২২ জুলাই হানা, ২৩-এ গ্রেফতার। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতারের পরপর দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, যাঁরা অভিযুক্ত জবাব দেওয়ার দায় তাঁর বা তাঁর আইনজীবীদের। দলের মতামত পরে জানানো হবে বলেও জানিয়ে রেখেছিলেন। রাজনৈতিক মহলের মত ছিল, ব্যক্তিগত দায় বলে তখনই দল থেকে ছেঁটে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র। কিন্তু তারপরই কুণাল-সহ দলের চার শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য ছিল, দোষী প্রমাণিত হলে দল ব্যবস্থা নেবে।
ফের এক সপ্তাহের মধ্যে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে পার্থকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ, দল থেকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও এই সিদ্ধান্তের পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যাখাও দিয়েছেন। অভিষেক বেনিফিট অফ ডাউট দিয়েছেন যাঁদের বিরুদ্ধে অবিচার হচ্ছে তাঁদের। তাহলে কি প্রথমবারের প্রতিক্রিয়াতেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কুণাল? এবার কিভাবে দলের ভাবমূর্তি ফেরানো হবে তা নিয়েই মশগুল রাজনৈতিক মহল।
দু'দফায় পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুই বাড়ি থেকে মেলে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। বুধবার এই পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বেলঘরিয়ার বাড়ি থেকে বিপুল টাকা উদ্ধারের পরই তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ মাথা হেঁট হয়ে যাওয়ার কথা বলেন। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে প্রকাশ পায় অর্পিতা ইডিকে জানিয়েছে এসব টাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।
এরপরই তৃণমূলের তিন মুখপাত্র রে-রে করে ওঠেন। দাবি করতে শুরু করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অপসারিত করা হোক। অর্থাৎ ময়দান তৈরি সম্পূর্ণ। বিকেলের মধ্যে তিন-তিনটে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ, দলের পাঁচটি পদ থেকে সরানো শুধু নয়, দল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সাসপেন্ড করা হয়।
আরও পড়ুন- চিনার পার্কেও অর্পিতার ফ্ল্যাট! লোক-লস্কর নিয়ে হানা দিল ইডি
শুধু ড্যামেজ কন্ট্রোল নয়, পরিস্থিতি অনুকূলে আনার আমূল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঘাসফুল শিবির। এদিকে টানা ৫০১ দিন অবস্থানে বসা এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের প্রতিনিধি শহীদুল্লাহর সঙ্গে ফোনে কথা হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁদের সমস্যা নিয়ে আগামিকাল, শুক্রবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা। ফোনে কথা বলার পর চাকরি প্রার্থীরাও কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন বলে জানান।
একদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত সিদ্ধান্তের সঙ্গে বৈঠক করার আশ্বাস দিয়ে শুধু রাজনৈতিক নয় এসএসসি চাকরি নিয়ে যে অস্তিরতা তৈরি হয়েছিল তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী ও দলের মহাসচিবের ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বাড়িতে কোটি কোটি টাকা, রাশি রাশি সোনা-রুপো, দলিল-নথি উদ্ধারের পর বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরও চাপ বাড়াতে থাকে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।
আরও পড়ুন- গৌড়বঙ্গে এবার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, কাঠগড়ায় পার্থ-ঘনিষ্ঠ অধ্যাপিকা কৃষ্ণকলি বসু ঘোষ
একইসঙ্গে দলের অভ্যন্তরে অস্বস্তি ক্রমশ বাড়তে থাকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, ক্রমাগত পরিস্থিতি উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। তবে এখন দেখার বিষয়, চাকরি প্রার্থীদের কতটা আশ্বস্ত করতে পারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসেও তাঁদের সমস্যার সুরাহা হয়নি বলেই তাঁরা বারে বারে দাবি করেছে।
দলের তরফে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আলোচন করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করবেন, কিন্তু প্রশাসনিক পর্যায়ে বৈঠক না হওয়ায় বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, পার্থর ঘটনায় যেভাবে দলের মুখ পুড়েছে তাতে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি চাকরি প্রার্থীদের কথা না ভাবলে পরিস্থিতি বদলের কোনও সম্ভাবনা নেই। ফোঁড়া ফাটানোর পর শরীরের হাল কি হয় সেটাই এখন দেখার।