কৃষি বিমাতেও এবার দুর্নীতির থাবা। যাঁদের এক ছটাকও জমি নেই, যাঁরা চাষই করেন না, তাঁরাও নাকি পেয়ে গিয়েছেন রবি মরশুমের শস্য চাষের কৃষি বিমার ক্ষতিপূরণ। অথচ রবি মরশুমের শস্য চাষের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিতই রয়ে গিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ পূর্ব বর্ধমানের রায়না ১ ব্লকের অধীন পলাশন গ্রাম পঞ্চায়েতের শাকনাড়া গ্রামের চাষিরা।
তাঁরা এই ঘটনার বিহিত চেয়ে ব্লকের বিডিও এবং এডিএ-সহ জেলা প্রশাসনের নানা মহল এমনকী রায়নার বিধায়কের কাছেও লিখিত অভিযোগ জানিছেন। এই দুর্নীতি কাণ্ডে কৃষি দফতরের নিয়োগ করা বিমা সংস্থার কর্মীদের কাঠগড়ায় তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
চাষিরা তাঁদের অভিযোগে প্রশাসনকে জানিয়েছে, রবি মরশুমে কৃষি বিমার জন্যে তাঁরা আবেদন করেছিলেন। কিন্তু শাকনাড়া গ্রামের হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি আর কেউ বিমার টাকা পায়নি। আর যাঁদের অ্যাকাউন্টে বিমার টাকা ঢুকেছে, তাঁরা কেউ চাষ-আবাদই করে না। তাঁদের বাড়ির কেউ না কেউ আবার সরকারি কর্মচারী। চাষিরা তাঁদের অভিযোগে এও উল্লেখ করেছেন,এমন অনেক বিমার টাকা পাওয়া ব্যক্তি আছেন যাঁদের নিজের অঞ্চলে জমিই নেই।
আরও পড়ুন- Kolkata News Live Updates:পদত্যাগ করছেন মহম্মদ ইউনূস? তোলপাড় বাংলাদেশে!
অন্য অঞ্চলের তাঁদের জমি আছে বলে দেখানো হয়েছে। এছাড়াও একই মরশুমে দু’বার বিমার টাকা পেয়েছেন, এমন ব্যক্তিও আছেন। এমনকী বিমা সংস্থার হয়ে চাষিদের তথ্য সংগ্রহের কাজ করে থাকা কাজল মুখোপাধ্যায় ও সৈকত মুখোপাধ্যায়ের আত্মীয়রাও বিমার টাকা পেয়েছেন বলে বঞ্চিত চাষিরা অভিযোগ করেছেন। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল তা জানতে কাজলকে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জেনেই ফোন কেটে দেন তিনি। সৈকত জানান, তিনি ওই সংস্থায় কাজ করেন না। তিনি একটি মোবাইল ফোনের সংস্থায় কাজ করেন বলে দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন- Murshidabad News: সেনাকর্মীর পরিবারের ওপর বর্বরোচিত হামলা, উঠল পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ
এদিকে, শাকনাড়া গ্রামের বাসিন্দা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শাকনাড়া গ্রামে আলু চাষ হয় না। তাই শাকনাড়া গ্রামের কোন চাষির আলুর ক্ষতিপূরণের জন্যে বিমা চাওয়ারও প্রশ্নই থাকে না। অথচ বিমার টাকা হাতাতে পাশের হিজলনা, নতু এবং মেমারির গোপগন্তার ২-সহ কয়েকটি পঞ্চায়েতে এলাকায় শাকনাড়া গ্রামের জনা ১৫ ব্যক্তির জমি আছে বলে দেখানো হয়েছে। ভুয়ো নথির মাধ্যমে তাদের কৃষি বিমার লক্ষ লক্ষ টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৯-১০ জনের কোনও জমিই নেই।"
আরও পড়ুন- Kolkata Weather Update today:বঙ্গোপসাগরে দানা বাঁধছে নিম্নচাপ, ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি শুরু কবে থেকে?
চাষিদের আনা এই অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরের বেশিরভাগ কর্তাই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। ব্লকের বিডিও অজয় দণ্ডপাঠ এ বিষয়ে কোনও কথাই বলতে চাননি। একইভাবে ব্লকের কৃষি আধিকারিক (এডিএ) নিলাদ্রী বসাককে বঞ্চিত চাষিদের আনা অভিযোগ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনিও উত্তর দেননি। চেষ্টা করেও ফোনে রায়না ১ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লকের তৃণমূল সভাপতি বামদেব মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
যদিও জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথা অনুযায়ী, “চাষিদের আনা অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে ব্লকের এডিএ-কে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপের পথে হাঁটবে জেলা প্রশাসন।” বিধায়ক (রায়না) শম্পা ধাড়া জানান, এই ঘটনায় কারা কারা জড়িত তা খুঁজে দেখার জন্যে তিনি জেলা প্রশাসনকে বলেছেন।