৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বাজিমাত করে ফেলেন মা আয়েশা বেগম ও ছেলে পারভেজ আলম। আয়েশা ৩৮৫ নম্বর এবং পারভেজ ৪৬২ নম্বর পেয়ে একচান্সে মাধ্যমিক পাশ করেন। মাধ্যমিক পাশ সম্পূর্ণ হলেও মা ও ছেলের কেউই পড়াশোনায় ইতি টানেনি । এবছর মা আয়েশা বেগম ও ছেলে পারভেজ হুগলীর হাজিগড়- চেরাগ্রাম এইচডিইউ সিনিয়ার মাদ্রাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁদের মাদ্রাসা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে বলে 
আয়েশা বেগম জানিয়েছেন। 

৪২ বছর বয়সী আয়েশা বেগম জানিয়েছেন,তিনি পরীক্ষা ভালই দিয়েছেন। তাঁর ছেলেও ভাল পরীক্ষা দিয়েছে।  উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর উচ্চশিক্ষা আরও চালিয়ে যাবেন বলে আয়েশা জানিয়েছেন। সাইফুল আলম বলেন, তাঁর ছেলে ও স্ত্রী সত্যিই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।  
 
আয়েশা আরও জানিয়েছেন,'তাঁর শৈশব জীবন খুব  একটা সুখের ছিল না। ছোট বয়স থেকেই তিনি তাঁর বাবাকে কাছে পান নি। মামার বাড়িতেই কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছেন। প্রায় ২৫-২৬ বছর আগে সেখানকার স্কুলে  সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার তিন মাস পর থেকে তাঁকে লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয়। তাঁর পর বিয়ে হয়ে গেলে সংসার সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ছেলে ও মেয়েকে বড় করে তুলে তাদের লেখাপড়া শেখানোর দায়িত্ত্বও তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে কাঁধে তুলে নিতে হয়। তারই মধ্যে ২০১০ সাল তিনি বর্ধমানের একটি আইসিডিএস কেন্দ্রে কাজে যোগ দেন।

সপ্তাহের প্রথম দিনেই চরম দুর্ভোগের আশঙ্কা, সোমবার রাজ্যজুড়ে ধর্মঘটের ডাক

আয়েশার কথায় ,সংসার ও আইসিডিএস কেন্দ্রের কাজ সামলেও যে লেখাপড়া করে মাধ্যমিক ও তারপর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া যায় এই অনুপ্রেরণা তিনি তাঁর উচ্চ শিক্ষিত মেয়ের কাছ থেকেই পান। মেয়ের অনুপ্রেরণাতেই সংসার সামলে রাতে পড়াশুনা শুরু করেন। তারপর সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ও সমালোচনাকে দূরে সরিয়ে রেখে তিনি ছেলের সঙ্গেই  মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেন। আরও পড়াশুনা করার ইচ্ছা রয়েছে বলেও জানান তিনি। 

আয়েশার বেগমের মতই পারভেজ আলমও জানিয়েছেন, তিনি তাঁর বোন ও বাবার অনুপ্রেরণাতেই পুণরায় লেখাপড়া জীবনে ফিরে আসেন।মাধ্যমিক পাশ করার পর এবার উচ্চ  মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন।পারভেজ বলেন,“আমাদের পরিবারের আর্থিক  অবস্থা ভাল ছিল না।অনটনই ছিল আমাদের পরিবারের নিত্যদিনের সঙ্গী। এই অবস্থায় শুধুই মনে হত কোন কাজে যোগ দিয়ে আমাকে উপার্জন করতে হবে । নয়তো আমাদের সংসারটা ভেসে যাবে। তাই আট বছর আগে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেই আমি লেখাপড়ায় ইতি টানি । তার পর মুম্বইয়ে চলে গিয়ে অলংকার তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলাম ।কিন্তু লেখাপড়া ছাড়তে হওয়ায় মনে আক্ষেপ রয়েই গিয়েছিল। তারই মধ্যে বোন ফিরদৌসী লাগাতার পড়াশোনা চালিয়ে গিয়ে এম-এ পাশ করে ফেলে। তারপর থেকে বোনই আমাকে ও মাকে অনুপ্রাণিত করে চলে পুনরায় লেখাপড়া শুরুর জন্য । বোনের অনুপ্রেরণাতেই আমি ও আমার মা পুণরার লেখাপড়া শুরু করে মাধ্যমিক পাশ করি । এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। সবকটি বিষয়ের পরীক্ষাই ভালো দিয়েছি। বোনের  থেকে এটুকু বুঝেছি ,“শিক্ষা লাভের কোন বয়স নেই ,শিক্ষার বিকল্পও কিছু নেই"। 

burdwan Success Story