Durga Puja 2024: পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফোরানোর অবস্থা! সারাটা বছর অভাব আঁকড়েই হয় দিন-গুজরান। তা নিয়ে আক্ষেপ করে বসে না থেকে একটু রোজগারের মুখ দেখতে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বাঘাসন গ্রামের মহিলারা কাঁধে তুলে নেন ঢাক। হাতে তুলে নেন ঢাক বাজানোর কাঠি। সময় গড়ানোর সাথে সাথে ঢাক বাজিয়ে হিসাবে তাঁরা সুনামও ছড়িয়েছে। দুর্গা মায়ের পুজোয় ঢাকের বাদ্যিতে পুজো মণ্ডপ মাতাতে এই মহিলা ঢাকিরা ইতিমধ্যেই রওনা দিয়েছেন বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে।
মন্তেশ্বর ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম বাঘাসন। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই কৃষিজীবী। বেঁচে থাকার রসদ জোগাড়ের জন্য এই গ্রামের ১২-১৩ জন মহিলা ঢাক কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এই মহিলারা সকলেই দিন দরিদ্র পরিবারের সদস্য। তাঁদের মধ্যে কারও স্বামী দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন, আবার কারও স্বামী শারীরিক অসুস্থতায় শয্যাশায়ী। স্বাভাবিক কারণেই এই সব মহিলাদের নিজেদেরকেই তাঁদের সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। রোজগারের তেমন কোনও সংস্থান না থাকায় সংসার সামলাতে তাঁদের হিমশিম খেতে হয়। এই অবস্থায় রোজগারের সন্মানজনক বিকল্প কোন পথ খুঁজে না পেয়ে তাঁরা ঢাক কাঁধে তুলে নিয়েছেন। দুর্গা মায়ের পুজোয় ঢাক বাজিয়ে যে উপার্জন হয় তা দিয়ে একটু হলেও সুখের দিন ফেরে।
বাঘাসনের মহিলা ঢাকি দলের সদস্য পূর্ণিমা দাস জানান, বছর পাঁচেক আগে তাঁরা ঢাক বাজিয়ে রোজগার করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের উদ্দেশ্যের কথা জেনে এলাকার দুই প্রাজ্ঞ ঢাকি পিন্টু দাস ও সুদেব দাস তাঁদের প্রশিক্ষণ দেন। ওদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েই তাঁরা ভালো ঢাক বাজানো রপ্ত করেন। এরপর গড়ে তোলেন ‘মা অন্নপূর্ণা’ নামে একটি মহিলা ঢাকিদল। পূর্ণিমাদেবী বলেন, "আমাদের ’মা অন্নপূর্ণা’ ঢাকির দলে যাঁরা রয়েছেন তারা সবাই দিন-দরিদ্র পরিবারেরই মহিলা। দলের সবাই ঢাক বাজিয়েই স্বনির্ভর হতে চাইছেন। তা দেখে আমাদের গ্রামের আরও অন্য কয়েকজন মহিলাও ঢাকি দল তৈরি করেছেন।"
’মা অন্নপূর্ণা’ ঢাকি দলের অপর দূই সদস্য নবানী দাস, রিঙ্কু দাসদের কথায়, "বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব দুর্গোৎসব। এই দুর্গোৎসব ছাড়াও কালী পুজো,সরস্বতী পুজো ও লক্ষ্মীপূজোতে আমরা ঢাক বাজাতে যাই। এছাড়াও ডাক পেলে অন্য পুজো পার্বণেও আমাদের ঢাকি দলের সদস্যরা ঢাক বাজাতে যান। বছরের বাকি দিনগুলিতে সংসারের অভাব মেটাতে মাঠে খেতমজুরের কাজ করি।"
নবানী দাসের কথায়, "আমাদের মহিলা ঢাকি দলের সদস্যরা এর আগে কলকাতা ও ব্যারাকপুর সহ ভিন জেলার আরও অনেক বড় বড় পুজোয় ঢাক বাজানোর ডাক পেয়েছেন। ওই সব বছরগুলোতে দূর্গা পুজোর চারটে দিন ঢাক বাজিয়ে ভালো উপার্জন হওয়ায় আমাদের মহিলা ঢাকি দলের সদস্যদের পরিবারের সকলের মূখে হাসি ফুটেছিল। মাঝে দুটো বছর করোনা অতিমারির কারণে বড় পূজা মন্ডপে ঢাক বাজানোর জন্য ডাক মেলেনি। ওই দুটো বছর পুজোর সময়টা খুবই বিষাদের মধ্যেই কাটাতে হয়েছিল। এই বছর দুর্গা মায়ের কৃপায় ভাগ্য সহায় হয়েছে।" পঞ্চমীর দিন থেকেই 'মা অন্নপূর্ণা' ঢাকি দলের সদস্যরা মণ্ডপে-মণ্ডপে রওনা দিয়েছেন।