খুচরো বাজারে ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম বাড়ছে হু হু করে। এলাকাভিত্তিক দাম ভিন্ন হলেও ড্রেসড চিকেনের কেজি প্রতি দাম প্রায় আড়াইশো টাকা। আগামী দিনে তা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছে পোল্ট্রি ফেডারেশন। সংগঠনের কর্তাদের দাবি, মুরগির খাবারের দাম অত্যাধিক বৃদ্ধির কারণেই এই মূল্য বৃদ্ধি। তাতেও চাষিরা লাভ করতে পারছেন না বলে তাঁদের দাবি। মুরগির খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে এলেই এই ব্যবসা রক্ষা পাবে বলে ফেডারেশনের কর্তারা মনে করছেন। এদিকে বাজার করতে গিয়ে পকেট ফাঁকা হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।
ওয়েষ্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোদন মাইতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বংলাকে বলেন, 'মুরগির উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে মুরগির খাবারের দাম। তার অন্যতম কারণ, মুরগির খাবার এক্সপোর্ট করা হচ্ছে। অন্য রাজ্য থেকে মুরদগির খাবার আনার জন্য খরচ আরও বেড়ে যাচ্ছে। কোনও কোনও খাবারের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ভুট্টার দাম যা থাকে তাও দ্বিগুণ হয়েছে। সেই হিসাবে মুরগির দাম ততটা বাড়েনি। ফার্মাররা লাভ করতে পারছেন না।'
গোটা মুরগির পাইকরি কেজি প্রতি দাম ১১০ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ১২০-১৩৫ টাকা হয়ে গিয়েছে। দাম স্থান বিশেষে সামান্য হেরফের হয়। খোলা বাজারে ড্রেসড ব্রয়লার মুরগির দাম ছুঁয়ে ফেলেছে ২৫০ টাকা প্রতি কেজি। সাধারণ ক্রেতাদের মতে, ব্রয়লার মুরগির দাম যা-ও একটু সাধ্যের মধ্যে ছিল। তাও এবার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। পরিমাণে আগের থেকে কম কিনতে হচ্ছে। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম আপাতত কমছে না বলেই জানিয়েছে পোল্ট্রি ফেডারেশন।
মুরগির দাম একটু একটু করে আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের সভাপতি সমরেন্দ্র নারায়ণ সেন। তবে তাতে লাভের লাভ কিছু হবে না বলেও তিনি মনে করেন। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য যুদ্ধকেও দায়ী করেছেন তিনি। সমরেন্দ্র নারায়ণ সেন বলেন, 'সয়াবিন ও ভুট্টার দাম আকাশছোঁয়া। যে সয়াবিনের দাম ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে কিনেছি, তা ১৫০ টাকা দিয়েও কিনতে হয়েছে। এখন রেট একটু ভাল। ৭০-৮০ টাকা কেজি। ভুট্টা একেবারেই বাজারে নেই। কোনওভাবেই কস্টিং আসছে না। ক্রমাগত ক্ষতি হচ্ছে। সাধারণ ক্রেতাদের হাতে পয়সা না থাকাও একটা বড় কারণ। যুদ্ধের কারণে কাঁচামালের দাম চড় চড় করে বাড়ছে। মার্কেটে দেনা বাড়ছে। এই ব্যবসায় থাকাই সম্ভব নয়। প্রতিদিন মুরগির দরও বাড়ছে।
আরও পড়ুন- ভাটপাড়ায় মিলল তাজা বোমা-পিস্তল, জয়ী তৃণমূল প্রার্থীর ছেলেকে মারধরে ধৃত অর্জুন-আত্মীয়
ব্রয়লারের দাম লাগাতার বাড়লেও চাষিরা লাভ পাচ্ছে না। এমনই বলছেন ফেডারেশনের কর্তারা। তাহলে কীভাবে লাভের মুখ দেখতে পাবেন চাষিরা? মদনমোদন মাইতি বলেন, 'মুরগির খাবারের দাম গড়ে ৭০ শতাংশ দাম বেড়েছে, মুরগির দাম ততটা বাড়েনি। কোভিডে যে ক্ষতি হয়েছে তা তোলা এখন বহু দূরে। ফিডের কস্ট ঠিক থাকলে যা দাম আছে তাতে যথেষ্ট লাভ হত। ফিডের দাম বাড়ার জেরেই এই গন্ডগোল হয়েছে। আমাদের দেশে কাঁচামালের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কাঁচামাল আমদানি করতে হবে। একইসঙ্গে রফতানি কমাতে হবে।'
ফেডারেশনের সধারণ সম্পাদকের মতে, 'মুরগির খাবারের দাম যদি না কমে তাহলে দাম আরও বাড়বে। এরপর উৎপাদন ব্যাহত হবে।' একদিকে ফেডারেশন বলছে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি মুরগির দাম বাড়ার প্রধান কারণ। এদিকে মূল্যবৃদ্ধির চাপে সাধারণ মানুষের ওষ্ঠাগত প্রাণ।