৫ লক্ষ টাকা তোলা না দেওয়ায় গাছে বেঁধে এক কাপড় ব্যবসায়ীকে মারধর এবং সালিশি করে গ্রাম ছাড়া করার অভিযোগ উঠলো স্থানীয় একদল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে মালদার কালিয়াচক থানার ফতেখানি এলাকায়। এই ঘটনায় আক্রান্ত ব্যবসায়ীর পরিবার কালিয়াচক থানার দ্বারস্থ হলেও চারদিন পরে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। অবশেষে বুধবার ওই ব্যবসায়ী দম্পতি সমস্ত ঘটনার বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানালেন পুলিশ সুপারের কাছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব।
এদিকে কালিয়াচকের ওই ব্যবসায়ীর ওপর আক্রমণ এবং পাঁচ লক্ষ টাকা তোলাবাজির ঘটনায় রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলার সর্ববৃহৎ ব্যবসায়ীদের সংগঠন মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সভাপতি জয়ন্ত কুন্ডু জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বারবার যদি ব্যবসায়ীদের ওপর দুষ্কৃতীদের হামলা নেমে আসে, তাহলে আমরা যাব কোথায়। অবিলম্বে পুলিশ সুপার যাতে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে, সেই আবেদন জানাচ্ছি।
পুলিশকে অভিযোগে কালিয়াচক থানার ফতেখানি এলাকার পোশাক ব্যবসায়ী মহম্মদ রহিম বিশ্বাস জানিয়েছেন, পুরনো একটি মামলার ঘটনায় গত শনিবার এলাকার এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী জহরুল খান এবং তার দলবল তাকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাদের একটি ডেরায় তাঁকে গাছে বেঁধে ব্যাপক মারধর করা হয়। এরপর পাঁচ লক্ষ টাকার তোলা চাওয়া হয়। সেই টাকা না দেওয়ায় আশেপাশের আরও কিছু সাগরেদদের জুটিয়ে সালিশি ডাকা হয়।
আরও পড়ুন- Calcutta High Court: হাইকোর্টে বিরাট ধাক্কা মোদী সরকারেরও! ১০০ দিনের কাজ নিয়ে নজিরবিহীন নির্দেশ
সেই সালিশির মাধ্যমে তাদের পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। আর এই ঘটনার পর থেকেই গত চারদিন ধরেই ওই ব্যবসায়ী পরিবার নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছেন। এমনকী ফতেখানি স্ট্যান্ডের কাছে ওই ব্যবসায়ী তার নিজের পোশাকে শোরুমও খুলতে পারছেন না।
আরও পড়ুন- Mamata Banerjee: 'বাংলা দিবস' পালনের চিঠি রাজ্যকে, 'চরম অসম্মান বলে মনে করছি', BJP-কে তুলোধনা মমতার
এদিকে ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী অসেফা বিবি জানিয়েছেন, ২০২২ সালে সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে তার স্বামীর কাছ থেকে এলাকার ওই দুষ্কৃতী জহুরুল খান দলবল নিয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা তোলা চেয়েছিল । টাকা না দিতে পারায় তখন স্বামীকে মারধর করা হয়। এরপর কালিয়াচক থানায় মামলা দায়ের হয়। দুই বছর জেল খাটে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি ও তার দলের কয়েকজন। এক মাস আগে ওরা জামিনে ছাড়া পেয়েছে। এরপর থেকেই নতুন করে আমাদের পরিবারের ওপর হামলা চালানো ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত শনিবারে আমার স্বামীর ওপর এই হামলার ঘটনার পর গ্রাম ছাড়া হয়ে রয়েছি। বাধ্য হয়ে দিন পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছি।
আরও পড়ুন- Calcutta High Court: হাইকোর্টে বিরাট ধাক্কা মোদী সরকারেরও! ১০০ দিনের কাজ নিয়ে নজিরবিহীন নির্দেশ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জহুরুল খান একসময় তৃণমূলের দাপুটে নেতা ছিল। জেলার একাধিক বিধায়ক এবং নেতৃত্বের সাথে তার ছবি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজেপির দক্ষিণ মালদার সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুরি বলেন, তৃণমূল দলের মদতেই দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। অবিলম্বে পুলিশকে এব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তৃণমূলের জেলার মুখপাত্র আশীষ কুন্ডু বলেন, পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে ওই ব্যক্তির সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপি ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।