ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় দোষী ৬ জনকে যাবজ্জীবন করাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন লালবাগ আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা বিচারক জিতেন্দ্র গুপ্তা। এছাড়া প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের জেলের সাজা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিচারকের এই রায় শুনে আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন আসামীরা। এই ব্যাপারে সরকারি পক্ষের আইনজীবী আব্দুল খালেক ফিটু বলেন, "এই কেসে মোট ১৯ জনের সাক্ষী গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ৩০২ ধারায় খুন ও ৩৪ ধারায় সম্মিলিত কার্যকলাপের অভিযোগে দোষীদের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।"
২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন আবুল কালাম ওরফে টিয়ারুল শেখ। নতুন ভোটার দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে রানিতলা থানার অনুপনগরের বাসিন্দা টিয়ারুল সকালে বালিপাড়া সরকার পাড়া ১৮৮ নম্বর বুথে ভোটের লাইনে দাঁড়ান। অভিযোগ, ভোটের লাইনে দাঁড়াতেই তৃণমূল কর্মী লালু শেখ, বিয়ারুল শেখ, মাসু শেখ, কামারুন শেখ, তাহজুল শেখ এবং আবু হেনা বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকে টিয়ারুল ও তার পরিবারকে। তারই প্রতিবাদ করলে ভোটের লাইন থেকে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।
তার পরেই তাঁকে গাছের ডাল দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এই অবস্থায় বাবাকে বাঁচাতে ছুটে যায় তার ছেলে মাহাতাব। ততক্ষণে বুথের কংক্রিটের দেওয়ালে চেপে ধরে এলোপাথাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় ওই কংগ্রেস কর্মীকে।
আরও পড়ুন- Abhishek Banerjee: 'সন্ত্রাসের পাগলা কুকুর লালন করছে পাকিস্তান', টোকিও-র মাটিতে ইসলামাবাদকে ধুয়ে দিলেন অভিষেক
রক্তাক্ত টিয়ারুল বাড়ির দিকে ছুটতে থাকে, এক সময় পেট চিরে তার নাড়ি-ভুড়ি পর্যন্ত বেরিয়ে যায়। ছেলে মাহাতাব তাকে উদ্ধার করে নসিপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে তাকে লালবাগ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাস্তাতেই টিয়ারুলের মৃত্যু হয়। এর আগে ওই বুথে তৃণমূল কংগ্রেস ছাপ্পা ভোট করছিল বলে অভিযোগ তোলে বাম-কংগ্রেস জোট। ওই দিন সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল বুথে। সেক্টর আধিকারিক বুথে পৌঁছালে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্ত কিছুক্ষণ পরেই আবার উত্তেজনা শুরু হয়। আর তাতেই খুন হতে হয় কংগ্রেস কর্মী টিয়ারুল শেখকে।
আরও পড়ুন- Kolkata News Live Update:দিল্লিতে আজ মোদীর নেতৃত্বে নীতি আয়োগের বৈঠক, যোগ দিচ্ছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মৃতের দাদা আইজুদ্দিন শেখ বলেন,” রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী সক্রিয় হলে ভাইকে এই ভাবে দফায় দফায় আঘাত করে খুন করতে পারত না তৃণমূলের গুণ্ডা বাহিনী।" এদিকে, এই ঘটনায় অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করে। অবশ্য তাদের মধ্যে ৫ জন জামিনে মুক্ত হলেও এতদিন জেল হেফাজতে ছিল লালু শেখ।
আরও পড়ুন- Kolkata Metro: যাত্রী স্বার্থে যুগান্তকারী উদ্যোগ কলকাতা মেট্রোর! বাম্পার সুবিধায় প্রশংসার বন্যা
এই খুনের ঘটনায় তদন্তকারী পুলিশ অফিসার গদাধর ঘোষাল ও সাব-ইন্সপেক্টর সাহাবুদ্দিন আদালতে প্রায় ৪৭০ পাতার চার্জশিট জমা করেন। আদালতের রায় শুনে মৃতের পুত্র মাহাতাব শেখ বলেন, "আদালতের প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল। আদালতের এই রায় শোনার অপেক্ষায় ছিলাম।" এদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবী সাহানা পারভিন বলেন, "আমার মক্কেলদের ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আমরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।"