বর্ষা নামতেই 'জলাভূমির' রূপ নিয়ে নিয়েছে গোটা স্কুল। জল থই থই সেই স্কুলের ক্লাস রুমে দাঁড়িয়েই পড়ুয়াদের পড়াচ্ছেন শিক্ষকরা। আর জলে পা ডুবে থাকা অবস্থার মধ্যেই ক্লাস রুমের বেঞ্চে বসে শিক্ষকের পাঠ নিচ্ছে পড়ুয়ারা। এটা গল্পকথা নয়। এটাই পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের কলসা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এখনকার বাস্তব অবস্থা।
এভাবেই প্রায় এক দশক ধরে বর্ষার মরশুমে দিন কাটে স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে স্কুলের সকলেই প্রশাসনের মুখাপেক্ষী হয়ে রয়েছেন।
কলসা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সলে প্রতিষ্ঠিত হয়। চারটি শ্রেণীকক্ষের এই স্কুলটি কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের গীধগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যালয়। তাই বয়সের ছাপও ফুটে উঠেছে বিদ্যালয়ের কোনায় কোনায়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে পড়ুয়া সংখ্যা ৮১ জন। এই পড়ুয়াদের পড়ানোর জন্য জন্য রয়েছে তিনজন শিক্ষক। প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়াদের পড়ানোর জন্য বিদ্যালয়ে রয়েছে চারটি শ্রেণীকক্ষ। বছরের অন্যান্য সময়ে এই বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন সহ সবকিছু স্বাভাভিক থাকে। কিন্তু বর্ষা নামলেই দুর্ভোগ চরমে ওঠে এই বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের।
বৃষ্টি এখন লেগেই রয়েছে। তাতেই দুর্ভোগ চরমে উঠেছে কলসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের। সম্প্রতি এখানে পৌঁছে দেখা গিয়েছে গোটা স্কুল চত্বর জলে থই থই করছে। ক্লাস রুম গুলিতেও জমেছে জল। প্যান্ট গুটিয়ে নিয়ে সেই জলের মধ্যে দাঁড়িয়েই পড়ুয়াদের পড়াচ্ছেন শিক্ষক। আর সেই শ্রেণীকক্ষে ভরে থাকা জলে পা ডুবে থাকা অবস্থায় বেঞ্চে বসে শিক্ষকদের দেওয়া পাঠ গ্রহণ করছে পড়ুয়ারা।
আরও পড়ুন- Sonarpur College: কলেজে বসে সিগারেটে 'সুখটান' তৃণমূলের 'তাজা নেতা'র, মাথা টিপছেন ছাত্রী, ভিডিও ভাইরাল
এই প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামবরন দাস বলেন, “প্রায় এক দশক ধরে এমন জল-যন্ত্রণা আমাদের ভোগ করে যেতে হচ্ছে। বর্ষা নামলেই আমাদের বিদ্যালয় একেবারে বানভাসি হয়ে যায়। ক্লাস রুম থেকে শুরু করে স্কুল প্রাঙ্গণ, সবই ভরে যায় জলে। এবছরও একই অবস্থা। বর্ষা নামতেই গোটা স্কুল বানভাসি হওয়ার জোগাড়।" এই জল যন্ত্রণার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনেছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে প্রধান শিক্ষক বলেন, "বহুবার প্রশাসন ও স্কুল দফতরকে জানানো হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আশ্বাস অনেক মিলেছে। তবে দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনও ব্যবস্থা এখনও অবধি করা যায়নি।"
আরও পড়ুন- West Bengal News live updates: 'আদি-নব্যদের নিয়েই চলতে হবে', বার্তা দিলীপের, বিকেলেই শমীকের সঙ্গে সাক্ষাৎ
বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষক রতন মল্লিক বলেন, "বর্ষা আসলেই আমাদের স্কুল কার্যত জলাভূমির রূপ নেয়। ক্লাস রুম থেকে শুরু করে স্কুলের বারান্দা, সর্বত্র এখন থই থই করছে। প্যান্ট গুটিয়ে নিয়ে জল থই থই ক্লাস রুমে দাড়িয়ে পড়াতে হচ্ছে।
ক্লাসে একই রকম জল যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। বছরের পর বছর ধরে বর্ষায় এমন দুর্ভোগ সহ্য করেই যেতে হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনও সুরাহা মেলেনি।" এলাকার বাসিন্দা স্বপন সাঁতরা সহ অনেকে জানান, বর্ষা সবে শুরু হয়েছে, তাতেই গোটা স্কুল এখন কার্যত বানভাসি। প্রতি বছর বর্ষায় স্কুলে জল জমে। স্কুলের ক্লাস রুমও এখন জলমগ্ন। পুরনো এই স্কুলবাড়ি ভেঙে নতুন করে উঁচু বাড়ি তৈরি না করলে সমস্যা মিটবে না।
আরও পড়ুন- Jyoti Basu: জন্মদিনে ফিরে দেখা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বর্ণময় রাজনৈতিক জীবন...
কলসা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই দূরাবস্থা মেনে নিয়েছেন কাটোয়া ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির নারী, শিশু ও জনকল্যাণ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ তৃষা চট্টোপাধ্যায়। তিনি খুদে পড়ুয়াদের জল যন্ত্রণা ভোগ করার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, "খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হবে।" জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন, “ছবি সহ স্কুলটির বর্তমান সমস্যার বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিস্তারিতভাবে লিখে আমাকে পাঠাক। আমি সেটা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠাব। আশা করি তাতে দ্রুত সমস্যার সামাধান হবে।"