সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বিজেপির হয়েই কাজ করে থাকে, এই অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের দীর্ঘ দিনের। এবার বিজেপির অভিযোগ, সিবিআই তৃণমূলের সঙ্গে সেটিং করে কাজ করছে। এবং তা নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নানা ব্যাখ্যা দিয়ে চলেছে। মোদ্দা কথা, বিজেপির বক্তব্য, নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাসের তদন্তে সিবিআই ঢিলেমি দিয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রীর অধীন দফতরের বিরুদ্ধে গোঁসা দিলীপ-সুকান্তর! কেন?
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির লক্ষ্য ছিল ২০০ আসন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোট গণনার পর দেখা গেল বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া ৭৭-এ থেমে গিয়েছে। এরপরই বাংলাজুড়ে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের ওপর লাগাতার সন্ত্রাস, মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। প্রায় ৬০ জন বিজেপি কর্মী এই সময়কালে খুন হয়েছেন বলেও অভিযোগ। ওই ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। সিবিআইয়ের কাজে অখুশি দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদাররা। কিন্তু হঠাৎ এই অখুশির কথা প্রকাশ্যে কেন?
পঞ্চায়েত নির্বাচন দুয়ারে কড়া নাড়ছে, তারপরই বিজেপির কাছে বড় পরীক্ষা, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি ও গরুপাচার কাণ্ডে ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের দুই তাবড় নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে ইডি ও সিবিআই। দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার তৃণমূল।
অন্যদিকে গত বিধানসভা নির্বাচনের পর বঙ্গ বিজেপি ছন্নছাড়া চেহারার রূপ নেয়। কর্মীদের অনেকেই বসে গিয়েছেন। কেউ বা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তার ওপর রাজ্য কমিটি গঠনের পর প্রকাশ্যে আদি ও নব্য বিজেপির মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলেছে। দলকে সাংগঠনিক ভাবে মজবুত করতে এবার ভোকাল টনিক দিতে শুরু করেছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহলের মতে, এবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনে থাকা সিবিআইকে নিশানা করেছেন দিলীপ ও সুকান্ত।
দিলীপের মন্তব্য, ‘সিবিআই আমার নিহত ৬০ জন কর্মী একজনের পরিবারকেও ন্যায় দিতে পারেনি। সেই সিবিআইকে তো আমি বলবই। আমি রাজনীতির লোক। কারও দায় আমার নেই। আমি কর্মীদের সঙ্গে আছি। ১০০ জন কর্মীর মৃতদেহের উপর মালা দিয়েছি। আমার বুকে জ্বালা আছে, আমি বলবই। কোনও কারও, কোনও সিবিআই, কোনও পুলিশ, কোনও সরকারের দায় আমার নেই।’ এরপর সুকান্তের বক্তব্য, ‘আরও তাড়াতাড়ি কাজ হলে আমরা খুশি হতাম। অনেকদিন হয়ে গিয়েছে, একবছর পার হয়ে গিয়েছে। এত দেরি করে গ্রেফতার হচ্ছে। আরও আগে তৎপর হলে আরও বেশি গ্রেফতার হতে পারত। আমরাও খুশি হতাম। অনেকটাই দেরি করে গ্রেফতার করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন- ‘লুটেপুটে খাচ্ছে মিমি, নুসরতরা’, বোমা ফাটিয়েও শেষমেশ ক্ষমা চাইলেন মন্ত্রীমশাই
রাজনৈতিক মহলের মতে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রাথমিক অনুমোদন ছাড়া এমন মন্তব্য করতে পারে না কোনও প্রাদেশিক নেতৃত্ব। যেখানে সেই দফতর সরসারি প্রধানমন্ত্রীর অধীন। তাছাড়া নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে যেভাবে বিজেপি অভিযোগ করেছে তার সঙ্গে সিবিআইয়ের তদন্তের ফলাফলে মিল খুঁজে পাচ্ছে না নেতৃত্ব। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে বিজেপির অভিযোগ কী অন্তঃসারশূন্য ছিল। তৃণমূল বলার সুযোগ পাবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করেও বিজেপির অভিযোগের বাস্তবতা খুঁজে পায়নি। রাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে এমন দাবি করা ছাড়া বিজেপির কাছে কোনও উপায় ছিল না বলে মনে করছে অভিজ্ঞমহল।
নির্বাচন পরবর্তী হিংসার কথা বললেও সেই সময় বিজেপি নেতৃত্বের একটা বড় অংশ দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়ানো দূরে থাক ফোন পর্যন্ত ধরেননি বলেই সাধারণ দলীয় কর্মীদের একাংশ অভিযোগে সরব হয়েছিলেন। অনেক কর্মীই দলীয় কাজকর্ম বন্ধ করে একেবারে বসে গিয়েছেন, কেউবা ঘাসফুল শিবিরে গিয়ে ভিড়েছেন। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, তারপর লোকসভার ভোট।
আরও পড়ুন- ‘গরু পাচারকারী বলে জেলে পুরতে পারে CBI’, আশঙ্কায় রাজ্যের এই হেভিওয়েট মন্ত্রী
বুথভিত্তিক সংগঠন মজবুত না হলে ইডি, সিবিআইয়ের অভিযানে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা কাজে আসবে না, তা ভাল করেই জানে বিজেপি নেতৃত্ব। তাছাড়া তদন্তকারীদের ওপর প্রকাশ্যে চাপ সৃষ্টিও করা গেল। এসব নানা কারণে নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাসের তদন্ত নিয়ে সিবিআইয়ের প্রতি ক্ষোভপ্রকাশ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।