বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে সিআইএসএফ বাহিনী মোতায়েনকে কেন্দ্র করে বড়সড় আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নিয়েছেন শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের একাংশ। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পরই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, বাম সমর্থিত এই সকল শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা একটি অনলাইন স্বাক্ষর অভিযান শুরু করারও পরিকল্পনা নিয়েছেন। তবে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, বিশ্বভারতীর ঐতিহাসিক স্থান এবং অন্যান্য স্থাপত্যের নিরাপত্তার স্বার্থে আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন নিয়ে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই।
আরও পড়ুন, রাজ্যজুড়ে জারি ‘লাল সতর্কতা’, শক্তি বৃদ্ধি বুলবুলের
এদিকে সোমবারই বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে আসার কথা রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের। তবে আন্দোলনের প্রভাব যেন অনুষ্ঠানের ওপর না পড়ে, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, এমনটাই জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, এতদিন ধরে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং সিআইএসএফ মোতায়েনের বিরুদ্ধে তৃণমূল সোচ্চার হলেও, হঠাৎই সুর বদল করেছে ঘাসফুল শিবির। তৃণমূল নেতা তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীসভার (নন-টিচিং স্টাফ ইউনিয়ন) নেতা গগন সরকার বলেছেন, তাঁরা কোনও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছেন না। কারণ হিসেবে তাঁর বক্তব্য, "উপাচার্যর দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে খুব স্পষ্ট। কোনও শিক্ষার্থী বা শিক্ষক তাঁদের চাকরি কিংবা আসনের ঝুঁকি নিতে রাজি নন।"
অন্যদিকে, বীরভূমের জেলা ছাত্র ফেডারেশন (এসএফআই -এর যুগ্ম সম্পাদক তথা বিশ্বভারতীর প্রথম বর্ষের স্নাতকোত্তর ছাত্র মইনুল হুসেন বলেন, "আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ফি-বৃদ্ধির সময়েও আমরা এইভাবেই লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে এই আন্দোলনকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব সে ব্যাপারে বামপন্থী সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করে বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।" তিনি আরও জানান, এই ইস্যুটির বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের পাশাপাশি অনলাইনেও স্বাক্ষর অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন, ‘বুলবুলে’র তাণ্ডব থেকে বাঁচবেন কীভাবে?
প্রসঙ্গত, চলতি শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদনের ফি বৃদ্ধি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব হন পড়ুয়া এবং অ-শিক্ষক কর্মচারীরা। ঘেরাও করে রাখা হয় উপাচার্যকে। অন্যান্য আধ্যাপকদেরও সেই সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীরা নিজেদের কর্তব্য পালন করেন নি বলে অভিযোগ। এমনকি, তাঁরা আন্দোলনকারীদের আন্দোলন করতেও ইন্ধন যুগিয়েছেন বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। সেই ঘটনার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুরক্ষার জন্য সিআইএসএফ নিরাপত্তা চেয়ে গত মাসে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে চিঠি লেখেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
বামপন্থী সংগঠনের সুর শোনা গেল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ সমিতির সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্যর কণ্ঠেও। তিনি বলেন, "আমরা সম্মিলিতভাবে এই আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এতদিন ভিসি বলে এসেছেন, আলোচনার কোনও বিকল্প নেই। তবে এই ইস্যুটি নিয়ে ভিসি কেন চুপ করে আছেন সেটাই প্রশ্নের।"
উল্লেখ্য, এই প্রথম কোনও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মোতায়েন করা হচ্ছে আধা সামরিক বাহিনী। জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে স্থায়ীভাবে বাহিনী মোতায়েনের জন্য সিআইএসএফ-কে চিঠি দিয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। গত কয়েক বছরে নানা কারণে উত্তাল হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের হাতে পত্তন করা, এবং তাঁর স্মৃতিধন্য বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।
Read the full story in English