শিব নানা নামে পুজিত হন। ভোলেবাবা, শঙ্কর, শম্ভু। এবার গরু পাচার কাণ্ডে ধৃত অনুব্রত মণ্ডলের শিবভক্তিও বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে তদন্তকারীদের কাছে। কেন তাঁর রাইসমিলগুলির নামে শিব যুক্ত হয়েছেন? তা-ও আবার জোড়াশিব! এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে তদন্তের নতুন দিশা বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা।
গরু পাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডলের সম্পত্তি খতিয়ে দেখতে গিয়ে তাজ্জব বনেছেন তদন্তকারীরা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা, পাচারের অর্থে কোটি-কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন অনুব্রত। সেই সব সম্পত্তির জন্য গত কয়েকদিন ধরেই বীরভূমে লাগাতার তল্লাশি করেছে সিবিআই। তাঁর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটের নথিও পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
এই তল্লাশি করতে গিয়ে রাইসমিলের যে সন্ধান পেয়েছে সেই নাম অবাক করেছে তদন্তকারীদের। কোনওটা শিবশম্ভু, কোনওটা আবার ভোলে ব্যোম, কোনওটা শুধুই শঙ্কর। কেন শিবের নামেই মিলের নাম তা নিয়েও খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে সিবিআই ও ইডি। এরপর শিবের নামে বীরভূমে আর কোনও রাইসমিল বা সম্পত্তি আছে কিনা সেদিকে নজর দিতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। এদিকে কেন শিবের নামেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম, তাতেও উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সূত্রের খবর, লোকসভা, বিধানসভা বা পুর-পঞ্চায়েত নির্বাচন হোক, তার আগে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি নেপালের পশুপতিনাথ মন্দিরে পুজো দিতে যান। দীর্ঘদিন ধরেই এই রেওয়াজ চলে আসছে। অধিকাংশ সময়েই নেপাল সফরে কেষ্টর সঙ্গী হতেন বীরভূমেরই এক তৃণমূল নেতা। বেশিরভাগ সময়ে গাড়ি নিয়েই সঙ্গীদের সঙ্গে নেপাল যেতেন কেষ্ট মণ্ডল। ফি বার ভোটের আগে কেষ্টর নেপাল সফর শুধুই কি পুজো দেওয়ার জন্য? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কারণও। সব দিক খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
আরও জানা গিয়েছে, অনুব্রত মণ্ডল বাড়িতে প্রতিদিন সকালে ঘণ্টাখানেক ধরে শিব ও কালীর পুজো করতেন। পুজো না করে তিনি বাড়ির বাইরে পা রাখতেন না। এমনকী উনি যে পার্টি অফিসে বসতেন সেখানেও শিব ও মা তারা'র প্রতিকৃতি রাখতেই হতো।
আরও পড়ুন- ‘হাত পাকানো শুরু হয়েছে, মার একটাও বাইরে পড়বে না’, তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিলীপের
পশুপতি মন্দিরে পুজো দিতেই অনুব্রতর কনফিডেন্স বেড়ে যেত বলে সূত্রের খবর। শুধুই কি নেপালে পুজো দিতে যেতেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি? নেপালে অনুব্রত মণ্ডলের কোনও সম্পত্তি আছে কিনা তা নিয়ে অবশ্য এখনও কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। পুরো বিষয়টি সিবিআই তদন্ত করে দেখছে বলে সূত্রের খবর।
শিব ভক্ত অনুব্রত তাই রাইসমিলের নাম রেখেছেন কৈলাসপতির নামেই। মনে করা হচ্ছে, শিবভক্ত হওয়ার জন্যই অনুব্রত মণ্ডল ধানকলগুলির এই ধরনের নাম রেখেছেন। তাঁর দেবরক্ষী সায়গল হোসেনকে আগেই গ্রেফতার করেছে সিবিআই। এবার তাঁর রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠদের সম্পর্কে তথ্য-তালাশ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বীরভূমের কোন কোন বিধায়ক বা নেতা সর্বক্ষণ তাঁর সঙ্গী ছিলেন, তাঁদের সম্পত্তি নিয়েও খোঁজখবর নিচ্ছেন সিবিআই আধিকারিকরা।