/indian-express-bangla/media/media_files/2025/06/21/ali-khamenei-2025-06-21-14-55-24.jpg)
৩৫ বছরের শাসক, তাঁর নেতৃত্বেই বদলে গিয়েছে ইরান! পরাক্রমী যোদ্ধা, কে এই আয়াতুল্লাহ খামেনি?
Ayatollah Ali Khamenei : ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে ইজরায়েল। শুক্রবার গভীর রাতে ইসফাহানে অবস্থিত ইরানের একটি পারমাণবিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (IDF)। একই সঙ্গে টার্গেট করা হয়েছে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলিকেও।
এই হামলা ইরান থেকে ইজরায়েলের উপর চালানো ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় হয়েছে বলে জানিয়েছে IDF। দক্ষিণ ইজরায়েলের আরাভা অঞ্চলে আরও দুটি ইরানি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে, বলে জানিয়েছে ইজরায়েল।
খামেনির বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ, আমেরিকাকে দোষারোপ
ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে বলেন, "আমেরিকা কূটনীতির নামে প্রতারণা করেছে, আর ইজরায়েলের হামলাকে আড়াল করেছে। আমরা এখন আমেরিকাকে আর বিশ্বাস করি না।" অন্যদিকে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, "এই আক্রমণ যুদ্ধ বাড়ানোর জন্য নয়, বরং ইরানের পরমাণু শক্তি শেষ করার উদ্দেশ্যে। আমরা ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের টার্গেট করেছি।" অন্যদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, "আমরা আত্মসমর্পণ করব না, হামলাকারীদের কঠিন মূল্য দিতে হবে।"
ইরানের ৩৫ বছরের শাসক আয়াতুল্লাহ খামেনি কে? উত্তরসূরি কে হতে পারেন, জেনে নিন বিস্তারিত
১৯৮৯ সাল থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে শাসন করে চলেছেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ৮৫ বছর বয়সী এই নেতা বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধান। ১৯৩৯ সালে মাশহাদে জন্মগ্রহণকারী খামেনি মাত্র ২৩ বছর বয়সেই আয়াতুল্লাহ খোমেনির ইসলামী বিপ্লবের আন্দোলনে যুক্ত হন। ইরান-ইরাক যুদ্ধ থেকে শুরু করে আমেরিকা বিরোধী নীতি, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচির পেছনে তাঁর নেতৃত্বের ছাপ স্পষ্ট। যদিও তিনি 'ঐতিহ্যবাহী মারজা' মর্যাদার অধিকারী ছিলেন না, তবুও সংবিধানে সংশোধনী এনে তাঁকে সর্বোচ্চ নেতা করা হয়।
খামেনির নেতৃত্বে ইরানের রূপান্তর
তিনি ইরানকে একটি আঞ্চলিক সামরিক ও আদর্শিক শক্তিতে পরিণত করেছেন।
অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও সংকটে স্থিতিশীলতা ফিরিয়েছেন।
আমেরিকা ও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর বিদেশ নীতি অবলম্বন করেছেন।
কে হবেন খামেনির উত্তরসূরি?
ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন আবার সামনে এসেছে। সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের তালিকায় রয়েছেন:
মোজতবা খামেনি – খামেনির পুত্র, বর্তমানে IRGC-র সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত এবং প্রশাসনে দৃশ্যমানভাবে প্রভাবশালী। তিনি একজন মধ্যম মানের ধর্মীয় আলেম হলেও, ইরানের রাজনৈতিক অভিজাত মহলে তার বিস্তৃত যোগাযোগ তাকে শক্তিশালী উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।
আলীরেজা আরাফি – বিশেষজ্ঞ পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে আলিরেজা আরাফি ইরানের শাসন কাঠামোর একজন গুরুত্বপূর্ণ মুখ। কোমে শুক্রবারের নামাজের ইমাম হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। খামেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তাঁর নামও আলোচনায়।
আলী আসগর হেজাজি – গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিশারদ, সর্বোচ্চ নেতার কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কৌশল নির্ধারণে তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং পর্দার আড়ালে কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষ।
মহম্মদ গোলপায়েগানি – দীর্ঘদিন ধরে খামেনির চিফ অফ স্টাফ হিসেবে থাকা গোলপায়েগানি একজন অভিজ্ঞ প্রশাসক। খামেনির সবচেয়ে বিশ্বস্ত সার্কেলের অন্যতম এই ব্যক্তি পর্দার অন্তরালে বিপুল প্রশাসনিক ক্ষমতা ধরে রেখেছেন।
আলী আকবর বেলায়াতি ও কামাল খারাজি – বৈদেশিক কূটনীতির অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। আলী লারিজানি – প্রাক্তন স্পিকার
যদিও খামেনির উত্তরাধিকার নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে, সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইরানি জনগণ এখন রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেয়ে জাতীয় নিরাপত্তার দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। ইরানের সংবিধান অনুসারে, ৮৮ সদস্যের বিশেষজ্ঞ পরিষদ (Assembly of Experts) সর্বোচ্চ নেতার উত্তরসূরি নির্ধারণের ক্ষমতা রাখে। কিছু রিপোর্ট ইঙ্গিত দেয়, ভবিষ্যতে কোন একজন ব্যক্তির পরিবর্তে একটি নেতৃত্ব পরিষদ গঠনের দিকেও যেতে পারে ইরান।