Advertisment

পঞ্চায়েতের কাজে খুশি গোটা গ্রাম, 'দখলদারির রাজনীতি'তেই তৃণমূলে তিতিবিরক্ত বাসিন্দারা

এলাকার রাস্তাঘাট ঝাঁ চকচকে। নামমাত্র টাকায় বাড়ি-বাড়ি থেকে চলে আবর্জনা সংগ্রহ।

IE Bangla Web Desk এবং Joyprakash Das
New Update
Amid TMC vs TMC new battle lines drawn in award-winning Gram Panchayat

রাজ্যের এই পঞ্চায়েতটিই গত বছর জাতীয় পুরস্কার জিতেছিল। দীনদয়াল উপাধ্যায় পঞ্চায়েত শক্তিকরণ পুরস্কারও ঝুলিতে পুরেছে এই পঞ্চায়েত। এক্সপ্রেস ফটো: পার্থ পাল।

এলাকার রাস্তাঘাট ঝাঁ চকচকে। নামমাত্র টাকায় বাড়ি-বাড়ি থেকে চলে আবর্জনা সংগ্রহ। পরে সেটাই সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক উপায়ে সারে পরিণত করে ফেলা হয়। ভেষজ সেই সারই বিক্রি করা হয় কৃষকদের কাছে। বাজারের অন্য সারের চেয়ে সরকারি প্রকল্পে তৈরি এই সারই কৃষকদের দারুণ পছন্দের। সার পেতে আগাম অর্ডারও দেন তাঁরা। মোটে উপর পঞ্চায়েতের কাজে দারুণ খুশি বাসিন্দারাও। তবে এবারের ভোটে পঞ্চায়েতে দখলদারির রাজনীতির অভিযোগ উঠেছে। কার দখলে থাকবে পঞ্চায়েত, তা নিয়েই শাসকের অন্দরে কলহ তুঙ্গে। তাতেই তিতিবিরক্ত গ্রামবাসীরা।

Advertisment

এছবি পূর্ব বর্ধমানের বোহর ১ পঞ্চায়েতের (জিপি) অধীনে থাকা একটি গ্রামের। এই পঞ্চায়েতটি গত বছর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। দীনদয়াল উপাধ্যায় পঞ্চায়েত শক্তিকরণ পুরস্কারও ঝুলিতে পুরেছে বাংলার এই পঞ্চায়েত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের মডেল পঞ্চায়েত হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে বোহর ১। ফের একটা পঞ্চায়েত ভোট দোরগেড়ায়। বোহর ১-এর সুনাম অক্ষুন্ন রাখার ভার এবার কারা সামলাবেন? তা নিয়েই শাসকদল তৃণমূলের অন্দরে চোরাস্রোত। দলেরই দুই গোষ্ঠী যেন সম্মুখ-সমরে।

publive-image
চলছে সার তৈরি। এক্সপ্রেস ফটো: পার্থ পাল।

আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে এবার বিদায়ী প্রধান এবং উপ প্রধান-সহ ৬ সদস্যকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। যাঁরা টিকিট পাননি তাঁরাই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দলের জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে। দলের অন্দরের 'রাজনীতি'তেই ভোটে লড়ার টিকিট পাননি তাঁরা, এমনই দাবি তাঁদের। তবে তাঁদের টিকিট না পাওয়াটা আদতে দলেরই ক্ষতি বলে মনে করেন তাঁরা।

আরও পড়ুন- ভোটের বাংলায় বেলাগাম সন্ত্রাস! সকালে শিয়ালদহে নেমেই সটান বাসন্তীতে রাজ্যপাল

এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বোহর ১-এ ইতিমধ্যেই ৫টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ১২ আসনের পঞ্চায়েতে বাকি ৭টিতে লড়াই হবে। এর আগে ২০১৮-এর ভোটে এই পঞ্চায়েতে মোট ১১টি আসন ছিল। যার মধ্যে ১০টিতেই জয় পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। বাকি ১টি আসন যায় নির্দলের দখলে। পরে অবশ্য ওই নির্দল প্রার্থীও তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন।

publive-image
এক্সপ্রেস ফটো: পার্থ পাল।

পঞ্চায়েতের কাজে দারুণ খুশি এলাকার বাসিন্দারা। তবে ভোট ময়দানে পঞ্চায়েতে 'দখলদারির রাজনীতি'তে তৃণমূলের উপরেই বেশ ক্ষুব্ধ তাঁরা। ওই পঞ্চায়েতের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি শেখ মিরাজ বলেন, “জাতীয় পুরস্কার ছাড়াও আমরা অনেক রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও জিতেছি। এটি একটি অনন্য গ্রাম। অন্যান্য জেলা থেকেও সরকারি কর্তারা প্রায়শই এখানে আসেন। আমাদের প্রকল্পের বিষয়ে ওঁরাও জানতে চান। কীভাবে আমরা এটিকে একটি সবুজ পঞ্চায়েত বানিয়েছি তা দেখতেই এখানে আসেন অন্য জেলার প্রশাসনিক কর্তারা। রাজ্যস্তরের পাশাপাশি জাতীয়স্তরেও আমাদের পঞ্চায়েতকে মডেল হিসেবে তুলে ধরে রাজ্য সরকার।”

