/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/05/cyclone-shakti-2025-10-05-08-38-21.jpg)
'তুফানি তাণ্ডবের' আশঙ্কা, জারি হাই অ্যালার্ট
Cyclone Montha: আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’! অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডিশা, তেলেঙ্গানা এবং ছত্তিশগড়ে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় শুরু হয়েছে প্রস্তুতি পর্ব। ওডিশায় হাই অ্যালার্ট জারি করেছে প্রশাসন। ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের (IMD) পূর্বাভাস অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্বে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হয়ে মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবরের মধ্যে ‘শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘মন্থা’।এই নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ থেকে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং ২৭ অক্টোবরের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। ২৮ অক্টোবর সকালে এটি ‘প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হবে বলে পূর্বাভাস।
ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা বা রাতে অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাডা উপকূলের কাছাকাছি আঘাত হানতে পারে। স্থলভাগে আঘাতের সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে,হাওয়ার গতিবেগ ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করেছে IMD।
এদিকে, আরব সাগরের পূর্ব-মধ্য অংশেও একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে যা রবিবার সকালে মুম্বই থেকে প্রায় ৭৬০ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ঘণ্টায় ১৩ কিমি বেগে অগ্রসর হচ্ছে। যদিও এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত কিছু নিশ্চিত করেনি আবহাওয়া দফতর।
দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যে সতর্কতা
ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’র প্রভাবে আগামী তিন দিন অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডিশা, তেলেঙ্গানা ও ছত্তিশ গড়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশ: ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত রেড অ্যালার্ট
ওডিশা: ২৮ ও ২৯ অক্টোবর রেড অ্যালার্ট
তেলেঙ্গানা ও ছত্তিশগড়: ২৮ অক্টোবর রেড অ্যালার্ট
তামিলনাড়ু: ২৭ ও ২৮ অক্টোবর অরেঞ্জ অ্যালার্ট
ওডিশা সরকার রাজ্যের সব ৩০টি জেলাকে সতর্ক করেছে। জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। মৎস্যজীবীদের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীদের দ্রুত ফিরে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে। উদ্ধারকারী দলগুলি গঞ্জাম থেকে বালেশ্বর পর্যন্ত উপকূলজুড়ে টহল দিচ্ছে। এদিকে, পুরী জেলা প্রশাসন ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের সমুদ্র সৈকতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ছিল পোর্ট ব্লেয়ার থেকে প্রায় ৬২০ কিমি পশ্চিমে, চেন্নাই থেকে ৭৮০ কিমি দূরে, বিশাখাপত্তনম ও কাকিনাডা থেকে ৮৩০ কিমি দূরে এবং গোপালপুর থেকে প্রায় ৯৩০ কিমি দূরে।
আবহাওয়া দফতরের মধ্যাহ্ন বুলেটিন অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে এবং ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা বা রাতে অন্ধ্র উপকূলে ৯০-১০০ কিমি বেগের ঝোড়ো হাওয়াসহ আঘাত হানবে।
পশ্চিমবঙ্গে কতটা প্রভাব?
আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ মূলত অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়লেও বাংলায় সরাসরি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম। তবে ঘূর্ণিঝড়ের জেরে সমুদ্র উত্তাল থাকবে। সেই কারণে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
সোমবার কোথায় কোথায় বৃষ্টি?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আপাতত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই, তবে পরবর্তী পরিস্থিতি ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথের ওপর নির্ভর করছে।
কীভাবে কেন হয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ?
মানুষ যাতে ঘূর্ণিঝড়কে চিহ্নিত করতে পারে, সেই কারণে নামকরণের প্রথা চালু হয়েছে। এই নামের সাহায্যে সাধারণ মানুষ ছাড়াও, বিজ্ঞানীরা, মিডিয়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাজে যুক্ত ব্যক্তিরাও ঘূর্ণিঝড়কে চিহ্নিত করতে পারে। নামই বুঝিয়ে দেয়, এটা আলাদা ঘূর্ণিঝড়। এব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে, প্রস্তুতি নিতে, বিভ্রান্তি দূর করতে এই নাম কাজে লাগে।
ঘূর্ণিঝড় আসলে কোনও অঞ্চলের সাইক্লোনিক সিস্টেম। বিশ্বের সব জায়গাতেই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের একইভাবে নামকরণের রীতি চালু আছে। ২০০০ সালে ওমানের মাস্কাটে অনুষ্ঠিত হয়, পিটিসির ২৭তম অধিবেশন। পিটিসি বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করতে রাজি হয়। প্যানেলের প্রতিটি দেশ তাদের সুপারিশ পাঠানোর পর, পিটিসি তার তালিকা তৈরি করে। আর, ২০০৪ সালে এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে। পিটিসি ২০১৮ সালে, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইয়েমেনকেও তাদের সংগঠনভুক্ত করেছে।
২০২০ সালের এপ্রিলে, ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। সদস্য ১৩টি দেশের প্রত্যেক সদস্য ১৩টি করে পরামর্শ দিয়েছিল। সেই তালিকা থেকেই বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হচ্ছে। কোন দেশে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে, বা আছড়ে পড়বে নামকরণের ক্ষেত্রে তা বিবেচনা করা হয় না। বরং, দেশগুলোর পরপর নাম অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা হয়। যেমন, ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ-র নাম দিয়েছিল বাংলাদেশ। আছড়ে পড়েছিল মহারাষ্ট্রে। ভারত নাম দিয়েছিল গতি। আছড়ে পড়েছিল সোমালিয়াতে। ইরান নাম দিয়েছিল নিভার। আছড়ে পড়েছিল তামিলনাড়ুতে।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us