মঙ্গলবার লোকসভায় 'অপারেশন সিঁদুর' বিষয়ক বিশেষ আলোচনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, চলতি বছরের ২২ এপ্রিল জম্মু কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ের বৈসারন উপত্যকায় নৃশংস হামলায় জড়িত তিন জঙ্গি নিকেষ করা হয়েছে। 'অপারেশন মহাদেব'-এর অধীনে সোমবার শ্রীনগরের ডাচিগাম জঙ্গল এলাকায় একটি এনকাউন্টারে ওই ৩ জঙ্গিকে খতম করা হয়েছে বলে জানান অমিত শাহ।
এদিন সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “তিনজন জঙ্গির নাম — সুলেমান ওরফে ফয়সল, আফগান ও জিবরান। এরা প্রত্যেকেই পাকিস্তান থেকে এসেছিল। সুলেমান ছিল লস্কর-ই-তৈবা (LET)-এর কমান্ডার এবং গগনগীর হামলাতেও জড়িত ছিল। আমাদের বাহিনীর কাছে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এনকাউন্টারে এই তিনজনের মৃত্যুর মাধ্যমে পহেলগাঁওয়ে হামলায় জড়িত সবাই খতম হয়েছে। আমি এই অভিযানে অংশগ্রহণকারী নিরাপত্তা বাহিনীকে সংসদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।”
এরই পাশাপাশি এদিন অমিত শাহ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরমের উদ্দেশ্যে কটাক্ষের সুরে বলেন, “আপনারা জিজ্ঞেস করলেন—জঙ্গিরা কোথা থেকে এসেছিল? কারা ছিল? আমি বলতে চাই, আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে—তারা পাকিস্তান থেকে এসেছে। তাদের ভোটার নম্বর, অস্ত্র এবং এমনকী পাকিস্তানে তৈরি চকোলেটও আমাদের হাতে রয়েছে। যদি বলা হয় তারা পাকিস্তানের নয়, তাহলে এক প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানকে ক্লিনচিট দিচ্ছেন। এই মন্তব্যে তিনি প্রশ্ন তোলেন কেন পাকিস্তানে হামলা করা হল। ১৩০ কোটি ভারতবাসীর সামনে পাকিস্তানকে বাঁচানোর চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গেল।”
আরও পড়ুন- West Bengal News live Updates:SSC-এর চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়াতে মরিয়া রাজ্য, আবারও নতুন তৎপরতা সরকারের
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর বিকেল ৫:৩০ টায় অমিত শাহ এলাকায় পৌঁছোন। ২৩ এপ্রিল নিরাপত্তা পর্যালোচনার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অপরাধীরা যেন পাকিস্তানে পালাতে না পারে, সেব্যাপারে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। এরপর গত ২২ মে হিউম্যান ইন্টেলিজেন্সে জঙ্গিদের অবস্থানের খবর মেলে। ২২ জুলাই অপারেশন সফল হয়, তিনজন জঙ্গির অবস্থান নিশ্চিত হয়। গতকাল অর্থাৎ ২৮ জুলাই, 'অপারেশন মহাদেব' চালিয়ে একটি এনকাউন্টারে তিনজন জঙ্গিকে খতম করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন,“নিহত জঙ্গিদের থেকে পাওয়া তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র—একটি M9 আমেরিকান রাইফেল এবং দুটি AK-47, পাঠানো হয় চণ্ডীগড়ের ফরেন্সিক ল্যাবে। কার্টিজ মিলিয়ে দেখা যায়, এগুলিই হামলার সময়ে ব্যবহৃত হয়েছিল। ছয়জন বিশেষজ্ঞ বলছেন—ম্যাচ ১০০%।”
আরও পড়ুন- Mamata Banerjee:ভোটার তালিকা নিয়ে গভীর চক্রান্তের অভিযোগ, অনুব্রত-কাজলকে একসঙ্গে মাঠে নামার নির্দেশ মমতার
জঙ্গিদের নিকেষ করার পাশাপাশি তাদের সহায়তাকারীও ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন অমিত শাহ। এই প্রসঙ্গে শাহ সংসদে বলেন, “বশির এবং পারভেজ নামে দুই ব্যক্তি যারা জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিল, তাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা স্বীকার করেছে যে, ২১ এপ্রিল জঙ্গিরা বাড়িতে ছিল, খাওয়া-দাওয়া করে অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে যায়।”
আরও পড়ুন- Rahul Gandhi:অপারেশন সিঁদুরের পর পাক গোলাবর্ষণে মৃত্যুমিছিল, পুঞ্চে অসহায় ২২ শিশুর 'ভার' নিলেন রাহুল
অপারেশন সিঁদুরে নিহত জঙ্গিদের পরিচালকদেরও খতম করা হয়েছে, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি পুঞ্চে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের বলতে চাই—যারা জঙ্গিদের পাঠিয়েছিল, তারাও অপারেশন সিঁদুরে মারা গেছে। যারা এসেছিল, তারাও খতম হয়েছে। আপনি কি খুশি নন যে জঙ্গিরা মারা গেছে?” সেনা, CRPF ও জম্মু কাশ্মীর পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় এই সাফল্য বলে জানান শাহ। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী, কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ একযোগে কাজ করে জঙ্গিদের পালানোর পথ বন্ধ করে দিয়েছিল।