সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ, আর্থিক সংকট, নাকি অন্য কোনও কারণে খুন জিয়াগঞ্জের শিক্ষক পরিবার? খুনের কারণ নিয়ে এখনও অন্ধকারে পুলিশ। খুনের তদন্তে শনিবার চার সদস্যের সিআইডি ও ফরেন্সিক দল মুর্শিদাবাদে যান। প্রায় পাঁচ ঘন্টা সেখানে ছিলেন তারা। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ, হাতের ছাপ সহ ঘটনার পুনর্নিমাণ করেন তদন্তকারীরা। প্রতিবাশীদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরও বয়ানও নেওয়া হয়।
শিক্ষক পরিবার খুনে আততায়ী কে? আত্রমণকারীকে পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি। তবে, খুনের ধরণ দেখে মনে করা হচ্ছে পেশাদার কোনও খুনীই এই কাজ করেছে। কে সে? তদন্তের মাধ্যমে তারই খোঁজ চালানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রেকারিং ডিপোজিটে সুদের হার কতটা কমাল এসবিআই?
শনিবার, নিহত শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালের তুতো ভাই বন্ধুকৃষ্ণ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ চালায় পুলিশ। এই খুনের ঘটনায় আটক সৌভিক বণিকের মুখোমুখি বসিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নিহত শিক্ষকের পরিবারের দাবি, আটক সৌভিক বণিককে জিজ্ঞাবাদেই এই খুনের ঘটনার রহস্য ভেদ সম্ভব। এই ভয়ঙ্কর হত্যালীলায় আতঙ্কিত নিহত শিক্ষকের প্রতিবাশীরা।
বন্ধুকৃষ্ণ ঘোষ সানডে এক্সপ্রেসকে বলেন, 'সৌভিক বণিকই বন্ধুপ্রকাশের ব্যবসায়িক অংশীদার ও ঘনিষ্ট বন্ধু। দাদার (বন্ধুপ্রকাশ পাল) আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও প্রায়ই বাজার থেকে টাকা ধার করে সৌভিককে তা দিয়ে দিত।' বন্ধুকৃষ্ণের দাবি, পুলিশের কাছে মিথ্যা বলছেন সৌভিক। তাঁর প্রশ্ন, 'এই খুনের ঘটনার পর কেন নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল সে? টাকার আদানপ্রদান নিয়ে সে মিথ্যা কথা বলছে।' সৈভিক বণিকই ঘটনা সম্পর্কে সব জানেন বলে মনে করেন নিহত শিক্ষকের তুতো ভাই বন্ধুকৃষ্ণ।
উল্লেখ্য, জিয়াগঞ্জে শিক্ষক খুনে নিহত বন্ধুপ্রকাশ পালের বাবাকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শুক্রবার রামপুরহাটের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৌভিক বণিকের বাড়িতে হানা দেয় মুর্শিদাবাদ পুলিস। তবে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে চলে তল্লাসি। বাজেয়াপ্ত করা হয় বেশকিছু নথিপত্র।
আরও পড়ুন: জাতীয়তাবাদ বলতেই সবাই হিটলারকে ভাবেন, কিন্তু ভারতে এর অর্থ ভিন্ন: মোহন ভাগবত
ঘটনার দিন এক অপরিচিত যুবককে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে পালাতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে রাস্তা থেকে ওই যুবকের রক্তমাখা গেঞ্জি উদ্ধার হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। তবে এই ব্যক্তিকে বেশ কয়েকটি কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। কে সেই যুবক? খুনের সময় ঘরে ক'জন ছিল? মাঝরাস্তায় রক্তমাখা গেঞ্জি ফেলে কেন চম্পট দিল সে? খুনের পরেও সে কেন বাড়িতে লুকিয়ে ছিল? তত্ত্ব-সম্ভাবনা সব দিক খতিয়ে দেখেই তদন্ত এগিয়ে ননিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ডায়েরি, চিঠিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এক তদন্তকারী জানান, 'নিহতের বাবা-মায়ের সম্পত্তি বিবাদ ও বন্ধুপ্রকাশ পালের ব্যবসায়িক আর্থিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জানতে পেরেছি বাবা-মায়ের সঙ্গে নিহতের সম্পত্তি নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিবাদ চলছিল। তদন্তের প্রচুর স্তর উঠে আসছে।' মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ জৈনের দাবি, 'তদন্ত এগোচ্ছে। আশা করছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই খুনের রহস্য ভেদ হবে।'
Read the full story in English