বোহর ১ নং পঞ্চায়েতের উল্টোদিকে একটি টেলারিংয়ের দোকানের মালিক শেখ খায়রুল্লাহ। তাঁর কথায়, “গ্রামের কোথাও কোনও আবর্জনা দেখতে পাবেন না। আমরা জাতীয় পুরস্কার জিতেছি। আমরা গর্বিত। রাজ্যস্তরেও বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছি। আমরা পঞ্চায়েতের সব প্রকল্পেই অংশগ্রহণ করি। কিন্তু এখন এখানে 'রাজনৈতিক আবর্জনা' দেখছি, যেটা আমাদের একেবারেই অপছন্দের। তৃণমূল এবার পঞ্চায়েতের প্রধান এবং উপ প্রধানকে সরিয়ে দিয়েছে। গ্রামীণ প্রকল্পের নেপথ্যে ছিলেন পঞ্চায়েতের প্রধান। নতুন-নতুন প্রার্থী এসেছেন। এই বিষয়টি নিয়েই দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ রয়েছে। সিপিএমও এখানে প্রচার শুরু করেছে।”

আরও পড়ুন- ভোররাতে বিকট আওয়াজে ঘুম ভাঙল গ্রামের, ফাঁকা মাঠে রক্তারক্তি কাণ্ডে হুলস্থূল!

এলাকারই বাসিন্দা সুকুরমনি হাঁসদা (৬০) বলেন, “আমি বিধবা ভাতা পাই। PMAY-এর অধীনে একটি বাড়িও পেয়েছি। আমি আমার ছেলেদের সঙ্গে থাকি। ওঁরা দিনমজুরের কাজ করে। আমার ছেলেরা এখন অন্যের ক্ষেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। তবে মাসে মাত্র কয়েকদিনই কাজ পায়। এটা এখন আমাদের জন্য একটা সমস্যা।”

publive-image
বাড়ি-বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে এভাবেই রাখা হয়। এক্সপ্রেস ফটো: পার্থ পাল।

গ্রামের আর এক বাসিন্দা কানু মাণ্ডি বলেন, “সার কারখানা’ (প্রকল্প) ভালো। আবর্জনা সংগ্রহের জন্য মাসে ১০ টাকা দিতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এটাকে ঘিরে এখন অনেক রাজনীতি। নতুন ও পুরনো তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠী এটিকে তাদের নিজস্ব প্রকল্প বলে দাবি করছে। সিপিএম এখন এখানে ছোট ছোট মিটিং করছে। জানি না ভোটের ফলাফল কী হবে। পঞ্চায়েত কিছু লোককে বাড়ি দিয়েছে (PMAY-এর অধীনে) তবে আরও প্রয়োজন।”

পঞ্চায়েত অফিস থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে রয়েছে "বোহর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত কঠিন, তরল, বর্জ্য পদার্থ নিরাপদ ব্যাবস্থাপনা প্রকল্প"। ২০১৮ সালে এটি তৈরি হয়েছিল। যা এখনও পুরোদমে চালু রয়েছে। স্যানিটেশন কর্মীদের মতে, ভ্যানে করে গ্রামের বাড়ি-বাড়ি থেকে আবর্জনাগুলি সংগ্রহ করা হয়। পরে সেগুলো এখানে আনা হয়। তা থেকেই তৈরি হয় সার।

publive-image
এক্সপ্রেস ফটো: পার্থ পাল।

বোহর ১ পঞ্চায়েতের কঠিন, তরল, বর্জ্য পদার্থ নিরাপদ ব্যাবস্থাপনা প্রকল্পের কর্মী শিবনাথ মুরু। তিনি বলেন, “আমরা যে দুই ধরণের সার তৈরি করি তার মধ্যে রয়েছে 'কেচো সার' (ভার্মি কম্পোস্ট) এবং 'জৈব সার' (জৈব কম্পোস্ট)। এগুলো প্যাকেটে ভর্তি করে পার্শ্ববর্তী গ্রামে বিক্রি করা হয়। আমাদের সারের গুণমান এতই ভালো যে আমরা কৃষকদের কাছ থেকে এই সারের জন্য আগাম অর্ডারও পেয়ে থাকি। বর্তমানে, আমাদের কাছে কমপক্ষে ৮০ টি ব্যাগের অর্ডার রয়েছে। আমরা কেচো সারের জন্য প্রতি ব্যাগ (৫২ কেজি) ৬০০ টাকা এবং জৈব সারের জন্য ব্যাগ প্রতি ৩০০ টাকা নিই।”

আরও পড়ুন- প্রচারে বেরিয়ে নিখোঁজ, পরে বিজেপিকর্মীর হদিশ পেয়ে আঁতকে উঠল পরিবার

২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন হাসমত মোল্লা। তিনি এবার টিকিট পাননি। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, “আমরা তৃণমূলের একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীতে ছিলাম না। সেই কারণেই আমাদের টিকিট দেওয়া হয়নি। আমি এবং প্রধান সহ ২০১৮ সালে জয়ী আমাদের মধ্যে আটজনকে এবার টিকিট দেওয়া হয়নি। এই প্রকল্পটি আমার মাথা থেকেই বেরিয়েছিল। আমিই এই প্রকল্পটির দেখভাল করেছি। এটি ছিল সারা দেশের মধ্যে অনন্য একটি প্রকল্প। এখন জানি না প্রকল্পের ভাগ্য কী হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি টিকিট চাইতে জেলার নেতাদের কাছেও গিয়েছিলাম। তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। গ্রুপিং চলছে যা দলের ক্ষতিই করছে। দল শক্তি প্রয়োগ করে পাঁচটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। তবে অন্যান্য আসনে কঠিন লড়াই হবে। এই পঞ্চায়েতে দল হারতেও পারে। আমি ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছি। এই দলে কোনও সঠিক ব্যবস্থা নেই।”

tmc West Bengal Purba Bardhaman bengal panchayat election 2023 panchayat election 2023
Advertisment