Advertisment

Hooghly News: মা-বাবা এবং বোনকে নৃশংস হত্যা, ৩ বছর পর ফাঁসির সাজা প্রমথেশ অঙ্কের মাস্টারের

Hooghly News: খুনের মামলায় সরকারি আইনজীবী শংকর গঙ্গ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মোট ১৪ জন খুনের মামলায় স্বাক্ষী দিয়েছে। মামলা চলাকালীন অভিযুক্ত জেলেই ছিল।

author-image
Uttam Dutta
New Update
Hooghly news: পরিবারের সবাইকে শেষ করে নিজে আত্মঘাতী হবে এরকমই সিদ্ধান্ত নেয় প্রমথেশ

Hooghly news: পরিবারের সবাইকে শেষ করে নিজে আত্মঘাতী হবে এরকমই সিদ্ধান্ত নেয় প্রমথেশ

Hooghly News: আবার ফাঁসির নির্দেশ। গত মাসেই নৃশংস খুনের অভিযোগে একসঙ্গে ৭ জনকে ফাঁসির আদেশ শুনিয়ে ছিল চুঁচুড়া আদালত। এদিন আবার একসঙ্গে তিনজনকে নৃশংস ভাবে খুন করার জন্য আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিলেন চুঁচুড়া আদালতের বিচারক। সোমবার চুঁচুড়া আদালতের বিচারক সঞ্জয় কুমার শর্মা শুনানির পর পেশায় গৃহশিক্ষক প্রমথেশকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন।

Advertisment

২০২১ সালের ৮ নভেম্বর ধনেখালি থানার দশঘড়া গ্রামের রায়পাড়াতে প্রমথেশ তাঁর বাবা অসীম ঘোষাল (৬৮),মা শুভ্রা ঘোষাল ও বোন পল্লবী চট্টোপাধ্যায় (৩৮) এর গলার নলি ও হাতের শিরা কেটে খুন করে। সেই সঙ্গে প্রমথেশ নিজের হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আহত রক্তাত্ব অবস্থায় পুলিশ প্রমথেশকে উদ্ধার করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই ঘটনায় পল্লবীর স্বামী পার্থ চট্টোপাধাধ্যায় ধনেখালি থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পল্লবী ভাইফোঁটা দিতেই বাপের বাড়ি এসেছিলেন। পুলিশ তদন্তে নেমে হাসপাতালে চিকিৎসারত প্রমথেশ সুস্থ হলেই তাকে গ্রেফতার করে। খুনের মামলায় সরকারি আইনজীবী শংকর গঙ্গ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মোট ১৪ জন খুনের মামলায় স্বাক্ষী দিয়েছে। মামলা চলাকালীন অভিযুক্ত জেলেই ছিল।                 

বছর তিনেক আগের ঘটনা। সেইসময় কোভিড পরিস্থিতি চরমে। ধনেখালি থানার দশঘড়া গ্রামে এক মর্মান্তিক ঘটনায় সারা বাংলা কাঁপিয়ে দিয়েছিল। নিজের বাবা, মা, ও বিবাহিতা বোনকে প্রথমে ভারী কিছু জিনিস দিয়ে মাথায় আঘাত করার পর ব্লেড দিয়ে তাঁদের হাতের শিরা কেটে নৃশংস ভাবে খুন করেছিল অঙ্কের মেধাবী মাস্টার প্রমথেশ ঘোষাল। নিজেও সারা দেহে ব্লেড দিয়ে চিরে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তড়িঘড়ি পুলিশ তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে সে বেঁচে যায়। পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়। এই খুনের মোটিভ অন্যান্য পাঁচটা খুনের মতো ছিল না। তৎকালীন পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছিল এক মর্মান্তিক কাহিনী। প্রমথেশ পড়াশোনায় খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। অংকে অনার্স নিয়ে পাস করার পরও তার কোন চাকরি না জোটায় বাড়িতেই সে প্রাইভেট টিউশনি করতো। দশঘড়া রায়পাড়ায় একটি ছোট্ট ভাড়া বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা অসীম ঘোষাল ও মা শুভ্রা ঘোষালকে নিয়ে ছিল সংসার। একমাত্র বোন পল্লবীর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। সেইসময় পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছিল মানসিক অবসাদের জেরেই এই মর্মান্তিক কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে প্রমথেশ। তবে সে যে রীতিমতো পরিকল্পনা করেই এই খুনগুলো করেছে এটা পরিস্কার। সন্ধ্যাবেলায় সে বাজার থেকে নতুন ব্লেড কিনে এনেছিল। যে ব্লেড দিয়ে সে পরিবারের লোকজনদের গলার নলি এবং হাতের শিরা কেটে দেয়। কিন্তু এই অবসাদের কারণ কী? কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে গেছে বেশ কয়েকটি ঘটনা। যেগুলো অঙ্কের মেধাবি স্যারকে ভেতর থেকে খানখান করে দিয়েছিল।

