বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র নুপুর শর্মার নবিকে নিয়ে 'অশালীন' মন্তব্যের জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলা। ওই মন্তব্যের জন্য নুপুরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিজেপি। তবে গ্রেফতারির দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এদিকে বৃহস্পতিবার হাওড়ায় জাতীয় সড়ক অবরোধ থেকে শুরু হয়ে শেষমেষ বিজেপির দলীয় কার্যালয়, দোকানপাটে আগুন-ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। রাস্তায় যাঁরা বেড়িয়েছিলেন তাঁরা তো দুর্ভোগে পড়েছেন। ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে রাজ্যের অন্যত্র। এই অশান্তি নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করছে।
বাংলায় এই অশান্তির মূলে বিজেপি, দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, গন্ডগোলে উসকানি রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। নবিকে নিয়ে 'অশালীন' মন্তব্য করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ-অশান্তির ঘটনা এখন সরসারি তৃণমূল-বিজেপির বাকযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এদিকে রাজ্য সম্পাদক পদে মহম্মদ সেলিমকে নিয়ে এসে নতুন ভাবে সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা করছে সিপিএম। রাজ্যে যুব কংগ্রেস সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালাচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যাচ্ছে শেষমেষ বাংলায় ফের তৃণমূল-বিজেপির রাজনৈতিক লড়াইয়ে অন্যরা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। আপাতত রাজ্য-রাজনীতি ঘাসফুল ও পদ্মফুলে সীমাবদ্ধ থাকতে চলেছে তা অনেকটা স্পষ্ট বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। ব্যাকফুটে যাবে বাম-কংগ্রেস। সিপিএম ও কংগ্রেস বরাবরই এই দুই দলের মেরুকরণের রাজনীতি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে।
নুপুর শর্মার বক্তব্যের বিরোধিতাতে সহমত হলেও ধ্বংসাত্মক আন্দোলন সমর্থন করছেন না প্রতিবাদী মানুষজনের বড় অংশ। যে ভাবে আগুন জ্বালিয়ে, দোকান-পাট পুড়িয়ে ছাড়খার করা হয়েছে তা মানতে পারছেন না অনেকেই। প্রশ্ন উঠেছে, এটা কী প্রতিবাদের ভাষা? এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব দুপক্ষই দাবি পাল্টা দাবি করে চলেছে।
আরও পড়ুন- পানিহাটিতে মেলার ভিড়ে অসহনীয় পরিস্থিতি, প্রবল গরমে ঠেলাঠেলিতে অসুস্থ বহু, মৃত্যু তিন পুন্যার্থীর
২০২৩-এ পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পরের বছর লোকসভা নির্বাচন। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস শূন্য হয়েছে। এরাজ্যে বামেদের একজন সাংসদও নেই। কংগ্রেস দুটি আসনে জয় পেয়েছিল ২০১৯ নির্বাচনে। আগামী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ওই দুই আসন ধরে রাখা কংগ্রেসের কাছে বড়সড় চ্যালেঞ্জ। সিপিএম ছাত্র-যুবদের সামনে রেখে এগিয়ে চলার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলার সামগ্রিক পরিস্থিতিতে নির্বাচনী ময়দানে বাম-কংগ্রেস কতটা সফল হবে তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন- ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দাঁড়াবেন? নাম-ঠিকানা জমা দিন কালীঘাটে’, মমতাকে বেনজির কটাক্ষ অনুপমের
রাজ্যের সংখ্যালঘুদের বড় সমর্থন যে তৃণমূল পায় সেকথা প্রকাশ্য়েই স্বীকার করে তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহলের মতে, ঠিক এর বিপরীত অবস্থানে থেকে সংখ্যাগুরু অংশের ভোট পেতে সক্রিয় গেরুয়া শিবির। রাজ্য-রাজনীতিতে ফের পিছিয়ে পড়বে বাম-কংগ্রেস। রাজ্যের পরবর্তী নির্বাচনেও দুই মুখ্য প্রতিপক্ষ থাকার প্রবল সম্ভাবনা, একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস অন্যদিকে বিজেপি। বাকিদের কাছে ভোটের রাজনীতিতে লড়াই খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।