এবারের নির্বাচনে আইএএস ও আইপিএসদের বদলি নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ করবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। বদলি হওয়া জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপারদের এক বছরের মধ্যে স্বপদে ফেরানো যাবে না। উচ্চপদেও আসীন করা যাবে না। নির্বাচনের সময় বা তারপরেও হিংসা রুখতেও কঠোর মনোভাবের কথা জানিয়ে দিল কমিশনা।
বিধানসভা ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বুধবার রাজ্যে আসে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। দুদিন ধরে রাজ্য নির্বাচন কমিশন, মুখ্যসচিব, সিপি, ডিএম, এসপিদের বৈঠক করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কমিশনের ফুল বেঞ্চ বৈঠক করে। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরা বলেন, গত লোকসভা নির্বাচনে দুই রাজ্যের আইএএস-সহ কয়েকজন এসপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল এবং তাঁদের অপসারণ করা হয়েছিল। এবার কমিশন আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে। নির্বাচনে যে সমস্ত সিপি, এসপি, ডিএম-সহ পুলিশ আধিকারিকদের সরানো হবে তাঁদের এক বছরের মধ্যে স্বপদে ফেরানো যাবে না। এমনকী কোনও পুরস্কৃত পদ দেওয়া যাবে না। যদি এধরনের কিছু ঘটে কমিশন তাহলে ব্যবস্থা নেবে। এব্যাপারে রাজ্য মুখ্য সচিবকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন ‘কলকাতা অশান্ত কেন?’ সিপি অনুজ শর্মাকে কড়া প্রশ্ন কমিশনের
সাধারণত দেখা যায় ভোটের মুখে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের নানা কারণে সরানো হয়। পরবর্তীতে ভোট মিটতেই পুনরায় তাঁদের আগের পদে বহাল করা হয়। এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে উচ্চ পদেও বসানো হয়। অন্যদিকে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা এবং করোনা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের রিপোর্টে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের কয়েকজন ভাল রিপোর্ট দিয়েছেন। করোনা নিয়ে রাজ্য প্রশাসন যে রিপোর্ট দিয়েছে তা সন্তোষজনক। এর পাশাপাশি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগকেও গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন। এদিন সিইও জানান, আইনশৃঙ্খলার উপর নজর রাখা হচ্ছে। এবার নির্বাচনে তিনজন পর্যবেক্ষক আসবে। একজন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন। আর একজন সাধারণ পর্যবেক্ষক। এছাড়া একজন ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বে থাকবেন। ভোটে মানিপাওয়ার ও কালো টাকা ব্যবহারের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখবে এক্সপেন্ডিচার পর্যবেক্ষক।
আরও পড়ুন ‘ভোটের কাজে সিভিক ভলান্টিয়ার-গ্রিন পুলিশ নয়’, ডিএম-এসপিদের নির্দেশ কমিশনের
এদিনও তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, সীমান্ত এলাকার গ্রামবাসীরা বিএসএফের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন। যা নিয়ে তৃণমূল নির্বাচন কমিশনেও নালিশ জানিয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কমিশন। এদিন সুনীল আরোরা বলেন, বিএসএফ দেশের সেরা নিরাপত্তা ফোর্স। সেখানে অনেক অভিজ্ঞ সেরা অফিসার রয়েছেন। বিএসএফের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক। বিএসএফের অফিসারদের তালিকা আমাদের কাছে আছে। বিএসএফ দেশের সীমান্ত নিরাপত্তার কাজ করে থাকে। কমিশনে বিএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযোগকারীদের কাছে নির্দিষ্ট করে একটি পোক্ত অভিযোগ জমা দিতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ জমা দিতে পারেনি।
আরও পড়ুন সীমান্তে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে BSF, কমিশনে নালিশ তৃণমূলের
এবারের নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে ভোটের সবরকম দায়িত্ব থেকে সিভিক ও গ্রিন পুলিশদের বাদ রাখা হবে। বুথের মধ্যে শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হতে পারে। সিইও বলেন, ভোটের দু'মাস কিংবা তিনমাস আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে না। এগুলো ভিত্তিহীন খবর। কেন্দ্রীয় বাহিনী নির্দিষ্ট সময়ে আসবে। ভোটের দিন ঘোষণার পরই মডেল কোড অব কন্ডাক্ট চালু হবে বলে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলেনি কমিশন। এপ্রিলেই ভোটপর্ব সম্পন্ন হয়ে যাবে, সিইও নিজের বক্তব্যে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৩ মে রাজ্য শাসকদলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হচ্ছে। তার আগে ভোট পর্ব সম্পন্ন করা হবে। করোনা বিধি মেনে রাজ্যে ২২ হাজার বুথ বাড়ছে। এবার মোট ১ লক্ষ ১ হাজার বুথ থাকবে। সব বুথ গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকবে। ৮০ ঊর্ধ্ব নাগরিকদের জন্য পোস্টাল ব্যালট থাকছে।