Advertisment

দখলদারির খেলায় বীরভূমের গ্রামে প্রাণ গিয়েছিল ১৬ জনের, রক্তদানে শান্তির শপথ দুই গোষ্ঠীর

আতঙ্কের গ্রামে রক্তদানে শান্তির শপথ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
blood donation camp at birbhum dakhalbati village

বীরভূমের দখলবাটি গ্রামে রক্তদান শিবির। ছবি: আশিস মণ্ডল।

গ্রামের নামেই যেন আতঙ্ক। দখলবাটি গ্রাম দখলে রাখতে বহু মানের প্রাণ ঝড়ে গিয়েছে অকালে। খুনের বদলা খুনে বছরভর উত্তপ্ত থেকেছে বীরভূমের রামপুরহাট থানার দখলবাটি গ্রাম। একে অপরের দিকে শত্রুর চোখে তাকানো অভ্যাস করে ফেলেছিলেন গ্রামবাসীরা। বোমা-গুলির শব্দে দিন কাটত এই গ্রামের বাসিন্দাদের। গ্রাম দখলের রাজনীতিতে এপর্যন্ত এই গ্রামে ১৬ জনের প্রাণ গিয়েছে। বোমা-গুলির রক্তঝরা গ্রামে শনিবার বিবদমান দুই গোষ্ঠী শপথ নিলেন প্রাণ বাঁচাতে তাঁরা রক্তদান করবেন। আর অশান্তি নয়। দুই গোষ্ঠী হাতে হাত মিলিয়ে করলেন রক্তদান শিবির।

Advertisment

বীরভূমের রামপুরহাট থানার দখলবাটি গ্রামে ঢুকলেই মিলত বারুদের গন্ধ। খুন, পাল্টা খুনে আতঙ্কে দিন রাত কাটত গ্রামবাসীদের। গ্রাম দখলের রাজনীতিতে এপর্যন্ত ১৬ জনের প্রাণ গিয়েছে। আতঙ্কে গ্রামে ছেড়েছিলেন বহু শান্তিপ্রিয় মানুষ। সেই গ্রামেই এবার দুই বিবাদমান গোষ্ঠীই এবার হাতে হাত মিলিয়ে রক্তদান করলেন। জানিয়ে দিলেন প্রাণ নিতে নয়, প্রাণ বাঁচাতে রক্তদান করব আমরা। অসাধ্য সাধন করলেন রামপুরহাট থানার সাব ইন্সপেক্টর গোলাম রসুল এবং তৃণমূলের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি।

আরও পড়ুন- পঞ্চায়েতে এবার ‘খেলা’ দেখাবেন শুভেন্দু, অভিষেক-গড়ে তৃণমূলকে তুলোধনা বিজেপি নেতার

উল্লেখ্য, ২০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০২ সালের ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় দখলবাটি গ্রামের নিতাই দাসের বাড়িতে বোমা বাঁধতে গিয়ে তিন শিশু সহ মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর থেকেই গ্রামে ধারাবাহিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। সকাল সন্ধ্যা বোমার শব্দে ঘুমোতে যেতেন গ্রামের মানুষ। ঘুম ভাঙত বোমার শব্দেই। এরপরেই ধারাবাহিকভাবে বোমায় মৃত্যু হয় তিন জনের। ২০০৭ সালে মারা যান আমরুল শেখ। ২০১০ সালে মারা যান নাদির শেখ। ২০১৯ সালের ২ নভেম্বর দুপুরে খুন হন বাবুল খান। খুন পাল্টা খুনে নাম জড়িয়েছে দুই বিবাদমান গোষ্ঠীর কামা শেখ, সিকেন্দার শেখ, চাঁদ শেখ, আশরাফ খানদের।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দখলবাটি গ্রামে শান্তি ফেরাতে উদ্যোগী হন তৃণমূলের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি এবং রামপুরহাট থানার সাব ইন্সপেক্টর গোলাম রসুল। তাঁরা প্রথমে গ্রামে গিয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন। উভয় গোষ্ঠীর মতামত নিয়ে সমস্যার সমাধান করেন। এরপরেই সিদ্ধান্ত হয় দুই গোষ্ঠী মিলে রক্তদান করবেন। সেই মতো এদিন দুই গোষ্ঠী মিলিত হয়ে রক্তদান করেন। এগিয়ে আসেন মহিলারাও।

আরও পড়ুন- ‘পারলে আমাকে গ্রেফতার করে দেখাক,’ মঞ্চেই শুভেন্দু-শাহকে খোলা চ্যালেঞ্জ অভিষেকের

সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, “আমরা উদ্যোগ নিয়ে দুই গোষ্ঠীকে মিলিত করেছি। সেই মিলিত শক্তিই এদিন রক্তদান করলেন। এর ফলে গ্রামে শান্তি ফিরে আসবে। মানুষকে আর বোমার শব্দে ঘুমোতে যেতে হবে না। থাকবে না গ্রামে আতঙ্ক”। নিহত বাবুল খানের ভাই আশরাফ খান বলেন, “আমরা এখন আর বোমা গুলিতে কারও রক্ত ঝড়াব না। তাই মানুষের জীবন বাঁচাতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছ। এজন্য অবশ্যই আমরা সাধুবাদ জানাব জিম্মি সাহেব এবং পুলিশ অফিসার গোলাম রসুলকে”।

নিহত আমরুল শেখের দাদা কামরুল শেখ বলেন, “আমরা আর গ্রামে অশান্তি হতে দেব না। আমরা এখন সমাজসেবা মূলক কাজে যুক্ত থাকতে চাই। অহেতুক রক্ত ঝোড়ানোর পরিবর্তে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে রক্তদান করে যাব”। দুই বিবাদমান গোষ্ঠীর মিলনে খুশি গ্রামের মানুষ। গ্রামের বাসিন্দা মুরসালিম শেখ বলেন, “আগে আমরা আতঙ্কে থাকতাম। এখন শান্তি ফিরে এসেছে। আমি চাই আগামী দিনেও গ্রামে এভাবেই শান্তি থাক”।

Birbhum West Bengal Birbhum Violence
Advertisment