এবার বাজি বাজারে স্টলের আকাল, নেই কারিবারিদেরই দেখা। টালা বাজি বাজার ছাড়া হাওড়া ও কলকাতার বাকি দুটি বাজারের বেহাল দশা। স্টলের পর স্টল ফাঁকা, বুকিং হয়নি। এবার গ্রীণ বাজির উৎপাদনও কম হয়েছে। বাজি তৈরির নয়া ফর্মুলা, শেষ মুহূর্তে উৎপাদন সব মিলিয়ে কারবারের দফারফা অবস্থা। রংমশালা, ফুলঝুড়ি, তুবড়ির আকাল রয়েছে যথেষ্ট। হাঁসফাঁস অবস্থা বাজি কারিবারিদের।
হাওড়ার ডুমুরজলাতে ২০১৯-এ বাজি বাজারে ২২০টা স্টল হয়েছে। করোনা আবহ কাটিয়ে এবার ৮৭টা স্টল করেছে উদ্য়োক্তারা। কিন্তু সেখানে মাত্র ২৩টি স্টল বসেছে। বাকি স্টলের কোনও বুকিং হয়নি। এই আপশোষের কথা জানিয়েছেন মেলা কমিটির সম্পাদক সৌমিত্র মণ্ডল। সৌমিত্রবাবু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'স্টলের বুকিংয়ের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে আমরা কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। স্টল প্রতি খরচ হয়েছে ২২,৬০০টাকা। তার মধ্য়ে ২৩ জন টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা কিভাবে দেব জানি না। ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্য়ে পড়েছি, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছি। জমির জন্য অর্থ, লাইসেন্স, পুরসভা, ফায়ার, ইলেকট্রিসিটি, সিসিটিভি, ফায়ার স্ট্রিংগুইজারসহ নানাখাতে খরচ রয়েছে।' কেন এই পরিস্থিতি? সৌমিত্র মণ্ডলের কথায়, 'প্রথমত আদৌ বাজি বিক্রি হবে কিনা তা নিয়ে ব্য়বসায়ীদের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য ছিল না। ষষ্ঠীর দিন তা স্পষ্ট হয়। এত তাড়াতাড়ি উৎপাদন সম্ভব নয়। অর্ধেক বিক্রেতা বাজি যোগার করতে পারিনি।' এই বাজি ব্যবসায়ীর স্পষ্ট কথা, 'সরকার বলে দিতে পারে না শিল্পটা বন্ধ করে দিতে!'
কালিকাপুর বাজি বাজারের দশাও বেহাল। এখানে একটা সময় ৩৬টা স্টল হত। এবার হয়েছে ১৬টা স্টল। ১২ স্টলে দোকানীরা বসেছে। ৪টে ফাঁকা রয়ে গিয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন অন্যতম উদ্যোক্তা শ্যামাপ্রসাদ মজুমদার। শ্যামাপ্রসাদবাবুর কথায়, 'শব্দবাজি নয়, আমরাও চাই পরিবেশ বান্ধব বাজি হোক। কিন্তু দুঃখের বিষয় কালীপুজোর কয়েক দিন আগে এসব নিয়ে হইচই হয়। ৬ মাস আগে আলোচনা কেন হয় না? আগে থেকে আমাদের ডেকে সরকার বক্তব্য শুনলে আমরা হয়রান হতাম না। সামগ্রিক ভাবে শিল্প মার খাচ্ছে।' বেহালার বাজি বাজারের দশা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কারবারিরা।
আরও পড়ুন- তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে CPM-কে পাশে চান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, কী উত্তর বামেদের?
যদিও টালা বাজি বাজারে ৪৪টি স্টল বসেছে। এখানে দীর্ঘ দিন ধরেই স্টল করে আসছেন সন্দীপ বসু। তাঁর কথায়, 'গ্রীণ বাজিতে আরও সমস্যা হয়েছে, বেরিয়াম দিয়ে বাজি তৈরি হত। নয়া পদ্ধতিতে এত দ্রুত উৎপাদন সম্ভব নয়। বাজির দাম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। এরাজ্যে রংমশাল, চরকি, তুবড়ি ছাড়পত্র পেয়েছে। এই তিনটে আইটমকে কেমিক্যাল কমবেশি করে ভেরিয়েশন করা হয়। কিউআর কোড নিয়েই সমস্যা হচ্ছে। সব জায়গায় কিউআর কোড আসছে না। পরিবেশ রক্ষা করে বাজি পোড়াতে হবে।' বাজি পোড়ানোর পর পুরনো প্যাকেট ফেরত দিলে নগদ টাকা দেওয়া হবে বলে তিনি ঘোষণা করেছেন।
তবে বাজি কারবারের সংকটের মধ্যে আড়ালে-আবডালে ভিন্ন মত পোষণও করছেন কেউ কেউ। ১৯৯০-তে চকোলেট বাজি নিষিদ্ধ হলেও দেদার চকোলেট বাজির শব্দ শোনা যায়। কালিপটকা, শেল বা শটের শব্দও শোনা যায়। ২০১৯-এ কালীপুজোর দিন অর্ডার হয় শট বিক্রি করা যাবে না। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বাজি কারিবারি বলেন, 'এসব নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি করে কেউ কেউ ব্যাপক ফায়দা লুটেছে। আইনের কড়াকড়িতে এসব বাজি বিক্রি করতে পারছেন না অনেকে।' এদিকে যাঁরা এখন কারবারের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের দাবি, সরকারের নজর দেওয়া উচিত এই ব্যবসার দিকে। তা নাহলে গ্রীণ বাজি করলেও ক্রমশ এই শিল্পে যুক্ত হাজার হাজার মানুষের জীবীকা ধাক্কা খেতে বাধ্য।