আরও পড়ুন মারাত্মক 'প্ল্যান' ছিল কাশ্মীরের জঙ্গি জাভেদের, ক্যানিংয়ে বসেই সাংঘাতিক পরিকল্পনা

Advertisment

(১) দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া বাড়িতে থাকত। মাথার ওপর নিজস্ব কোনও ছাদ ছিল না। (২) বয়স বর্তমানে ৪১ বছর বয়স,সমসাময়িক যারা সবার বিয়ে হয়ে গেলেও তার হয়নি। কারণ না আছে তাদের নিজস্ব বাড়ি ঘর না জমিজমা। তারপর নির্দিষ্ট ভাবে কোনও চাকরি বা ব্যবসা কিছুই নেই। গ্রামবাংলায় বিয়েতে সাধারণত ছেলের বাড়ির আয়,জমিজমা, বাড়িঘর এসব দেখা হয়। (৩) বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা,মা। বাবার সেরকম রোজগার পাতি নেই। মাসে বাবা-মার ওষুধ খরচাই লাগে কয়েক হাজার টাকা। বোনের স্বামীর রোজগারপাতি সেরকম কিছু নেই। সেদিকেও অর্থ সাহায্য করতে হয় প্রতিমাসে। (৪) অংকে অনার্স ছিল প্রমথেশ। তাই তার কাছে টিউশনি পড়তে আসত প্রচুর ছাত্র। একটা সময় বাড়িতে টিউশনি করে তার মাসিক আয় হত প্রায় ৬ অঙ্কের কাছাকাছি। একাকীত্ব কাটাতে মদের নেশাও ধরেছিল। বাড়িতে বাবারও পানাসক্তি ছিল। মদ খেতে খেতে শরীরে জটিল অসুখ কখন বাসা বেঁধেছে টের পায়নি প্রমথেশ। বড় দেরিতে টের পেল। জানতে পারল লিভার ক্যানসার হয়েছে তার। মানসিক অবসাদের শুরু।  (৫) লকডাউন এবং শারীরিক ব্যাধি। এই দুই কারণে পড়ুয়াদের সংখ্যা হু হু করে নামতে শুরু করল। আয় এসে দাঁড়াল ৪ ভাগের ১ ভাগ। মানসিক চাপ আরও বাড়তে শুরু করল। (৬) শুরু হলো পুঁজি ভাঙা। গত কয়েক বছর ধরে তিলে তিলে জমানো টাকা সংসার এবং রোগের চিকিৎসার পিছনে জলের মতো বেরিয়ে যেতে শুরু করল। 

আরও পড়ুন প্রেমঘটিত কারণেই মন্দারমণির হোটেলে খুন বিবাহিত তৃণমূল নেতা, তদন্তে নয়া মোড়

মারণব্যাধিতে আক্রান্ত। যার ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিকিৎসা করাতে করাতে লাখ লাখ টাকা বের হয়ে গেল। একে শরীর ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে শুরু করেছে তার ওপর ভবিষ্যতের  চিন্তা। মানসিক এবং শারীরিক ভাবে চূড়ান্ত অবসাদে চলে গিয়ে ছিল প্রমথেশ। প্রচন্ড মৃত্যুভয় তাকে গ্রাস করে। কিন্তু সে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। সে চলে গেলে কে দেখবে এনাদের? তাই পরিবারের সবাইকে শেষ করে নিজে আত্মঘাতী হবে এরকমই সিদ্ধান্ত নেয় প্রমথেশ। যার ফলশ্রুতিতে দশঘড়ার রায়পাড়া খবরের শিরোনামে চলে আসে। হুগলির পুলিশ সুপার(গ্রামীণ) কামনাশিস সেন বলেন, আদালত ও বিচার ব্যবস্থার উপর সবাই কে আস্থা রাখতে হবে। তাই অপরাধ যত বড় হোক না কেন শাস্তি হবেই।

West Bengal Hooghly West Bengal News hooghly news west bengal latest news
Advertisment