Complaints of closure of several factories during Tmc period in Haldia: ২০১১ সালের পর থেকে ঘটা করে প্রায় প্রতি বছর শিল্প সম্মেলন করলেও গত ১৪ বছরে নতুন বড় কোনও শিল্প আসেনি শিল্প শহর হলদিয়ায় (Haldia), এমনই অভিযোগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের। যদিও তাঁদের সেই দাবি উড়িয়েছেন শাসকদলের শ্রমিক নেতা।
২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। হলদিয়ায় বিরোধী দলগুলির শ্রমিক নেতাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদাসীনতার জন্যই হলদিয়ায় গত এক দশকেও নতুন কোনও বিনিয়োগ আসেনি। একসময় হলদিয়া উত্তর-পূর্ব ভারতে এক উজ্জ্বল শিল্পনগরী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। তবে বর্তমান সরকারের আমলে সেই পরিস্থিতি এখন ধ্বংসের মুখে বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। সম্প্রতি হলদিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে এসে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও অভিযোগের সুরে বলেছেন, "শ্রমিকরা বুঝে গেছেন বর্তমান সরকারের নীতির জন্যই কর্মসংস্থান হচ্ছে না।"
সিটু নেতা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পরিতোষ পট্টনায়েক বলেন, "হলদিয়া সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও পরিকল্পনা নেই। তৃণমূলের তোলাবাজির জন্যই আজ গোটা হলদিয়া শিল্পনগরী ধ্বংস হচ্ছে। একটার পর একটা কারখানা বন্ধ হচ্ছে। গোটা বাংলার পাশাপাশি হলদিয়াতেও আজ কাজ নেই। যুবকদের পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বাইরে যেতে হচ্ছে। ২০১১-এর পর হলদিয়ায় নতুন কোনও শিল্প-কারখানা নেই।"
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: স্যালাইন-কাণ্ডে সাসপেনশনের প্রতিবাদ, মেদিনীপুর মেডিকেলে কর্মবিরতিতে চিকিৎসকরা
BMS নেতা প্রদীপ বিজলি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গবাসীকে ধোঁকা দিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ হলদিয়ায় ওঁর সরকার আসার পর ৫-৬টা কারখানা বন্ধ হয়েছে। তার খোঁজ-খবর উনি নেননি। হলদিয়ায় শিল্প ধুঁকছে সেগুলোর ওপর নজর নেই। বহু শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। হলদিয়ায় শিল্প বন্ধ হয়ে যে পরিমাণ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন তার চেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন অন্য দলের ঝাণ্ডা ধরতে গিয়ে।"
তবে বিরোধীদের সব অভিযোগ উড়িয়েছেন হলদিয়ার INTTUC নেতা মিলন মণ্ডল। তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর আমলেই এখানে শিল্পের প্রসার ঘটেছে। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় সেটার পুনর্জন্ম হয়েছে। সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রেও শিল্পের উন্নতি হয়েছে। সারা বাংলার কোটি-কোটি শ্রমিক সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।"
আরও পড়ুন- Bengal Weather Update: গতি পাবে উত্তুরে হাওয়া, কনকনে শীতে কাঁপবে বাংলা! ঠান্ডার জমাটি মেজাজ কবে থেকে?
তবে হলদিয়ায় বেশ কিছু কারখানায় ২০১১ সালের পর তালা ঝুলেছে। তেমনই কয়েকটি কারখানা হল...
রোহিত ফেরো টেক (কারখানার মেশিনারি থেকে ইট সবই চুরি হয়ে গিয়েছে)। হলদিয়ার ভুঁইয়ারচকে রয়েছে এই কারখানা।
উরাল ইন্ডিয়া লিমিটেড (ভারি ট্রাক তৈরির কারখানা), হলদিয়ার ভবানীপুর থানার কাছে ১১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ১০০ একর জমি এখন ঘাস জঙ্গলে ভরা। কারাখানা BIFR-এ চলে গেছে।
চকদ্বীপা লজিস্টিক কার্গো হাব। ১১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ডান দিকে ২০০ একর জমি নেওয়ার পর ফেলে রেখেছে শিল্প সংস্থাটি। জমির চারপাশের পাঁচিল থেকে প্রতিদিন ইট চুরি যাচ্ছে। ওই শিল্প সংস্থা এখন জমি ফেরত দিয়ে হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে ১৫০ কোটি টাকা ফেরত চেয়েছে।
আরও পড়ুন- Mamata Banerjee-Mohan Bhagwat: 'ভারতের নাম ভুলিয়ে দেবে দেখছি', ভাগবতের প্রকৃত স্বাধীনতা মন্তব্য 'দেশদ্রোহী' কটাক্ষ মমতার
রোহিত ফেরোটেকের মতো মডার্ন ইন্ডিয়া কনকাস্ট নামের ফেরো টেক কারখানাও ধুঁকছিল। বিআইএফআর বা কোম্পানি ল'বোর্ডে চলে যায়। শেষমেশ নিলামে কাসভি স্টিল নামে নতুন একটি শিল্প সংস্থা কিনে নিয়ে বছর দেড়েক আগে। রোহিত বা মডার্ন কনকাস্টের মতো বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী শিল্প সংস্থা দুটি সরকারের কাছে স্পেশাল ইনসেনটিভ চেয়েছিল এবং বিদ্যুতে ছাড় চেয়েছিল। দুটি সংস্থাই অ্যালয় স্টিলের কাঁচামাল ফেরো ম্যাঙ্গানিজ তৈরি করত যার ১০০ শতাংশ বিদেশে রপ্তানি হয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কুঁকড়াহাটির কাছে শালুকখালিতে হলদিয়া বন্দরের 'ডক-টু'র শিলান্যাস করেছিলেন। ওই সময় তিনি ছিলেন UPA সরকারের রেলমন্ত্রী। জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়কে সঙ্গে নিয়ে রিমোটে সুইচ টিপে হাতিবেড়িয়া থেকে শিলান্যাস করেন ওই প্রকল্পের। সেই প্রকল্প আজও অধরা।