Advertisment

"বিএসএফদের পক্ষে পদ্মা যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?"

"বিজিবির সেনা যখন বলল যে তাঁরা প্রণবকে ছাড়বে না, তখন আমরা সকলেই নৌকাতে ফিরে আসি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওরা গুলি চালানো শুরু করে। নিজেকে বাঁচাতে নৌকায় ভিতর মাথা নীচু করে বসে পড়েছিলাম।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অচিন্ত্য মন্ডল

মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্তের গ্রামে নিজের মাটির বাড়ির সামনে বসে নিজেকে ভাগ্যবান বলেই মনে করছেন বাংলাদেশ থেকে উদ্ধার পাওয়া মৎসজীবী বিকাশ মন্ডল (৩২)। জানা গিয়েছে, অক্টোবরের ১ তারিখ পদ্মা নদীতে দিকভ্রষ্ট হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পরে বিকাশ-সহ আরও দুই মৎসজীবী। এই দুই মৎসজীবীকে ছেড়ে দিয়ে বিএসএফ নেতাদের ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের জন্য আহ্বান জানানো হলে সেখানেই বিজিবির অতর্কিত গুলিতে প্রাণ হারান বিএসএফ জওয়ান বিজয় ভান সিং। এরপরই সীমান্তে শুরু হয় নয়া তরজা।

Advertisment

ঠিক কী ঘটেছিল?

পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়ে নৌকার মালিক প্রণব মন্ডলদের নৌকা। এরপরই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) আটক করেন প্রণব মন্ডল (৪১) এবং বিকাশ ও অচিন্ত্য মন্ডলকে (২৮)। পরবর্তীতে বিকাশ এবং অচিন্ত্যকে ভারতে ফেরত পাঠিয়ে বিএসএফকে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের জন্য ডেকে পাঠানো হয়। বিজিবির সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বিকাশ মন্ডলকে নিয়ে সেই মিটিংয়ে গিয়েছিল বিএসএফ। অচিন্ত্য দাঁড়িয়ে ছিলেন নদীর পাড়েই। এর পরই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিএসএফ জানায়, তাঁদের পাঁচজন জওয়ান ফ্ল্যাগ মিটিংএ অংশ নিতে যাওয়ার সময় বিজিবি জওয়ানরা গুলিবর্ষণ শুরু করে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন বিএসএফের হেড কনস্টেবল বিজয় ভান সিং (৫০)। এ ঘটনায় জখম হন আরেক বিএসএফ জওয়ান রাজভির যাদব।

আরও পড়ুন- অপর্ণা সেনকে সাবেক ছিটমহলে ঢুকতে ‘বাধা’

কী বলছেন বিকাশ মন্ডল?

"বিজিবির সেনা যখন বলল যে তাঁরা প্রণবকে ছাড়বে না, তখন আমরা সকলেই নৌকাতে ফিরে আসি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওরা গুলি চালানো শুরু করে। নিজেকে বাঁচাতে নৌকায় ভিতর মাথা নীচু করে বসে পড়েছিলাম। তখনও জানতাম না ঠিক কী ঘটছে! পরে দেখলাম এক বিএসএফ জওয়ানের দেহ রক্তে ভেসে যাচ্ছে, আর অন্যজনের হাতে আঘাত লেগেছে।" এই ঘটনায় কার্যত বিধ্বস্ত বিকাশ মন্ডল বলে চলেন, "আমরা নদীর মাঝখানেই ছিলাম। তবু বিজিবির সেনারা বাংলাদেশের মধ্যে প্রবেশ করেছি বলে ধরে নিয়ে গেল। এমনকি আমাদের মাছ ধরার জাল আর যে ইলিশ মাছ ধরেছিলাম সেগুলিও ধরে নিয়ে যায়। আমরা পদ্মা নদীতে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাছ ধরছি। কিন্তু কখনও এরকম ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়নি।"

আরও পড়ুন- ‘ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, শাহর সঙ্গে কথা বলব’, সীমান্তে গুলিকাণ্ডে মন্তব্য বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

পাঁচজনের সংসারে একমাত্র রোজগেরে অচিন্ত্য এক নিশ্বাসে বলে গেলেন, "আমাদের এখন নদীতে মাছ ধরতে যেতে আতঙ্ক লাগছে। বিএসএফ জওয়ানদের জন্য নদীটি নিরাপদ না থাকলে জেলেদের পক্ষেও তা নিরাপদ নয়। আমি জানি না কবে আবার পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে পারব।” অন্যদিকে বাংলাদেশে এখনও আটক থাকা প্রণব মন্ডলের সংসারে নেমে এসেছে অন্ধকার। প্রণবের রেখা মন্ডল বলেন, "ইলিশ মাছের এই সময়টাতে আমার স্বামী প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতো। আমি জানি না কীভাবে আমি আমার চার বাচ্চাকে মানুষ করবো। আমরা চাই বিএসএফ ওঁকে ফিরিয়ে আনুক। মাছ ধরার জন্য এই বছরই জাল এবং অন্যান্য সরঞ্জামও কিনেছিল।"

এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিএসএফের স্পেশাল ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব কুমার সিং বলেন, “এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা এবং মোটেই প্রত্যাশিত নয়। একে অপরের সাথে আমাদের এত ভালো সম্পর্ক রয়েছে।কেন এই জাতীয় ঘটনা ঘটেছে তা জানার চেষ্টা করছি।"

Read the full story in English

Bangladesh Indian army
Advertisment