বাতিল করে দেওয়া হয়েছে সমাবর্তন, বন্ধ থাকছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ময়দানে শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা। ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য ড. বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বাড়ির সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ চলছে ১৭ দিন ধরে। বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলার মান-সম্মান বজায় রাখতেই সমাবর্তন বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। পাশাপাশি মেলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বক্তব্য, একই সঙ্গে তিনি-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় এফআইআর হয়েছে মেলাকে কেন্দ্র করেই। যে মেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, সেক্ষেত্রে অকারণে ঝামেলায় জড়াতে চাইছে না কর্তৃপক্ষ।
উপাচার্য ড. বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'আমাকে বন্দি করে রেখেছে। আমি না গেলে সমাবর্তনের মনিটরিং, সুপারভিশনটা করবে কে? অতিথিরা যখন আসবেন তখন রাজ্য সরকারের পুলিশ ওদের নিরাপত্তা দেবে। তখন এই সমস্ত লোকেরা সহজেই ভিতরে ঢুকে অপমান করতে পারে সম্মানীয় অতিথিবর্গকে। সেই অপমান শুধু বিশ্বভারতীর হবে তাই নয়, অপমানটা হবে পশ্চিমবঙ্গের। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল অব ইন্ডিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। বাঙালিদের ওপর ধারনা সর্বভারতীয় স্তরে ভাল না, এসব ঘটলে আরও খারাপ হবে। এই কারণে দেখলাম এই পরিস্থিতিতে সমাবর্তন বাতিল করাই ভাল। রাজ্য সরকারও সাহায্য করছে না।'
বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বাড়ির কাছে পূর্বপল্লীর গেটের সামনে মঞ্চ বেধে চলছে ধরনা কর্মসূচি। উপাচার্য বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া আমার একেবারে বন্ধ। বুধবার বেরিয়েছিলাম ওরা ঝামেলা করল। আমি দেখলাম ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। তাই সমাবর্তন নিয়ে চিন্তা বাড়ছিল। এত বড় মাপের মানুষজন আসবেন আমি ঝুঁকি নেব না। প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও সমস্ত বিষয় জানিয়েছি। এটা পশ্চিমবঙ্গের অপমান। আমাকে বিচারপতিকে বলতে হল এই পরিস্থিতিতে সমাবর্তন করা যাবে না। আপনাকে আর ডাকতে পারছি না। মান-সম্মান সব চলে গেল। আমাদের এত অসম্মান হচ্ছে চারিদিকে। আমাদের সিসিটিভিও ভেঙে দিয়েছে।'
আরও পড়ুন- জামিনের পরেই ফের গ্রেফতার সাকেত, রেগে আগুন মমতা, সাংসদদের পাঠালেন গুজরাটে
এর আগে মিছিল করে গিয়ে মেলার মাঠের তৈরি হওয়া পাঁচিল উপরে ফেলা হয়েছিল, গেট ভাঙচুর করা হয়েছে। মেলা নিয়ে তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে বিগত কয়েক বছর ধরেই। মেলা চার দিন না ছয়-সাত দিন হবে তা নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। এবারে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বপল্লীর মাঠে পৌষ মেলা বসছে না। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, 'মেলা করতে আমিও চাই। প্রথমবার সেখানে গান শুনেছি, যাত্রা দেখেছি। তার পরের বার দেখলাম মেলাতে ৭৫ লক্ষ টাকা রোজগার হল আর ৯৫ লক্ষ টাকা খরচ হল। বিশ্বভারতীকে ২০ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। ভর্তুকি দিয়ে কেন মেলা করব? কার্যত এই টাকা চুরি গেছে। পরের বছর অনলাইনে বুকিং করার ব্যবস্থা করলাম। তাতে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা রোজগার করলাম। চার দিনে মেলা ভাঙতে হবে। আমরা চারদিনে মেলা ভাঙতে পারলাম না। ৬ দিন লেগে গেল। পঞ্চম দিনে আমাদের ১২ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করল, আমরা নাকি কোনও মহিলার শ্লীলতাহানি করেছি। আমার বিরুদ্ধে এফআইআর করল কারও পয়সা চুরি করেছি, সোনার চেইন চুরি করেছি। মিথ্য অপবাদ মেনে নেওয়া যায়?'
উপাচার্যের বক্তব্য, 'এই মেলা বিশ্বভারতীর নিজস্ব মেলা নয়। ট্রাস্টির সঙ্গে সহযোগিতা করে মেলার আয়োজন করা হত। ক্ষতিপূরণ ও পরিস্কার করার জন্য আমাদের ৪০ লক্ষ টাকাও শেষ বছরে খরচ হয়েছিল। আমার বন্দি অবস্থায় মন্ত্রী, জেলাশাসক এসেছিলেন বৈঠক করার জন্য। আমি জানিয়ে দিয়েছি, আমাকে বের হতে দিচ্ছে না। আজ নয় পুলিশের গাড়ি পাঠাচ্ছেন। কাল কি হবে? তাছাড়া তখন বিষয়টা বিচারাধীন ছিল।' নানা বিতর্কের মাঝে এবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী রবিবারের সমাবর্তন উৎসবও হচ্ছে না, একইসঙ্গে পূর্বপল্লীর মাঠে পৌষ মেলাও বন্ধ থাকছে।