UPSC-Debdut Saha: এমন কীর্তির যত প্রশংসা করা যায় ততই যেন কম পড়ে। অভাবনীয় সাফল্যের এক নতুন নজির গড়েছেন এই বঙ্গসন্তান। কৃষক পরিবারের এক ছেলে UPSC পরীক্ষায় প্রশ্নাতীত সাফল্য ঝুলিতে পুরে ফেলেছেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে সর্বভারতীয়স্তরের এই পরীক্ষায় গগনভেদী সাফল্যের শিখর ছুঁয়েছেন বাংলার এই কৃতী যুবক। তাঁর এমন অভূতপূর্ব সাফল্যে তাঁর পরিবার তো বটেই উচ্ছ্বসিত গোটা গ্রাম।
বীরভূমের (Birbhum) মহম্মদবাজারের (Mohammad Bazar) বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা দেবদূত সাহা (Debdut Saha)। কৃষক পরিবারের সন্তান দেবদূত ছোট থেকেই বেশ মেধাবী। আগাগোড়া লেখাপড়াই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। পরিবারে অনটন ছিল শুরু থেকেই। বাবা আগে জমিতে চাষের কাজ করতেন, এখন সেটাও করেন না। বছর তিনেক আগে পর্যন্তও দেবদূতদের সংসার চলত তাঁর ঠাকুমার অল্প কিছু পেনশনের টাকাতেই। তবে ২০২০ সাল থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ওই বছরেই পোস্ট অফিসে চাকরি পেয়ে যান এই কৃতী ছাত্র। গ্রামীণ পোস্ট অফিসে (Post Office) পোস্ট মাস্টারের চাকরি পেলেও সর্বভারতীয়স্তরের পরীক্ষায় বসার অদম্য ইচ্ছেটা ফুরিয়ে যায়নি দেবদূতের।
IIT Kanpur-এ সুযোগ পেয়েও যাননি। চাকরির পাশাপাশি দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে ইউপিএসসি (UPSC) পরীক্ষার জন্য তৈরি করছিলেন। তাতেই মিলে গেল নজিরবিহীন সাফল্য। UPSC-এর ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল সার্ভিস (Indian Statistical Service) পরীক্ষায় গোটা দেশের ৩৩ জন কৃতীর তালিকায় নাম রয়েছে মহম্মদবাজারের কুলকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা দেবদূত সাহারও। তাঁর বাড়িতে রয়েছেন ঠাকুমা আদুরাণী সাহা, বাবা পিন্টু সাহা ও মা ছায়া সাহা। এদেঁর নিয়েই তাঁর ছোট্ট পরিবার।
আকাশছোঁয়া এই সাফল্য পেয়ে দেবদূত নিজেও উচ্ছ্বসিত। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার মুখোমুখি হয়ে অকপটে তাঁর লড়াই কাহিনী শোনালেন নিজে মুখে। দেবদূতের কথায়, "বিষ্ণুপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম বীরভূম জেলা স্কুল থেকে। এরপর স্নাতকস্তর পাশ করি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (Visva Bharati University) থেকে। গ্র্যাজুয়েশনের লাস্ট ইয়ারেই চাকরি পাই। IIT Kanpur-এ সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু যাইনি। পোস্ট অফিসের চাকরিতেই যোগ দিই।"
আরও পড়ুন- Museum: অভূতপূর্ব কর্মকাণ্ডে অবিস্মরণীয় নজির! বাংলার সোনালী অতীত ছুঁয়ে দেখতে ঢল বিদেশিদেরও
UPSC-এর প্রস্তুতি…
"২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে UPSC-এর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছিলাম। ২০২২ সালে প্রথমবার পরীক্ষায় বসি। প্রথমবার লেখা পরীক্ষায় পাশ করে ইন্টারভিউ দিই। কিন্তু সেবার আমার হয়নি। তবে দ্বিতীয়বারের পরীক্ষায় সুযোগ পেয়ে যাই। UPSC-এর ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় সুযোগ পাই। এখন ২ বছর ট্রেনিং হবে। ট্রেনিংয়ের পরে পোস্টিং দেবে। এখন আমার ২৫ বছর বয়স।"
আরও পড়ুন- Premium: সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এই বাঙালি অগ্নিকন্যা, জানুন হাড়হিম করা অজানা সেসব কাহিনী
চাকরির ফাঁকেই পড়াশোনা…
"চাকরির মধ্যেই সময় বাঁচিয়ে পড়াশোনা করতাম। ছুটির দিন বা অন্য অবসর সময়ে পড়তাম। ২০২০ সালে পোস্ট অফিসে চাকরি পেয়েছি। বাবা বর্তমানে বাড়িতেই থাকেন। আগে তিনি চাষের কাজ করতেন।" গগনভেদী সাফল্যের শিখর ছুঁলেও পা মাটিতেই রয়েছে এই কৃতী যুবকের। আগামী দিনে নিজের গ্রামের জন্যও বেশ কিছু কাজ করার ইচ্ছে মনে পুষে রেখেছেন তিনি।