Dalits offer prayers at Gidheshwar Shiva temple in Katwa: অবশেষে প্রায় তিনশো বছর পর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ভাঙল অস্পৃশ্যতা ও জাত-পাতের বৈষম্যের বেড়াজাল। বুধবার প্রথম পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গীধেশ্বর শিব মন্দিরে প্রবেশাধিকার পেলেন স্থানীয় দাসপাড়ার দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন। ফুল, ফল, মিষ্টি, ধূপ-বাতি সহযোগে ডালা সাজিয়ে নিয়ে পাঁচ দলিত পরিবারের বধূ বুধবার গীধেশ্বর মন্দিরে ঢোকেন। পুরোহিত নাম-গোত্র দিয়ে তাঁদের পুজো দেবতা গীধেশ্বরের কাছে নিবেদন করেন। দীর্ঘদিনের মন বাসনা এদিন পূর্ণ হওয়ায় পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন গীধগ্রামের দাস পাড়ার দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন।
কাটোয়ার গীধগ্রামে রয়েছে সাড়ে তিনশো বছরের পুরানো একটি শিবমন্দির। এই শিব 'গীধেশ্বর' নামে পরিচিত। গ্রামবাসীদের আরাধ্য দেবতা গীধেশ্বরের সারাবছর নিত্যসেবা হয়। তবে শিবরাত্রি ও গাজন উৎসবে ব্যাপক ধুমধাম হয়। এহেন শিবের মন্দিরে ঢুকে পুজো দেওয়ার অধিকার লাভেরর জন্য কাটোয়ার মহকুমা শাসকের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন দাস পাড়ার দলিতরা। মঙ্গলবার মহকুমা শাসকের দফতরে হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সর্ব সন্মতিতে সেই আর্জি মঞ্জুর হয়। ঠিক হয় বুধবার সকালে গীধেশ্বর শিব মন্দিরে পুজো দিতে যাবেন দীর্ঘকাল পুজো দিতে না পারা দাস পাড়ার দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন।
দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজনের পুজো দেওয়া নিয়ে যাতে কোনও অশান্তির ঘটনা না ঘটে তাই এদিন সকাল থেকেই মন্দির চত্বরে পৌঁছে যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। কাটোয়ার মহকুমা শাসক অহিংসা জৈন, কাটোয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কাশিনাথ মিস্ত্রি এবং কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের বিডিও ইন্দ্রজিৎ মারিক এদিন মন্দির চত্ত্বরে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের উপস্থিতিতে দাস পাড়ার দলিত সম্প্রদারের পাঁচটি পরিবারের বধূরা এদিন মন্দিরে প্রবেশ করে পুজো দেন। মহকুমা শাসক নিজে গীধেশ্বর মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে দলিত পরিবারের বধূদের পূজো দেওয়া চাক্ষুষ করেন।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live:'খুন করা হতে পারে শুভেন্দু অধিকারীকে', মারাত্মক অভিযোগে তোলপাড় ফেললেন BJP-র শঙ্কর ঘোষ
গীধেশ্বর শিব মন্দিরে পুজো দিয়ে বাইরে বেরিয়ে দাস পাড়ার বধূ সান্তনা দাস বলেন, “আজ আমরা খুব খুশি। ভক্তি ভরে এদিন বাবা গীধেশ্বরের কাছে গিয়ে তাঁর পুজো দিয়েছি। এতদিন আমাদের মন্দিরে উঠতে দেওয়া হত না। বাবা গীধেশ্বরের দর্শনও পাইনি আমরা। পুলিশ, প্রশাসন এবং গ্রামের সবাই একমত হওয়াতেই এদিন আমরা গীধেশ্বর শিব মন্দিরে প্রবেশ করে পুজো দিতে পারলাম। আজ আমরা ভীষণ তৃপ্ত।" গ্রামের অপর বাসিন্দা সন্তোষ দাস বলেন, “প্রশাসন মানবিকভাবে আমাদের পাশে দাড়িয়েছে বলেই আজ আমাদের দাস পরিবারের বধূরা গীধেশ্বর শিব মন্দিরে পুজো দিতে পারলেন। এর জন্য আমরা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ থাকব।"
আরও পড়ুন- Robotic Surgery: বাংলার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা! সরকারি হাসপাতালে অপারশেন করবে রোবট
মহকুমা শাসক অহিংসা জৈন বলেন, "আমরা প্রশাসন ও পুলিশের তরফে গ্রামের বিবেকবান সকল মানুষজনকে অনেক বোঝাই । এমন বিভেদ বৈষম্য থাকাটা যে ঠিক নয়, সেই ব্যাপারে গ্রামের বিবেকবান মানুষজনও ঐক্যমতে পৌঁছোন। সবার প্রচেষ্টাতেই পুজো দেওয়া নিয়ে জটিলতার অবসান সম্ভব হয়েছে।"